ভেঙে পড়েছে পটিয়া পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

পটিয়া প্রতিনিধি

 

চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। পটিয়া চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে নিচু জায়গা ভরাট হয়ে ময়লা-আবর্জনা উপচে পড়ছে মহাসড়কের ওপর। মহাসড়কের পাশেই স্তূপাকারে জমা হয়েছে পটিয়া পৌরসভার অর্ধ লাখেরও বেশি মানুষের গৃহস্থালি, শিল্প ও হাট-বাজারের বর্জ্য। এসব বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে ক্ষতিকর প্লাস্টিক, পলিথিন, রাসায়নিক সামগ্রী, জৈব-অজৈব গার্মেন্টস ও গৃহস্থালির উচ্ছিষ্ট। এগুলো ছড়াচ্ছে উৎকট দুর্গন্ধ। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে পৌরবাসীসহ মহাসড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবেই ৩৩ বছরের পুরনো প্রথম শ্রেনীর পৌর এলাকাটি অস্বাস্থ্যকর নগরীতে পরিণত হচ্ছে। তবে কয়েক মাস ধরে পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌরসভার থানার মোড়, পোস্ট অফিস মোড়, মুন্সেফ বাজার, উপজেলা পরিষদের সামনে, বাস স্টেশন, পটিয়া সরকারি কলেজের প্রধান গেইটের সামনে, বৈলতলী সড়ক, পুরাতন থানা হাট, নতুন থানা হাট, বাহুলী, গোবিন্দরখীল, সবজার পাড়া, সেন পাড়া, ওয়াপদা রোড, স্টেশন রোড, পল্লী মঙ্গল রোড়সহ আরো অর্ধ শতাধিক স্পটে। আরও দেখা যায়, বিভিন্ন সময় আগুন দিয়ে এই আবর্জনা পোড়ানো হলে চলাচলের ক্ষেত্রে পথচারীদের মুখে কাপড় দিয়ে যেতে হয়। আশপাশের আবর্জনার দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পৌর বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন সকালে পৌরসভার বর্জ্যবাহী পিক-আপে করে এসব বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সড়ক মহাসড়কে। আগে এই বর্জ পটিয়া চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের দুইপাশে ফেলা হতো। প্রায় ১ মাস ধরে মহাসড়ক প্রশস্তকরনের কাজ চললে সড়ক ও জনপদ বিভাগের লোকজন আর মহাসড়কের পাশে পৌরসভার বর্জ্য ফেলতে দিচ্ছে না। পৌর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ সালের ৯ এপ্রিল ১০ দশমিক ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে ‘ক’ শ্রেনীর পটিয়া পৌরসভা গঠন করা হয়। বর্তমানে প্রায় ৫৫ হাজার ৩২৩ মানুষের বসবাস রয়েছে পৌরসভাটিতে। পৌর সদরের জনগুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক থানার মোড় এলাকার পথ দিয়ে চলাচলকারী সিএনজি চালক তাজুল ইসলাম বলেন, সড়কের পাশে খোলা জায়গায় পৌরসভার আবর্জনা ফেলায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আসিফ ইকবাল বলেন, বছরের পর বছর ধরে এখানে এভাবেই আর্বজনা ফেলে সড়কের পাশে ভাগাড় বানানো হয়েছে। এ নিয়ে কয়েকবার আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করেছি। কিন্তু কে শুনে কার কথা। এসড়কের পাশদিয়ে আমরা প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করি। আমাদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পটিয়া কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান বলেন, কলেজের প্রধান গেইট পৌরসভার বর্জ্য ফেলার বিষয়ে আমি পৌর মেয়রকে মৌখিক ভাবে বেশ কয়েক বার জানিয়েছি। কিন্তু আজ অবদি এর প্রতিকার আমরা পাইনি। একটা সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসের মূল গেইটের সামনে এভাবে ময়লা রাখা কোনভাবে কাম্য নই।প্রতিদিন শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে কিন্তু দেখা যাচ্ছে গেইটের সামনে ময়লার দুর্গন্ধে অনেক শিক্ষার্থী শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে প্রতিনিয়ত। আমি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক দ্বায়িত্বে আছি বিধায় কলেজের বিভিন্ন অনৈতিক বিষয়াধি গুলো এভাবে দেখে থাকতে পারি না। তাই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। যদি পৌরসভা দ্রুত এর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আন্দোলনে বাধ্য হবো। মহাসড়কে ছেলে মেয়েদের স্কুলে আনা নেওয়া করা এক অভিভাবক ফেরদৌস আকতার বলেন, পৌর সদরের সড়ক দিয়ে বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাতায়াতের সময় মুখে কাপড় দিয়ে যেতে হয়। তাছাড়াও আমাদের অনেক কাজেই দিনে কয়েক বার বাসার বাইরে যেতে হয়। কিন্তু বাসার বাইরে গেলেই দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। সড়কের পাশে আবর্জনা না ফেলে যেখানে বসতি নেই, সেখানে ফেললে আমাদের জন্য অনেক ভালো হয়। এই দুর্গন্ধ আর সহ্য করতে পারছি না। পৌরসভার ৯ নং ওয়াডের কাউন্সিলর শেখ সাইফুল ইসলাম বলেন, পৌরসভায় বিশৃঙ্খলা আর বর্জ্য অব্যাবস্হাপনার জন্য দায়ী মেয়র। ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোফরান রানা বলেন, গত আড়াই বছরে মেয়র কোন কাউন্সিলের সাথে সমন্বয় না করে নিজের ইচ্ছে মতো পৌরসভা জোর পূর্বক পরিচালনা করছে। ফলে অন্যান্য কাঠামোর মতো সবশেষ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। তার এ একগুয়েমির কারণে চলতি মাসের মাসিক সমন্বয় সভা একযোগে আমরা সব কাউন্সিলর বর্জন করেছি। আমরা কাউন্সিলরগন মাসিক সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহন করি একরকম তিনি করেন আরেক রকম। তিনি আজ পর্যন্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি সহ কোন স্টিয়ারিং কমিটির সাথে বসে কোন ব্যাপারে আলাপ আলোচনা করেনি, করার প্রয়োজনও বলে মনে করেন না। আজ শুধু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে তা না, সব ধরনের ব্যবস্হাপনা ভেঙে পড়েছে একমাত্র মেয়রের কারনে। পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান কাউন্সিলর কামাল উদ্দিন বেলাল বলেন, পৌরসভার তো নিদ্রিষ্ট কোন বর্জ্য ফেলার জায়গা নেই। যার ফলে বিক্ষিপ্ত ভাবে বর্জ্য গুলো ফেলা হচ্ছে। পূর্বের কোন মেয়র এ ব্যাপারে কোন প্রদক্ষেপ নেয়নি বলে আজ অবস্থাটা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এক প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, বর্তমান মেয়র এব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছে না তা বলব না। তবে তিনি কেন সফল হচ্ছে না তা বলতে পারব না। এব্যাপারে বক্তব্য জানতে মেয়রের মোবাইল ফোন করা হলে বন্ধ থাকার কারনে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.