সাতকানিয়া হাসপাতাল-ঘুষ ছাড়া চলেনা মঈনুলের সাক্ষর, ভিজিটে গেলে দিতেই হয় নাস্তারও বিল

সাতকানিয়া পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়

 

সৈয়দ আককাস উদদীন 

দীর্ঘ এক বছর ধরে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করে আসছেন মঈনুল ইসলাম।

দায়িত্ব তার উপজেলার ১৭টি ইউনিটের পরিবার পরিকল্পনা মাঠসহকারীদের মনিটরিংসহ ওষুধ মজুদ যাচাইকরণ, এবং বেতনভাতার সইসাক্ষর, কর্মচারীদের ছুটির বিষয়সহ ডিপার্টমেন্টের উপজেলা পর্যায়ের সবকিছুই হচ্ছে দেখভাল করার দায়িত্ব তার।

 

 

এবং প্রতি মাসে অন্তত ১০/১২বার তিনি পুরো উপজেলার সব ইউনিট পরিদর্শনে যান বলে নিশ্চিত করেন সাতকানিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়।

 

কিন্তু সাতকানিয়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে তিনি প্রতিমাসে যতবার মনিটরিং এ যাবেন ততবারই তার ভাগ্যের চাকা খুলে যায় বলে নিশ্চিত করেন সাতকানিয়ার আওতাধীন ১৭টি ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনার একাধিক মাঠ সহকারীরা।

 

কি ভাবে প্রতিমাসে তার ভাগ্যের চাকা খুলে যায়! এমন প্রশ্নের অনুসন্ধানে নামে প্রতিবেদক, এবার কথা হয় উপজেলার অন্তত ১২জন মাঠ সহকারীর সাথে, তারা বলেন-মঈন সাহেব যখনি মাঠ ভিজিটে আসবেন তখনি কোন না কোন অযুহাতে হাত খরচ হিসাবে ৩/৪হাজার টাকা করে দাবী করেন।

 

প্রতিমাসে প্রতিটা ইউনিয়ন থেকে অর্থাৎ এক মাসে ভিজিট খাত থেকেই মঈনুলের ইনকাম প্রায় ৪০,০০০টাকা- অপরদিকে কেউ নিয়মিত ওই টাকা প্রদান করতে অনীহা প্রকাশ করলে তিনি মাঠ সহকারীদের ব্যবহৃত রেজিষ্টার উপজেলা কার্যালয়ে এনে গড়মিলের অভিযোগ টেনে জব্দ করেন, পরে আবার টাকা নিয়ে ২/৩দিন পর উক্ত রেজিষ্টার দিয়ে দেয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে মঈনুলের বিরুদ্ধে।

গেল একটা খাত মাত্র! এবার আসা যাক সদ্য ওষুধ মজুদ যাচাকরণ কাজে তিনি একাধিক ইউনিয়ন টীম থেকে গড়ঁমিলের অভিযোগে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা।

তবে যারা তার কৌশলে মাসোহারা  পরিশোধ করেননি সেই টাকা  আদায়ের জন্য  অনেক মাঠকর্মীদের খেতে হয়েছে মঈনুল নামা(শোকজ), পরে সেই শোকজ নোটিশের কার্যক্রম আর আগায়নি টাকা আদায়ের পর।

 

 

ওষুধ মজুদ যাচাইকরণে শোকজ করার কথা  প্রতিবেদকের কাছে সরাসরি  স্বীকার করেন মঈনুল, তবে শোকজের পরবর্তী রেজাল্টটা তিনি প্রতিবেদককে দেখাতে না পারলেও ওনার জেলা অফিসে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান, এবং শোকজ করার কারণ হিসেবে তিনি সংশ্লিষ্ট ইউনিটের অদক্ষতার কথা হিসেবে ব্যাখা প্রদান করেন,সেই সাথে শোকজের সাথে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও তিনি জানান।

অপরদিকে -ছুটি মন্জুরের ক্ষেত্রেও রয়েছে গুরুতর অভিযোগ,  সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের এক কর্মীকে ১৫দিনের ছুটি প্রদান করেন মঈনুল ২০,০০০টাকার বিনিময়ে, কারণ ওই কর্মী একটি আত্বহত্যা প্ররোচনা মামলার এজাহারনামীয় আসামী, সেই কঠিন সময়ের সুযোগে যাতে জামিন নিতে পারেন সেজন্য মঈনুল ওই মহিলা কর্মী থেকে ২০,০০০টাকা খেয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন স্বয়ং একই উপজেলার  মঈনুলের অধীনে থাকা একাধিক  মাঠকর্মীরা।

 

 

শুধু তাই নয়, কর্মচারীরা বিভিন্ন প্রয়োজনে সোনালী ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার জন্য মঈনুল থেকে নিতে হয় প্রত্যায়ন পত্র, আর এই প্রত্যায়ন পত্র নিতে হলে মর্জিনা বেগম আর আশকর আলীর মাধ্যমে মঈনুলের পকেটে যায় ৩/৪হাজার টাকা।
নয়তে  মিলেনা প্রত্যয়ন আটকে যায় লোন নেয়ার সেই ছাড়পত্র।

 

 

শুধু তাই নয় সদ্য ওষুধ মজুদ যাচাইকরণের দায়িত্বে মঈনুল মাঠকর্মীদের থেকে আদায় করেছেন নাস্তার বিলসহ গাড়ীভাড়াও।

 

 

অপরদিকে উপজেলার মাদার্শা এবং এওচিয়ার সমীরণ চক্রবর্তীসহ মোট ৩জনের পেনশন প্রসেসিং এর কাজের জন্য হাতিয়ে নেয়া হয়েছে উপজেলা কার্যালয়ের হিসাবের  দায়িত্বে থাকা মর্জিনা বেগম ও সহকারি আশকর আলীর মাধ্যমে প্রতিজন থেকে ৫০, ০০০টাকা করে।

মর্জিনা পেনশনভোগীদের বলেন-শহরে গিয়ে কাজ করতে হবে নয়তো আপনারা নিজেরাই করেন আমরা পারবনা।

মঈনুলের অনিয়মের স্বর্গের সিড়িঁর ধাপ শুধু এখানেই শেষ নয় -রয়েছে নির্দিষ্ট বলয় এবং কথায় কথায় ভয় দেখায় চট্টগ্রাম জেলা উপপরিচালক আবুল কালামের, আর সেই আবুল কালামের কথা বলেই গেল রমজানে আদায় করেছেন উপজেলার কান্চনা ইউনিয়নের এক মহিলা কর্মী থেকে টাকা এবং এওচিয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত এক মহিলা কর্মী থেকেও।

 

অন্যদিকে দেখা যায়-তার এসব অপকর্মের মূলহোতা পরিবার পরিকল্পনা সহকারী মর্জিনা বেগম এবং তার স্বামী পুরানগড় ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক আনিসুর রহমান।

জনশ্রুতি রয়েছে- আনিসুর রহমানের চাকুরী পুরানগড় ইউনিয়নের হলেও অদৃশ্য মদদতে তাকে নিয়মিত দেখা যায় উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাথে।

 

 

এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা মঈনুল বলেন-প্রতিদিন না তবে প্রায় সময় আসেন কাজে।

 

অপরদিকে৷ আনিসুর রহমানের সাথে নিয়মিত আড্ডাসহ ঘুরাফেরা করার একাধিক তথ্য হাতে আসে এই প্রতিবেদকের।

 

 

পেনশনের বিষয়ে কোন টাকা আদায় করা হয়েছে কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে দৃঢ় কন্ঠে  কর্মকর্তা  মঈনুল বলেন এসব হচ্ছে সবই সাজানো আর সবই পাতাঁনো।

 

এমন অভিযোগগুলি নিয়ে প্রতিবেদকের একেরপর এক প্রশ্নের জবাবে সাতকানিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মঈনুল ইসলাম এক পর্যায়ে ধমকের সুরে জেলা অফিসে জানাবে বলে হুমকিও প্রদর্শন করেন, পরে প্রতিবেদক বলেন আমি আপনাকে প্রশ্ন করছিনা প্রশ্ন করা হচ্ছে সাতকানিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা চেয়ারকেই, তখন তিনি অবশ্যই নরমসূরে একের পর এক যুক্তি খন্ডাতেই থাকেন নিজস্ব গতিতে যা প্রতিবেদকের গোপন ক্যামেরায় ধারন করা আছে।

 

 

অপরদিকে সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের ওই মহিলা কর্মীকে মামলা থেকে বাঁচার জন্য ১৫দিনের ছুটি মন্জুরের বিষয়ে অকপটে স্বীকার করলেও ২০,০০০টাকা নেননি বলে স্বীকার করে তিনি বলেন -তার ছুটি আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েই দেয়া হয়েছিল।

 

চলমান-০১

 

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.