সাতকানিয়া প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় পূর্ব বিরোধের জেরে আহত হয়েছেন ৯জন, আশংকাজনক ভাবে চমেক এ প্রেরণ করা হয়েছে ৪জনকে।
বৃহস্পতিবার (১২ই অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার সাতকানিয়ার এওচিয়ার ৫নং ওয়ার্ডের শান্তিরটেক ষ্টেশনে এই ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনায় আহতরা এক পক্ষের হলেন রফিকুল কাদের চৌধুরী, তাসিব চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী, এবং অন্য পক্ষের আহতরা হলেন করিম কন্ট্রাক্টর, মোতাহের মিয়া,খোর্শেদ আলম,সাকিবুল ইসলাম নিবিল,ফারুক।
উভয় পক্ষের বাড়ি একই এলাকায়।
এদিকে ওই রক্তপাত থামাতে গিয়ে আহত হন উভয়ের প্রতিবেশী প্রবাসী সাহাবুদদীন।

প্রত্যক্ষদর্শীও স্থানীয়সূত্রে এবং আহতদের বরাতে জানাযায়,মাস কয়েক আগে কাঞ্চনার ফুলতলা এলাকার একটি জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মোতাহের মিয়ার ছেলে মো:আরিফদের সাথে রফিকুল কাদেরদের ঝামেলা হয়।

উক্ত ঝামেলা রক্তপাতে রূপ নিলে সাতকানিয়া থানা কর্তৃপক্ষ রফিকুল কাদেরকে বাদী করে মোতাহের মিয়ার ছেলে মো:আরিফ(৩২)কে ১নং আসামী করে একটি মামলা রেকর্ড করেন।
পরে আরিফদের পক্ষের একজন সাকিবুল ইসলাম নিবিল ওই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করতে গেলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করলে প্রায় এক মাস জেল খেটে বের হলে তার ভেতর একটা চাপা ক্ষোভ বিরাজ করে।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই হাজতবাস করা সাকিবুল ইসলাম নিবিল মোটর বাইক নিয়ে শান্তিরটেকে যাওয়ার পথে রফিকুল কাদেরের ৯বছরের মাদ্রাসা পড়ুয়া ছেলেকেসহ তাসিবকে মোটর বাইক চাপা দেয়ার মত ভয় লাগালেই এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে।

এদিকে ভয়ংকর রক্তপাতের ঘটনায় স্থানীয়রা উভয় পক্ষকে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন বলে নিশ্চিত করেন।

এদিকে উত্তপ্ত শান্তিরটেক ষ্টেশনের ঘটনাস্থলে অন্তত ২০সদস্যের পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়।
ঘটনার স্পট থেকে রফিকুল কাদেরসহ তার আপন ভাতিজাকে পুলিশ গ্রেফতার করেন।
অপরদিকে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত ডাক্তার সাজ্জাদুল আলম বলেন,উভয় পক্ষের মোট ৯জনকে আমরা চিকিৎসা দিলেও ২জনকে চমেক এ প্রেরণ করেছি যেহেতু তাদের মাথায় আঘাত,পরে দুজনের মধ্যে কার বেশী আশংকাজনক প্রশ্ন করা হলে ডাক্তার সাজ্জাদুল আলম বলেন,আপনারা তো দেখতেই পাচ্ছেন সাহাবুদদীন খুব আশংকায় আছেন, কারণ ইতিমধ্যে তার হুঁশই নেই পরে চিকিৎসা শেষে হুঁশ আসছে অবশ্যই।

তিনি আরো বলেন,পুলিশের হেফাজতে থাকা রফিকুল কাদেরের বুকের হাঁড় ঠিক আছে কী না তা এক্স-রে এর মাধ্যমে জানা যাবে।

এদিকে রফিকুল কাদেরকে সাতকানিয়া থানার এএসআই ইসমাঈলের মাধ্যমে থানা হাজত থেকে বের করে সাতকানিয়া আলফা হাসপাতালে এক্সরে করালে তার বুকের হাঁড় ভেঙে গেল বলে নিশ্চিত করেন আলফা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
পরে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে তাকেও চমেক এ পাঠানো হয়।

অপরদিকে আরিফের কাছে চাকুরীরত সাতকানিয়া পৌরসভার ভোয়ালিয়া পাড়ার বাসিন্দা নিবিলের মাথায় গুরুতর আঘাতের বিষয়টিও প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন ডাক্তার সাজ্জাদুল আলম, তবে সাহাব উদদীন বেশী আক্রান্ত বাকিসব আশংকামুক্ত।
প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা গেছে- আরিফের চাচা মোর্শেদকেও চমেক এ নেয়া হয়েছে তার মাথাও হাতে আঘাত লেগেছে। আরিফের পিতা মোতাহের মিয়াও মুখে আঘাত পেয়েছেন তবে তারা আশংকামুক্ত।
এদিকে ঘটনার বিষয়ে সাতকানিয়া থানার ওসি ইয়াসির আরাফাত বলেন,ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে পরিস্থিতি শান্ত এবং ঘটনাস্থলে পুলিশ যে দুজনকে পেলো তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তবে উভয়পক্ষের ঘটনায় অবশ্যই মামলা হবে, পাশাপাশি গ্রেফতারকৃত রফিকুল কাদেরের আঘাতের বিষয়টাও দেখা হবে।
তিনি আরো বলেন -উভয় পক্ষই নজরদারিতে আছে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা,সেটা অপরাধী যেই হবে হোক না কেন।

এদিকে আহত প্রবাসী সাহাবুদদীন সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিবেদককে জানান,আমি রফিকুল কাদের কিংবা আরিফদের গ্রুপে কোন নেই তাদের মারামারির মাঝখানে আমি রক্তপাতের বিষয়টা সমাধান করতে গেলেই আমার উপর আরিফ এবং আরিফের ভাইয়েরা হামলে পড়েন।
তিনি আরো বলেন,আমি তো বুঝতেই পারছিনা কেন আমাকে হামলা করা হলো সেটা? অথচ, আমি তো আরিফদের ঘনিষ্ঠ আত্বীয়- আরিফের যেটা দাদা সেটা আমার দাদার আপন ভাই।
আমার মনে হচ্ছে আমাদের সাথে যে আরিফের সাথে গোষ্ঠীগত ভাবে পারিবারিক ভিটিমাটির বিরোধ আছে সেটা হয়তো রফিকুল কাদেরদের সাথে আজকের ঝামেলার ভেতর উসুঁল করেছে।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরাও একই কথা বলেন, মোতাহের মিয়ার আপন জেঠাত ভাইয়ের ছেলে হচ্ছে প্রবাসী সাহাবুদদীন, তাহলে- আজকের এই ঘটনায় আসহাবুদদীন উভয়কে ঠান্ডা হওয়ার জন্য বল্লে তাকেও কুপিয়ে জখম করার তো কথা না,তার সাথে তো ঝামেলা নেই মোতাহের মিয়াও তার ছেলে আরিফদের সাথে।
তারা আরো বলেন, এই এক ঘটনায় ফৌজদারি মামলা হবে তিনটা, রফিকুল কাদের বুকেঁর হাড় ভেঙ্গে যাওয়ায় সে কিংবা তার স্বজন বাদী হয়ে হবে একটা এবং রফিকুল কাদেরের প্রতিপক্ষ আরিফদের ৪/৫জন আহত হওয়ায় এবং সাকিবুল ইসলাম নিবিলের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তারা করবে একটা।
এবং প্রবাসী সাহাবুদদীন শুধু মাত্র ঝামেলাটা সমাধান করতে যাওয়ায় মোতাহের মিয়ারা তাকে হামলা করায় তিনি নিজে বাদী হয়ে মামলা করবে একটা।
এদিকে আরিফদের পক্ষের আরিফের বাবা মোতাহের মিয়া এবং আরিফের চাচা মোরশেদসহ মোট ৩-জনকে চমেক এ নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন শান্তির টেকের ফার্নিচার ব্যবসায়ী আহত খোর্শেদ।
এদিকে ঘটনার শুরুতে মোতাহের মিয়ার ছেলে মো:আরিফ ছিলেননা বলেও শান্তির টেকের একাধিক বাসিন্দা প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন,তবে ঘটনার মাঝেই আরিফ এসে কুপাকপি শুরু করেছেন বলে জোরালো ভাবে প্রতিবেদককে জানান আহত রফিকুল কাদের।
তিনি আরো বলেন,শুরুতে হৈ চৈ হলেও জখঁম করাকরির মত পরিস্থিতি হয়নি,মূলত আরিফ আসার পরেই ঘটনাটা বেড়ে যায়।
এদিকে ঘটনার ত্রিমুখী রূপ নেয়ায় মামলার বিধি বিষয়ে চট্টগ্রাম জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট আব্দুল লতিফ প্রতিবেদককে বলেন, একই ঘটনায় সমাধানকারী আসহাব উদদীন এবং একপক্ষ রফিকুল কাদের ও প্রতিপক্ষ আরিফরা উভয়েই আহত হওয়ায় ফৌজদারি আইনে প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্থরা মামলা করতে পারবেন, কারণ এখানে সাতকানিয়া থানাকে তদন্ত করে একই ঘটনায় পৃথক পৃথক ৩টি মামলা রেকর্ড করতে হবে।

