সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এতিমখানার সাথে লাগোয়া এক মুসল্লীর ‘একটি সেন্ডেল’ চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এতিমখানার ছাত্র ও শিক্ষকসহ ৪ জনকে এলোপাতাড়ি মারধরের অভিযোগ ওঠেছে। আহতরা হলেন, ছাত্র মো.ইকবাল (১২), তার ছোট ভাই মো.ইশমাম (৮), শিক্ষক জাফর আহমদ (৩৩) ও সালাহউদ্দীন (২৫)। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের গাটিয়াডেঙ্গা দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন এতিম খানার ভেতর স্থানীয় চিহ্নিত কিছু যুবক এ ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনায় শিক্ষক সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে বুধবার রাতে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে ঘটনাটি প্রকাশ হয় বৃহস্পতিবার বিকালে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সাতকানিয়া থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ থেকে জানা যায়, স্থানীয় নুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি এতিম খানার সাথে লাগোয়া মসজিদের নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। তবে মসজিদে ঢুকা মাত্র কে বা কারা ওই মুসল্লীর জোড়া সেন্ডেল থেকে ‘একটি সেন্ডেল’ নিয়ে যায়। এভাবে একমাসে ৪-৫ বারের মত এরকম ঘটনা ঘটেছে। নুরুল ইসলাম তার সেন্ডেল চুরির বিষয়ে বার বার ক্ষিপ্ত হয়ে এতিম খানার ছোট ছোট শিশুদের বিভিন্ন ভাবে দায়ী ও গালিগালজ করে মানসিকভাবে চাপ দিয়ে আসছেন। ওই মুসল্লীর এহেন কর্মকাণ্ডে কোমলমতি শিশুরা হাসাহাসি করলে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি ছাত্রদের দিকে তেঁড়ে যান এবং কয়েকজনকে মারধরও করেন।
এরকম একজন শিশুর প্রতি নুরুল ইসলাম সন্দেহ পোষণ করেন শিশুটির নাম হলো ইকবাল (১২)সে এতিম খানার ছাত্র নিজ বাড়ি বাঁশখালী উপজেলায়, নিতান্ত গরীব আর এতিম হওয়ার কারণে তারা দুই ভাই পড়ে একই এতিম খানায়।
এক পর্যায়ে নুরুল ইসলামের সেন্ডেল প্রতিবার কেন চুরি হয়?এমন প্রশ্ন নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নুরুল ইসলামের ছেলে তোহা অন্তত ৭/৮জন নিয়ে এতিম খানায় প্রবেশ করে পিতার দেখানো শিশু ইকবালকে বেদড়ক টর্চার করলে ইকবালের আরেক সহোদর শিশু ইসমাম আর মাদ্রাসার হুজুর সালাহ উদদীন এগিয়ে আসলে তাদের উপরও বেদঁড়ক পিটুনি দেয় স্থানীয় তোহা ও তার দলবল।
এদিকে( ৩১শে আগষ্ট) বৃহস্পতিবার দুপুরে এতিমখানায় সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে মারধরের শিকার হওয়া দুই সহোদর এতিমের জন্য আর মাদ্রাসার শিক্ষকের মারখাওয়ার স্মৃতিচারণ করে স্থানীয়রা কান্নাকাটিতে ভেঙ্গে পড়েন।
এতিম দুই সহোদর শিশুকে মারধরের ঘটনা খুলে বলতে গিয়ে স্থানীয় এক মুরব্বী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শর্তে বলেন,অভাগা পরিবারে জন্ম নেয়ার কারণে বাঁশখালী থেকে শিশু দুটিকে পড়তে দেয়া হয় আমাদের সাতকানিয়ার এওচিয়ার এই এতিমখানায়।
