রাজনীতিতে বারবার জার্সি পাল্টাতেন সাবেক হুইপ সামশুল 

 

আ ন ম সেলিম,পটিয়া প্রতিনিধি :

 

১৯৮০ সালে ফুটপাতের হকlর থাকাকালীন টাইপ মেশিন চুরির অপরাধে গ্রেপ্তার হয়ে ১৭ দিন কারাভোগ করেন। পরে হকার থেকে বিএনপির যুবদলে যোগ দেন সামশুল হক চৌধুরী ওরফে বিচ্ছু। ১৯৮১ সনের ১১ মে চট্টগ্রাম মহানগরের ডবলমুরিং থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। ঐ কমিটির সভাপতি ছিলেন সৈয়দ আহমদ। পরে এরশাদ ক্ষমতায় আসলে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিনা ভোটে হয়ে যান চট্টগ্রাম শহরের আলকরন ওয়ার্ডের কমিশনার।

রাজনীতিতে বারবার জার্সি পাল্টানো সামশুল হক চৌধুরী সর্বশেষ ‘ক্লাব’ হিসেবে যোগ দেন আওয়ামী লীগে।

বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের গণজোয়ারের সময় যাদুর কাটির ইশারায় মনোনয়ন ভাগিয়ে নিয়ে সহজে হয়ে যান চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া আসনের এমপি। তিনবার সংসদ সদস্য ও একবার হুইপ নির্বাচিত হওয়া এই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। সংসদ সদস্য হওয়ার পর আর পিছনে ফিরে থাকাতে হয়নি তাকে। আলাদিনের চেরাগের মতো রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া সামশুলকে নিয়ে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে আলোচনা- সমালোচনার কমতি নেই।

হলফনামা সূত্রে জানা যায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় সামশুল হক নিজের সম্পদের বিবরণীতে লিখেছেন-তিন কাঠা ভিটি ভূমির মূল্য ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা,৯ কাঠা ১৫ ছটাক ভিটি ভূমির মূল্য ৩৪ লাখ ৭২ হাজার ৫২০ টাকা, পাঁচ কাঠা ভিটি ভূমির মূল্য ৩২ লাখ ৬০ হাজার ৪০০ টাকা। এ ছাড়া আবাসিক বা বাণিজ্যিক দালানের মূল্য লিখেছিলেন ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আর বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের বিবরণে তিনি লেখেন-৫ কাঠা ভিটি ভূমির ওপর চারতলা বাড়ি আছে, যার মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ৪৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। তবে অনেকেই জানায়, সামশুল হকের সম্পদের পরিমাণ হলফনামার চেয়ে কয়েক শত গুণ বেশি। সাবেক হুইপ সামশুলের অবৈধ আয়ের বিষয়টি তাঁর প্রথম নির্বাচনের হলফনামার সাথে বর্তমান সম্পদের পরিমাণ দেখেও অনুমান করা যায়।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ সহ বেশ কয়েক জন রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রায় সময় টেলিভিশন টক শো’তে সামশুল হক চৌধুরী বিচ্ছুকে নিয়ে বিষোদগার করেন।

উপজেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য  রবিউল ইসলাম জানান, এমপি হওয়ার পর সামশুল হক চৌধুরী দলীয় নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করে নিজের আখের ঘুচিয়েছেন। এমপি হওয়ার আগে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে একটি গাড়ি ছিল। এখন তাঁর ৫-৭ টি কোটি কোটি টাকা দামের বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে। তার প্রতিটি ভাই-বোনও প্রত্যেকে এক বা একাধিক গাড়ির মালিক। পটিয়ায় সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করার অহরহ অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

পটিয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজেদা বেগম জানান, সংসদ সদস্য হওয়ার আগে পটিয়ায় নিজের গ্রামে টিনের একটি ঘর ছিল তাঁর। সংসদ সদস্য হওয়ার পর ঐ বাড়ির নিশানা সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন হয়ে যায়। কোটি কোটি টাকা খরচ করে করেছেন দৃষ্টি নন্দন বিলাসবহুল বাড়ি। ২০০৮ সালে নির্বাচন করার সময় আর্থিক টানাপোড়েনে ছিলেন তিনি। নেতাকর্মীদের চাঁদার টাকায় নির্বাচন করে এমপি হয়ে তাদের আর চিনতেন না।

পটিয়া উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ন আহবায়ক ডি এম জমির উদ্দিন জানান, মানব পাচার,অর্থপাচার, মাদক কারবার, ক্লাবকে জুয়ার আখড়া বানানো,নালার ওপর মার্কেট নির্মাণসহ অনেক অপকর্মে জড়িত ছিলেন তিনি। গত শতাব্দীর আশির দশকে সামশুল হক চৌধুরী চট্টগ্রাম নগরের আমতলা এলাকার ফুটপাতের হকার ছিলেন। জাতীয় পার্টির আমলে চট্টগ্রাম পৌরসভার সুগন্ধা আবাসিকে প্লট বিক্রির নামে তাঁর বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। ওই সময় রিয়াজুদ্দিন বাজারে নালার উপর একটি মার্কেট গড়ে তোলেন। হকার থাকাকালীন তিনটি টাইপ মেশিন চুরির অভিযোগে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল। ১৯৮০ সালের আগস্টে কয়েকটি সংবাদপত্রে  চুরি করা টাইপ মেশিনসহ সামশুলের গ্রেপ্তারের ছবি প্রকাশিত হয়। এক বা একাধিক  বাণিজ্যিক ভবনও রয়েছে সামশুল হক চৌধুরী।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.