অনৈতিক প্রস্তাবের বিচার চাওয়ায় সেই নার্স বদলি, বহাল অভিযুক্ত ডাক্তার মামুন

নিজস্ব প্রতিবেদক 

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এক নার্সকে অনৈতিক প্রস্তাব ও শ্লীলতাহানির করার অভিযোগ ওঠেছে একই হাসপাতালের উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে।

ওই নার্স (মিলা ছদ্মনাম) ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে ওই অভিযোগে ক্ষেপে গিয়ে ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল  মামুন উল্টো  তাকে বদলি করিয়ে দেয়ার মত ঘটনাও ঘটে।

জানা যায়, ২০২২সালের মে মাসের ১৯তারিখে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত ওই নার্সকে অনাকাংখিত একটি বিষয়ে কৈফিয়ত তলব করলে ওই কৈফিয়তের জবাব প্রদান করেন, কিন্তু একই বছরের ২৫শে আগষ্ট ওই নার্সকে আরো একটি কৈফিয়ত তলব করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

 পরে ওই সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ক্যাশিয়ার আজাদের মাধ্যমে অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে সরাসরি ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন ওই নার্সকে তার অফিস কক্ষে ডেকে সরাসরি অনৈতিক প্রস্তাব দেন,এবং তার প্রস্তাবে রাজি হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাজার হালে চাকুরি করতে পারবেন বলেও আশ্বাস প্রদান করা হয়।

শুধু আশ্বাসই প্রদান করেননি ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন তার দেয়া প্রস্তাব গ্রহন না করলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকুরী করে শান্তি পাবেননা বলেও হুশিয়ারি দেন।

এদিকে অনৈতিক প্রস্তাব ও বিভিন্ন অজুহাতে  বিভিন্ন বিষয় নিয়ে  শ্লীলতাহানির অভিযোগ তোলে ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে ওই নার্স চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে ২০২২সালে ১৮ই সেপ্টেম্বর একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন, ওই অভিযোগের চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের ডকেট নং ৭১৬ নং হিসাবে রিসিভ করা হয়।

লিখিত অভিযোগটি চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কর্মকর্তা ডাক্তার ইলিয়াস চৌধুরী আমলে নিয়ে তার সাক্ষরিত ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বারক নং সিএসসি/শা-৫/২০২২/১১৮৩০ মূলে একটি চিঠিতে চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রুমা ভট্টাচার্য, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (ডিসি) ডাক্তার মুহাম্মদ নুরুল হায়দার,সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা কীট তক্ত্ববিদ এন্তেজার ফেরদৌসকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখার আগেই অভিযোগ দেয়ার মাত্র ৭দিনের মাথায় বিচারপ্রার্থী সেই নার্সকে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অন্যত্রে বদলি করার মত অভিযোগ তোলেন সেই ভুক্তভোগী নার্স।

সেই ভুক্তভোগী নার্স বলেন,বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অজুহাতে আমাকে ঘায়েল করার চেষ্টা করেছিল সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন, তার কথায় কোনমতে সাড়া না দিলে করতে থাকে একের পর এক নিয়মবহির্ভূত অযৌক্তিক কৈফিয়ত ।

 পরে ওই কৈফিয়তের জবাব দিলেও সন্তুষ্ট হননা মামুন সাহেব,পরে তার খুবই আস্থাভাজন  সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ক্যাসিয়ার আজাদকে দিয়ে তার অফিসে ডেকে সরাসরি অনৈতিক প্রস্তাব দেন ও ইশারা ইঙ্গিতে শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা চালান,এবং কথা শুনলে রাজার হালে চাকুরী করার আশ্বাস যেমন দেন তেমনি কথামত কাজ না করলে পস্তাতে হবে বলেও হুশিয়ার করেন।

পরে আমি বিষয়টা খোলাসা করে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত কমিটি করা হয়,তদন্ত কমিটির শেষটা দেখার আগেই আমার জব ষ্টেশন থেকে আমাকে বদলি করা হয়, পরে বদলির বিষয়ে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন নিজেই তার হেডামে বদলি করা হয়েছে মর্মে সবাইকে জাহির করতে থাকেন।

এদিকে অনৈতিক প্রস্তাবের বিষয়ে লিখিত অভিযোগের বিষয়ে স্বীকার করলেও প্রস্তাবের বিষয়টা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প:প: কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

তিনি বলেন যে মহিলা সিভিল সার্জন স্যারকে আমার বিরুদ্ধে আপত্তিকর বিষয় এনে অভিযোগ দিয়েছেন তা একটা ষড়যন্ত্র, তবে তদন্ত রিপোর্ট  কার পক্ষে গেল জানতে চাইলে সেটা তার পক্ষে বলে নিশ্চিত করলেও রিপোর্ট দেখাতে পারবেননা বলে সাফ জানিয়ে দেন ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.