অথচ!মিথ্যা অপবাদে মাত্র একটি সেন্ডেল চুরির সন্দেহে এই এলাকার চিহ্নিত বখাটে তোহারা মিলে ছেলে শিশু দুনোটার উপর আর হুজুরের উপর যে ভাবে বেপরোয়া মারধর করেছেন তার নিন্দা জানাতে আমরা ভাষা হারিয়ে ফেলছি।
তিনি আরো বলেন, যে ছেলে শিশু দুটিকে মারছে তারা(তোহা) তার গার্ডিয়ানও তো নেই কেউ তার প্রতিবাদ করার জন্য, মাদ্রাসা কমিটি কোন কিছু করলে সেটা হবে আর কি।
এদিকে সরেজমিনে গেলে আরো দেখা যায়,ওই এলাকার আবাল বৃদ্ধা বণিতা মুখে কাপড়গুঁজে ছেলে শিশু দুনোটার মারধরের বিষয়ে বলতেই মাদ্রাসার আশপাশের আকাশ যেন ভারী হয়ে আসছে।
মাত্র একজোঁড়া সেন্ডেলের একটি মাত্র সেন্ডেল চুরি কিংবা খোয়া যাওয়ার অপরাধে এতিম দুই শিশু আর মাদ্রাসা শিক্ষকের উপর বখাটে-দলের এমন আক্রমনাত্মক আচরণ যেন প্রাচীনকালের বর্বরতাকেও হার মানায়।
ভুক্তভোগী এতিম ছাত্র ইকবাল প্রতিবেদককে বলেন,আমাকে মারছে এটা সবাই দেখছে আমি কি আর বলব! আব্বু থাকলে আব্বুকে বলতাম আর কি, আর আমি একজোঁড়া সেন্ডেলের একটি মাত্র সেন্ডেল চুরি করেও কি করব?
ওটা তো আমার পায়ে হবেনা ওনি(নুরুল ইসলাম- তোহার পিতা) তো বয়স্ক লোক।
তারপরেও অদৃশ্য কারণে মার খেতে হলো আমাকে আর আমার ছোট ভাইকে।
এই এলাকা তো আমাদের না আর আমাদের গার্ডিয়ানও নেই তাই আমরা বিচার চেয়েও কি হবে!?
এই কথাগুলো বলার সময় তার চোখে ছলছল করছিল বেদনাবিধুর অশ্রুঁপাত।
কতটুকু অসহায়ত্বের বীজ তার বুকে দানাবাঁধলেই এতটুকুন ছেলে শিশুর মনোভাব এমন হয় তার ভাষা হয়তো বাংলা অভিধানে খুঁজেও পাওয়া যাবেনা।
তার অসহায়ত্বটার কিছু হয়তো বলে হাল্কা হয়তো পিতামাতাকে কিন্তু ভাগ্য বড়ই নির্মম তারা তো এতিমখানারই বাসিন্দা।
এদিকে এতিমখানার ঘটনার বিষয়ে সাতকানিয়া থানার এসআই মো:ছালামত বলেন,আমি আজকে (বৃহস্পতিবার) অভিযোগখানা পেয়েছি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব, যেহেতু এতিমখানার এতিম ছাত্রও শিক্ষকের উপর বখাটেরা হামলা করেছে।
এদিকে এতিমখানার সভাপতি হাজি দেলোয়ার হোসেন বলেন, এটা আমিও শুনছি বিষয়টা যেই করবে করুক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হোক।
এতিমখানার ছাত্রদের উপর আঘাত এবং শিক্ষকদের উপর হামলা তা মোটেও মেনে নেয়া যায় না।
এওচিয়ার চেয়ারম্যান আবু ছালেহ বলেন, চিহ্নিত বখাটেরা মাদ্রাসার এতিমখানায় ঢুকে এতিম শিশুদের উপর যেভাবে হামলা করেছে তা মোটেও উচিত হয়নি,আমি প্রশাসনকে অনুরোধ জানাব এটা আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য।
উল্লেখ্য -তোহার বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় বেশ কয়েকটি জিআর মামলা আছে তৎমধ্যে সে ওই মামলাগুলোর কারণে জেল খেটে গত ১৫দিন আগে জামিনে বের হয়ে এতিমখানা কান্ডপ জড়িত হয়।