সাঙ্গু নদী থেকে ফুটবল তুলতে গিয়ে শিশু নিখোঁজ

সাড়ে ২৩ ঘণ্টা পর মরদেহ উদ্ধার

 

নিজস্ব প্রতিবেদক 

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সাঙ্গু নদী থেকে ফুটবল তুলতে গিয়ে পানিতে ডুবে মো. আসিফ বাবু নামে ৯বছর বয়সী এক শিশু নিখোঁজের সাড়ে ২৩ ঘণ্টা পর মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম ও সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নের বিওসির মোড়স্থ সাঙ্গু নদীর রেলব্রীজ এলাকার তমা কনস্ট্রাকশনের বালু উত্তোলকৃত জায়গা থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। শিশু আসিফ বাবু দোহাজারী-কালিয়াইশ ১০০মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্টের কর্মচারী (ফিডার-বি) সাহেব আলীর ছেলে ও বিওসির মোড়স্থ সাঙ্গু কিন্ডার গার্টেন এর দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। এর আগে উল্লিখিত ঘটনাস্থলে চলতি বছরের মার্চ মাসে একই এলাকার মনিরুল ইসলামের সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী সোহাদি হাসান সোহাগ ও বিগত বছরের মার্চ মাসে একই এলাকার আবদুর ছবুরের পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে মুনতাহা পানিতে ডুবে মারা যান। এ নিয়ে এক বছরের ব্যবধানে তিন শিশু একই স্থানে পানিতে ডুবে মারা যান। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, তমা কনস্ট্রাকশনের বালু উত্তোলনের কারণে নদী গভীর হয়ে যাওয়ায় পানিতে ডুবে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স এর সিনিয়র ষ্টেশন কর্মকর্তা এস.এম হুমায়ুন কার্ণায়েন বলেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের পাঁচজন ও সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিস এর তিনজনসহ মোট আটজন ডুবুরির একটি দল যৌথভাবে শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য সাঙ্গু নদীতে অভিযান শুরু করেন। প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টার অভিযান শেষে নিখোঁজ হওয়ার স্থানের প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ফুট গভীরতা থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে নদীর তীরে উঠানো হয়।
হুমায়ুন কার্ণায়েন আরো বলেন, বুধবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে একটি শিশু সাঙ্গু নদীতে নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনে সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিসের একটি দল শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য প্রায় দেড় ঘণ্টা অভিযান চালিয়েছিল। নদীতে জোয়ার থাকায় অভিযান চালাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। এরপর অন্ধকার হওয়ায় উদ্ধার কাজ অসমাপ্ত রেখেই নদী থেকে উঠে আসতে হয়েছিল উদ্ধারকারীদলকে। শিশুটির লাশ থানা পুলিশকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে শিশু আসিফ বাবুর বাবা সাহেব আলী বলেন, বুধবার সাড়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কয়েকজন বন্ধু মিলে সাঙ্গু নদীতে জেগে উঠা চরে ফুটবল খেলতে যায় আমার ছেলে। খেলার এক পর্যায়ে ফুটবলটি নদীর পানিতে পড়ে গেলে আমার ছেলে আসিফ বলটি পানি থেকে তুলতে গেলে এক পর্যায়ে পানিতে তলিয়ে গিয়ে নিখোঁজ হয়। এরপর তার বন্ধুরা আমাকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাসহ পানিতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় কালিয়াইশ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল গফুর মুক্তাসহ এলাকার একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, তমা কনস্ট্রাকশন ফার্মের রেল সেতুর কাছাকাছি এলাকা থেকে ক্রমাগত বালু উত্তোলনের কারণে সাঙ্গু নদীতে বিশাল আকৃতির গর্তের সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয়, সেতুর কাছাকাছি থেকে বালু তোলায় যে কোন সময় রেল সেতুটিও হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে তমা কনস্ট্রাকশনের কর্মকর্তাদের বললে পুলিশ দিয়ে মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখালে বালু উত্তোলন বন্ধে এলাকার লোকজন প্রতিবাদ করতে সাহস দেখাইনি।
এলাকাবাসীর অভিযোগের বিষয়ে তমা কনস্ট্রাকশন ফার্মের প্রজেক্ট ম্যানেজার বিমলকে (মোবাইল নং-০১৯৭০০০১০৩২) বার বার কল দিলেও তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সাতকানিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রবীন দেব বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে লাশ বুঝে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, শিশুটি পানিতে ডুবে মারা গেছে। পরিবার লাশ বুঝে নেওয়ার জন্য আবেদন করলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। তবে এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে।

 

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.