স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা সাতকানিয়ায় মানবিক বিপর্যয়
বিদ্যুৎ নেই, মোমবাতি ও জ্বালানি তেল, পানি ও খাবার সংকট
সাতকানিয়া প্রতিনিধি
সাতকানিয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। গ্রামের পর গ্রাম-সবই পানিতে একাকার। বন্যার পানি উঠেছে হাসপাতাল, কলেজ, বাসাবাড়ি, আড়ত, দোকানপাটে। তলিয়ে গেছে উপজেলার সব সড়ক।
এমনকি আশ্রয়কেন্দ্রেও পানি প্রবেশ করেছে। নানা জায়গায় সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দুইদিন ধরে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে পুরো উপজেলা। হাসপাতালগুলোর জেনারেটর রুমে পানি ঢুকে পড়ায় বন্ধ রয়েছে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কার্যক্রম।
এমন এমন জায়গায় পানি উঠেছে, যেখানে কোনোদিনই কখনো পানি উঠেনি। উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি। অনেকের ঘরে খাবার নেই। বিশুদ্ধ পানি নেই। পুরো উপজেলার সব এলাকা ডুবে আছে দুইদিন ধরে।
বিদ্যুৎ না থাকায় সন্ধ্যা নামতেই গোটা অঞ্চলে ভূতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়। নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ। মোমবাতি আর জ্বালানি তেলের সংকটে অনেক বাসায় জ্বলেনি আলোও।
নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে আর্তনাদ করছেন মানুষ। অনেকে পানি-স্রোত ভেঙে ছুটছেন। সবচেয়ে বিপদে আছে শিশু ও বয়স্করা। পানিবন্দি মানুষের উদ্ধারে কাজ করছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মাঠে রয়েছে।
সাতকানিয়ার সব সড়ক ডুবে যাওয়ায় পুরো উপজেলা এখন কার্যত বিচ্ছিন্ন। সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেই পানিবন্দি হয়ে পড়ায় গত মঙ্গলবার সকাল থেকে তিনি কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন। সেই থেকে তাঁর সাথে কারো মুঠোফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে কেরানীহাট-বান্দরবান সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় দুই দিন ধরে সারাদেশের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবান। এছাড়া কেরানীহাটে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হাঁটু পরিমাণ পানিতে তলিয়ে আছে।
দ্রুত সময়ে পাহাড়ী ঢলে সাতকানিয়ার জনপদ পানিতে তলিয়ে যাবার অন্যতম কারণ হিসাবে সাতকানিয়ার বুক চিরে যাওয়া কক্সবাজার রেললাইনে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকাকে প্রধান কারণ বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন।
সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওচমান আলী জানান, টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলে সোমবার সকাল থেকে পানি বাড়তে থাকে। বিকেলের দিকে ইউনিয়নের গ্রামগুলো তলিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর পর পানি বাড়তে থাকে অস্বাভাবিকভাবে। রাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের কেরানীহাট বাজার এবং বান্দরবান সড়ক উপচে পানি ঢুকে যায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। দ্রুত পানি বেড়ে যাওয়ায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ডুবে যায় বিদ্যুতের সাবস্টেশন। টানা বিদ্যুৎ না থাকায় অধিকাংশ মানুষের মুঠোফোন বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিবেশীর পাকা বাড়িতে অবস্থান নিয়েছে অনেক লোকজন। পানি বেড়ে যাওয়ায় স্বজনরা যোগাযোগ করতে পারছেনা পানিবন্দি মানুষের সাথে। পানির প্রবল স্রোতের কারণে নৌকা যেন সোনার হারিণ।সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের।