আলিফকে হারিয়ে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর চোখে ঘোর অমানিশা

সৈয়দ আককাস উদদীন সাতকানিয়া থেকে

অনাগত সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারলেননা চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতির কৃতী সন্তান আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ।

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে চালানো সংঘর্ষের সময় চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানার লালদিঘী এলাকায় চট্টগ্রাম আদালত ভবনের প্রবেশমুখে রঙ্গম কনভেনশন হলের পিছনে নিয়ে গিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে তাঁকে।

নিহতের স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিন এর বড় ভাই লোহাগাড়া সদর ইউনিয়নের সওদাগর পাড়া এলাকার তারেকুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের সাথে তাঁর বোন তারিনের বিয়ে হয় সাড়ে তিন বছর আগে।

তাদের তাজকিয়া নামের আড়াই বছরের এক কন্যা সন্তান আছে। তারিন এখন ৭ মাসের সন্তানসম্ভবা। স্বামীকে সন্ত্রাসীরা জবাই করে হত্যা করেছে এ খবর শোনার পর বেহুঁশ হয়ে গেছে তারিন। তার ভবিষ্যৎ কী হবে। তার সন্তানদের কী হবে সব মিলিয়ে তারিনের চোখে এখন ঘোর অমানিশা।

খুনিরা আমার বোন জামাইকে অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে দেয়নি, নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করেছে। অবিলম্বে খুনিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

নিহতের স্বজন ঈশা সাঈদী দৈনিক আজাদীকে জানান, নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতী ইউনিয়নের ফারাঙ্গার গ্রামের বাড়িতে। পুরো গ্রামজুড়ে শোকের মাতম চলছে, কাঁদতে কাঁদতে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন মা। শোকে পাথর হয়ে বেহুশ হয়ে গেছেন স্ত্রী।

নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের পিতা জামাল উদ্দিন সওদাগর দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমার ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে সাইফুল ছিল ৩য় সন্তান। আমার ছেলে নামাজি, নম্র ও ভদ্র প্রকৃতির মানুষ ছিলো, তাহাজ্জুদ নামাজও মিস করতোনা।

আমার ছেলে এভাবে আমার আগে চলে যাবে আমি কখনো কল্পনা করিনি। বিনা অপরাধে যাঁরা আমার ছেলেকে নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করেছে তাঁদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও উপদেষ্টা মন্ডলির কাছে।

ছাত্রজীবনে তুখোড় মেধাবী সাইফুল ইসলাম আলিফ লোহাগাড়ার আধুনগর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়ে দাখিল পাশ করেছিলেন। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আর্ন্তজাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) থেকে এলএলবি পাশ করে আইন পেশায় নিযুক্ত হন।

আইনজীবী হিসেবে চট্টগ্রাম আদালতে প্র্যাক্টিস করতেন তিনি। প্রতিদিনকার মতো ঘটনার সময়ও আদালতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে আদালত ভবনের প্রবেশমুখে সন্ত্রাসীরা বিনা উস্কানিতে তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়ে রঙ্গম টাওয়ারের পেছনে নিয়ে গিয়ে জবাই করে হত্যা করে।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.