করোনায় কেন অক্সিজেন সঙ্কটে ভারত?

ভারতে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি থাকলেও অক্সিজেনের অপেক্ষায় রুদ্ধশ্বাস হয়ে থাকছে হাসপতালগুলো, সময়মতো সরবরাহ না পাওয়ায় মারা যাচ্ছেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অনেক রোগী।

রয়টার্সের অনুসন্ধান বলছে, অক্সিজেন পরিবহনের সময়সাপেক্ষ ব্যবস্থা, আমলাতন্ত্রের ঢিলেমি আর আগাম পরিকল্পনার অভাবে ঘটছে এমনটা।

হাসপাতালে কি অক্সিজেন ফুরিয়ে যাচ্ছে?

বার্তা সংস্থাটির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান সমস্যা হচ্ছে হাসপাতালের বেডে সময়মতো অক্সিজেন পৌঁছাচ্ছে না। অক্সিজেন উৎপাদন কেন্দ্রগুলো অনেক দূরে থাকায় এবং বিতরণ ব্যবস্থা সমন্বিত না হওয়ার কারণেই এমনটা হচ্ছে।

নিজেদের যথেষ্ট উৎপাদন সক্ষমতা না থাকায় এ সপ্তাহে দিল্লির বেশ কিছু হাসপাতাল থেকে জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।

হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশের মতো দিল্লির প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতেও কোভিড- ১৯ রোগী বাড়তে থাকায় চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ করতে গিয়ে তৈরি হয়েছে বাড়তি চাপ।

সম্প্রতি দিল্লির বাড়তি চাহিদা মেটাতে ভারতের পূর্বাঞ্চলের শিল্প এলাকা থেকে ট্রাকে করে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে।

অক্সিজেন পরিবহনে কেন দেরি হচ্ছে?
দিল্লিতে অক্সিজেনের সরবরাহ আসে দূর-দূরান্তের সাতটি রাজ্য থেকে। আদালতের একটি নথি অনুযায়ী এসব অক্সিজেন উৎপাদন কেন্দ্রের অনেকগুলোর দূরত্ব দিল্লি থেকে এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি।

গ্যাস শিল্পে জড়িত একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, অক্সিজেনের বিপজ্জনক ধরনের কারণে যাবতীয় তরল অক্সিজেন অল্প কিছু বিশেষায়িত ট্যাংকারে পরিবহন করতে হয়। তাই সময়মতো সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাই আগাম পরিকল্পনা।

সম্প্রতি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতের বেশ কিছু রাজ্যের হাসপাতালগুলো অক্সিজেন সংকটের কারণে বেসামাল হয়ে পড়েছে।

গ্যাসখাতের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসব এলাকার স্থানীয় কিছু কর্মকর্তা নিজেদের সরবরাহ নিশ্চিত রাথতে ট্যাংকার চলাচল বিঘ্নিত করছেন। এসব বাধার কারণেই বরাদ্দ ৩৭৮ টনের মধ্যে বুধবার ১৭৭ টন অক্সিজেন পেয়েছে দিল্লি।

রয়টার্সকে ওই সূত্র জানায়, পরিকল্পনায় ঢিলেমি করে সড়ক পথে অক্সিজেন পরিবহনের পথে হেঁটেছে দিল্লি। নিজেদের পরিকল্পনার বিষয়ে দিল্লি সরকার সময়মতো প্রশ্নের জবাব দেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে সক্রিয় হয়ে উঠলে এমন সমস্যা হতো না।”

ভারতে অক্সিজেন উৎপাদন কি পর্যাপ্ত?
ভারতে এখন শিল্পখাতে ব্যবহারের হিসেবসহ দিনে অক্সিজেন উৎপাদন সক্ষমতা আছে সাত হাজার ১০০ টন, যা বর্তমান চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট।
বুহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দপ্তর থেকে জানানো হয়, এ সপ্তাহে কোভিড- ১৯ এ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ২০টি রাজ্যে প্রতিদিন মোট ছয় হাজার ৭৮৫ টন চাহিদার বিপরীতে ছয় হাজার ৮২২ টন তরল অক্সিজেন বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ লাফিয়ে বেড়ে উঠার শুরুর দিনগুলোতে গত ১২ এপ্রিলের হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে চিকিৎসাখাতে অক্সিজেনের চাহিদা ছিল মাত্র তিন হাজার ৮৪২ টন।
রাজ্যগুলোতে সাধারণত আমলাদের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় গোষ্ঠী অক্সিজেনের বরাদ্দ নিয়ন্ত্রণ করে। মহামারীর সময় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ এবং তার পর্যবেক্ষণের এখতিয়ারও তাদের।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দপ্তর থেকে জানানো হয়, গত কয়েক দিনে তরল অক্সিজেনের সরবরাহ তিন হাজার ৩০০ টন বাড়ানো হয়েছে।

সঙ্কট নিরসনে কি করছে ভারত?

যেখানে সবচেয়ে বেশি অক্সিজেনের প্রয়োজন সেখানে রেলপথে ট্যাঙ্কার পরিবহন শুরু করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
সবচেয় বড় গ্যাস কোম্পানি লিনডে ইন্ডিয়াসহ বাকিদের সাথেও কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিমান বাহিনীর মালবাহী উড়োজাহাজে খালি ট্যাঙ্কারগুলো উৎপাদন কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। পরে সেখান থেকে অক্সিজেন ভরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে সড়কপথে।

জার্মানি থেকে ২৩টি ভ্রাম্যমাণ অক্সিজেন উৎপাদন ইউনিটও কেনা হচ্ছে সশ্রস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে। তরল অক্সিজেন পরিবহনের জন্য ২৪টি বিশেষায়িত কন্টেইনার কিনতে যাচ্ছে টাটা গ্রুপ। হাসপাতালগুলোকে অক্সিজেন দিতে চাইছে আরও বেশ কিছু কোম্পানি।

সরকারের পক্ষ থেকে আর্গন গ্যাস এবং নাইট্রোজেন পরিবহনে ব্যবহার করা ট্যাঙ্কারগুলোকে অক্সিজেন পরিবহনে ব্যবহার উপযোগী করে তোলারও নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটিতে গত কয়েক সপ্তাহে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার তিনগুণ বেড়ে যাওয়ায় পাল্লা দিয়ে বাড়াতে হবে অক্সিজেনের উৎপাদন এবং বিতরণ ব্যবস্থার সক্ষমতা। একটি অনলাইন বার্তা সংস্থার খবর।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.