আরো পড়ুন
সৈয়দ আককাস উদদীন
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে সাতকানিয়ায় ৭৩ ইটভাটার ২৭টি বৈধ ও ৪৬টি অবৈধ। এবং লোহাগাড়ায় ৪৯ ইটভাটার ৪টি বৈধ ও ৪৫টি অবৈধ।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা। আর এসব অবৈধ ইটভাটায় আইন লঙ্ঘন করে অবাধে ইট পোড়ানো হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন ইটভাটার চিমনির কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ অপরদিকে সুযোগ পেয়ে বিভিন্ন কৃষিজমি, লোকালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে উঠছে এসব অবৈধ ইটভাটা।
এদিকে উচ্চ আদালত এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিলেও গত এক বছরে নাম মাত্র কয়েকটি অভিযান ছাড়া তেমন দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। ফলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রহীন এসব অবৈধ ইটভাটায় দ্বিগুণ উৎসাহে ইট পোড়াচ্ছেন মালিকেরা।
সম্প্রতি সরেজমিনে সাতকানিয়া লোহাগাড়ার কয়েকটি ইটভাটা পরিদর্শন করে দেখা যায়, কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যদিকে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পুড়িয়ে ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে বনায়ন ধ্বংস করে কাঠ বানিয়ে তা ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে সার্বিকভাবে পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অবৈধ ইটভাটার মালিক জানান, বৈধভাবে ইট প্রস্তুত করতে চাই। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের অনুমোদন নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয়। তাই অনৈতিক পথে এই ব্যবসা করতে হচ্ছে।
কয়েকজন অবৈধ ইটভাটার মালিক বলেন, আমরা ব্যবসা করছি সে তালিকা কিন্তু প্রশাসনের কাছে আছে। কিন্তু আমাদের অনুমোদন দিতে নানা হয়রানি করা হয়। ফলে আমাদের বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করে ক্ষতি থেকে বাঁচতে ভিন্নপথে এই ব্যবসা পরিচালনা করতে হচ্ছে। আমরা নিয়মিত মালিক সমিতি, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ইটভাটা পরিচালনা করছি। এছাড়া অন্যকোন পন্থা নেই।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের তথ্য মতে, সাতকানিয়া উপজেলায় ইটভাটা রয়েছে ৭৩টি। এর মধ্যে বৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা করছেন ২৭টি। বাকি ৪৬টি ইটভাটা ইট পোড়ানোর কার্যক্রম পরিচালনা করছেন অবৈধভাবে।
অপরদিকে পার্শ্ববর্তী লোহাগাড়া উপজেলায় ইটভাটা রয়েছে ৪৯টি। যার মধ্যে কেবল ৪টি ব্যথিত ৪৫টি ইটভাটাই ব্যবসা পরিচালনা করছে অবৈধভাবে।
অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় মালিক সমিতির পৃষ্ঠপোষকতা ও পরিবেশ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসনকে মাসোহারা দেওয়ার মাধ্যমেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে এসব অবৈধ ইটভাটা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও ইটভাটা মালিক সমিতির নেতারা।
এ বিষয়ে সাতকানিয়া ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি নেজাম উদ্দীন বলেন, অবৈধ ইটভাটার পক্ষে মালিক সমিতির কোন ভূমিকা ইতিপূর্বেও ছিলনা বর্তমানেও নেই। বরং বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানে আমরা সহযোগীতা করেছি। এক কথায় আমরা কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রশাসন যে সময় যে ব্যবস্থা নিবে আমরা সহযোগীতা করব।
অপরদিকে লোহাগাড়া ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সারওয়ার আলম বলেন, ৫টি বৈধ ও বাকি ৪৫টি ইটভাটা অবৈধ’র বিষয়টি সত্য। কিন্তু লোহাগাড়ায় ৩০ থেকে ৩৫টি ইটভাটার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বাকিগুলো বন্ধ আছে। যেসব চলমান আছে প্রত্যেকটি শুধু পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া বাকি সব কাগজ পত্র সঠিক আছে। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর অনুমোদন না দেওয়াতে বিভিন্নজন উচ্চ আদালতে রিট করে কর্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে মালিক সমিতি কখনো অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনায় পৃষ্ঠপোষকতা করেনি।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩–এর ৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, কৃষিজমি, পাহাড় ও টিলার মাটি কেটে ইট তৈরি করা যাবে না। ওই আইনের ৬ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করে ইট পোড়ানো যাবে না। এ ছাড়া এই আইনের ৮ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষিজমি, পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ইটের ভাটা স্থাপন করা যাবে না। অথচ এই আইন লঙ্ঘন করে ফসলি জমি ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নির্বিঘ্নে ইটভাটা স্থাপন করা হচ্ছে। যা আইন পরিপন্থী হওয়া সত্বেও পরিবেশ অধিদপ্তর কেন অভিযান পরিচালনা করছেনা?
এমন প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপ পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, অবৈধ ইটভাটায় জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে। ইতিপূর্বে আমরা বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান পরিচালাা করেছি। ভবিষ্যতে অভিযান পরিচালনার বিষয়ে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের চিটি দিয়েছি। যেকোন সময় অভিযান পরিচালনা করা হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর কোন প্রকার অবৈধ লেনদেন করেনা। কেউ বলে থাকলে সেটা অযাচিত কথা বলেছে। কারো কাছে প্রমান থাকলে দাখিল করতে বলেন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। ইতিপূর্বে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। বর্তমানেও অভিযান চলমান আছে এবং অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চলমান থাকবে।
এদিকে সাতকানিয়ার এওচিয়ার চূড়ামনি ছনখোলায় অবৈধ ইটভাটার ভীড়ে একটি মাত্র বৈধ ইটভাটা হলেও তার সরবরাহকারি মাটিগুলি পাহাড় থেকে সংগ্রহ করা।
অর্থাৎ মানা হচ্ছেনা কোন নিয়ম।