শালিসি বৈঠকের টাকা ফেরত চাওয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ইউপি সদস্য আহত

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যানের কাছ থেকে স্থানীয়রা শালিসি বৈঠকের টাকা ফেরত চাওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে তুমুল মারামারির ঘটনা ঘটে।

১২ই জানুয়ারী (শুক্রবার) রাত ৯টার দিকে উপজেলার এওচিয়ার ৩নং ওয়ার্ডে পাহাড়তলী আলীনগরে আদায়া বাপের সেন্টার নামক এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

ঘটনায় মারধরের শিকার হওয়া ব্যক্তির নাম মো: মন্জুরুল আলম, তিনি এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৩নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য।

স্থানীয়সূত্রে জানা যায়,এওচিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের আওতাধীন ভূমিহীনদের ৪৮টি ঘর বরাদ্দ দেয় সরকার।

সুষ্টু বরাদ্দের স্বার্থে গত ২০১৭সালে সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসন ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে সমন্বয় করে ভূমিহীনদের তালিকা তৈরী করেন,তখন এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান ছিলেন আহত মন্জুর আলম।

তিনি তার বাড়ির সোজা পূর্বের প্রতিবেশী জব্বার নামে এক রিক্সাচালক থেকে ৫০হাজার টাকা নেয়- ঘর বরাদ্দের কথা বলে,পরে তৎকালীন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিককে দিতে হবে বলে ৫০হাজার টাকা বাদে আরো ২০হাজার টাকা নেয়।

কিন্তু ওই রিক্সাচালকের নাম ভূমিহীনদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি ইউপি সদস্য মন্জুর আলম,পরে এই বিষয়টা তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিককে বিচার দেয় ভুক্তভোগী রিক্সাচালক, বিচার না করে উল্টো তৎকালীন এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদে বেঁধে রেখে ভুক্তভোগীকে মারধর করেন সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য মন্জুর আলম ।

সেসময় ভুক্তভোগী রিক্সাচালক বিষয়টি অবহিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছিলেন।

সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের হস্তক্ষেপে উপজেলা প্রশাসন বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারেননি।

এদিকে স্থানীয়রা আরো বলেন, বেশ কিছুদিন আগে একটি বিচারকার্যে সহায়তা করার নাম দিয়ে এওচিয়ার পাহাড়তলীর আলীনগরের তেলি পাড়ার এলাকার মৃত মুছা মৌলভীর ছেলে হতদরিদ্র রিক্সা চালক মো:আলমগীর থেকে ৩০হাজার টাকা নেয় অভিযুক্ত মন্জুর আলম।
কিন্তু প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বিচারটি সমাধান না করলে দরিদ্র রিক্সাচালক গত পরসু (বুধবার)সন্ধ্যায় টাকা খুঁজতে যায় ইউপি সদস্য মন্জুর আলমের নিজ বাড়িতে।

ইউপি সদস্য মন্জুর আলম টাকা দিয়ে দিবে আশ্বাস দিলে ফিরে আসে ভুক্তভোগী রিক্সাচালক আলমগীর।

টাকা ফেরত না দিয়ে ইউপি সদস্য মন্জুর আলম তার দলবল ও বহর নিয়ে প্রকাশ্যে উল্টো রিক্সা চালক আলমগীরের তেলিপুকুর পাড় সংলগ্ন এলাকায় হুমকি দিতে আসলে- তাৎক্ষণিক এলাকাবাসীর প্রতিরোধে মন্জুর আলম তার দলবল বাহিনী নিয়ে পিছু হটে।

স্থানীয়রা আরো জানান, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা এবং চাল পাইয়ে দিবে বলে টাকা গ্রহণ করেছে মন্জুর ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান থাকার সুযোগে।

পুরো এওচিয়ায় এরকম অন্তত ৫শতাধিক মানুষ তার থেকে টাকা পাবে।

তাই দেনাদাররা একত্রিত হয়ে কিছুূদিন ধরে বেশ কয়েকবার তাকে ধাওয়া করে আসছিলো,আজ (শুক্রবার) তাকে এলাকায় পেয়ে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে গুটিকয়েক স্থানীয়রা ইউপি সদস্য মন্জুরকে লাথি কিল ঘুষি দিয়ে আঘাত করেন।

স্থানীয়রা মন্জুর আলমকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় বলেও তারা জানান।

এদিকে সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে প্রত্যক্ষদর্শীরা প্রতিবেদককে জানান,মন্জুর আলমের ছোট ভাই সাহাবুদদীন মাটির ব্যবসা করেন এওচিয়ার ছনখোলা চূড়ামনিতে, এবং পাহাড়তলী আলীনগরের পশ্চিমের পাহাড়ে।

জমি আর পাহাড় ও টিলা কেটে মন্জুর আলমের প্রভাব খাটিয়ে চলছিল এই ব্যবসা।

অনেকের অনুমতি ছাড়া তাদের ফসলির জমির টপসয়েল নিয়ে অবৈধ ইটভাটায় বিক্রি করে আসছিলো সাহাবদদীন,তাই মন্জুরের পাশাপাশি এলাকার লোকজন সাহাবুদদীনের উপরও ক্ষিপ্ত ছিলো,পাশাপাশি কিছু ইটভাটায় মাটি দেয়া নেয়া নিয়েও সাহাবুদদীনের সাথে চলছিল মনোমালিন্য।

আজকে কিছু ইটভাটার লোকজন ও স্থানীয় কৃষকরা মিলে মূলত ষ্টেশনে সাহাবুদদীনকে ধরতে আসছিল সেখানে মনজুর আলমের সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

এদিকে এওচিয়ার চেয়ারম্যান আবু ছালেহ বলেন,হ্যা ঘটনাটি আমি শুনেছি তার ভাইয়ের মাটিকাটার ব্যবসা আর মন্জুর আলম থেকে বেশ কিছু মানুষে টাকা পাবে সেই ইস্যুকে কেন্দ্র করে তার প্রতিবেশীদের সাথে আজকের এই ঘটনা ঘটে।

আমি বর্তমানে চট্টগ্রামে অবস্থান করায় তাকে দেখতে যেতে পারিনি,গ্রামে আসলে তাকে অবশ্যই দেখতে যাব।

মারধর করে বকেয়া বা ধার দেওয়া টাকা উদ্ধার করা সম্ভব নয়,আইন নিজের হাতে তোলে নেয়া মোটেও সমীচীন নয়।

দুই তিনজন স্থানীয় পাওনাদার পরিষদেও কিছুূদিন আগে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল যা বিচারাধীন আছে অভিযোগকারীদের মধ্যে একজন রিক্সাচালকও আছেন।

এদিকে ব্যবসায়ী মফিজ বলেন,ঘটনার বিষয়ে আমরা অবগত নই তবে টাকা খুঁজার দায়ে মেম্বার মন্জুর আলম প্রায় ৫০জন লোক নিয়ে তেলিপাড়া সেন্টারে এসে এক রিক্সাচালককে মারতে উদ্যত হলে আমরা এলাকাবাসী তা থামিয়ে দিই।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.