কেন না, সাহাবুদদীন প্রবাসী সে কারো পক্ষে কিংবা বিপক্ষের লোক নয়, অথচ! তাকেও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে,এখানে রফিকুল কাদেরের হাড় ভেঙে যাওয়ায় একটি মামলা,এবং আরিফের পক্ষের নিবিলরা ও মোতাহের মোর্শেদরা গুরুতর আহত হওয়ায় একটি মামলা মোট তিনটা মামলায় রেকর্ড হবে।
তারপর মাননীয় আদালত বিচারে বিবেচনা করবেন বাকিটা।
আপাতত যেহেতু একই ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন তিন পক্ষ- এবং তিন পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত তাই এখানে তিন পক্ষই মামলার বাদী এবং আসামী হবেন।
এই বিষয় নিয়ে এওচিয়ার চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবু ছালেহ বলেন,ঘটনা যেই করবে করুক তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি প্রশাসনকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
আমি ঘটনার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অলরেডি প্রশাসনকে অনুরোধও করেছি।
চেয়ারম্যান আবু ছালেহ তাদের ঘটনার বিষয়ে যোগ করে আরো বলেন,জমিজমার বিরোধ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যের পূর্বেরও মামলা আছে।

অপরদিকে মোতাহের মিয়ার ছেলে আরিফকে কুপাকুপির বিষয়ে আসল রহস্য জানতে চাইলে, তিনি আপাতত কোন ধরনের মন্তব্য করতে পারবেননা বলে কেটে পড়েন।

এদিকে রফিকুল কাদের আর আরিফদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জেরে,এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এওচিয়ার শান্তির টেকে দফায় দফায় মুখ বাধা বহিরাগতরা এসে পুরো শান্তিরটেকের দোকানপাট ভাংচুর করে পুরো ষ্টেশনের দোকানপাট বন্ধ করে দেয় বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন শান্তিরটেকের একাধিক দোকানদার।তবে তারা কাউকে চিনতে পারেননি বলেও জানান।
এদিকে আরিফ আর রফিকুল কাদেরদের বিষয়টা স্থায়ী ভাবে সমাধান করা না গেলে এলাকায় যে কোন সময় হত্যার মত পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

এদিকে এই ঘটনা শেষ না হতেই এওচিয়ার দেওদীঘিতে আরো একটি হত্যাচেষ্টার মত গুরুতর ও মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন স্থানীয়রা।
সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১.৪৫ পর্যন্ত এওচিয়ার ৪ নং ওয়ার্ড ও ৫নং ওয়ার্ড মিলিয়ে ৩টা রক্তপাতের ঘটনা ঘটে।
তথ্যসূত্র:জাতীয় দৈনিক দেশ বর্তমান/দৈনিক সকালের সময়/দৈনিক আজাদী/দৈনিক পূর্বদেশ
বি:দ্র:প্রতিটা বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত