লাখ টাকার চুক্তিতে, বনের জায়গায় পাকা ঘর নির্মাণের সম্মতির অভিযোগ রেঞ্জারের বিরুদ্ধে
সাতকানিয়া কেঁওচিয়া বন গবেষণা কেন্দ্র-
সাতকানিয়া উপজেলা প্রতিনিধি
সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতের অদূরে কেঁওচিয়া বন চাষ গবেষণা কেন্দ্রের কাছে আইজ্জার মউজ্ঝার ঘোনার দক্ষিণে বনবিভাগের বিশাল পাহাড় স্কেভেটর দিয়ে রাতারাতি কেটে সমান করে এবং গাছ কেটে উজাড় করে সংশ্লিষ্ট বন গবেষণা কেন্দ্রের রেঞ্জারের নীরবতায় পাকা ভবন নির্মাণ করে যাচ্ছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের হরিণতোয়া দক্ষিণ পাড়ায় বন গবেষণা কেন্দ্রের রেন্জার আনিসের রহস্যজনক ভূমিকায় মৃত আজিজুর রহমানের ছেলে ইউনুছ, এবং ইউনুসের ছেলে শহীদ,রিদুয়ান,সাজ্জাদরা এই কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন একই এলাকার ইয়াকুব ও মিজানরা।
মূলত একই এলাকার ইয়াকুবের ছেলে মিজানরা ওই সরকারি জায়গা আগে থেকেই দখলে ছিলো, পরে রেঞ্জ অফিসকে ম্যানেজ করে অপর পক্ষ ইউনুসরা দখল করতে গেলে উভয় পক্ষে সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষের ঘটনায় আহত মিজান বাদী হয়ে সাতকানিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
সাতকানিয়া থানায় দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বনবিভাগের সরকারি জায়গাটা মূলত ৫০/৬০বছর ধরে থানায় অভিযোগ দায়ের করা মিজানদের দখলে ছিলো,এবং তারা দখলে রেখে গাছপালা রোপণ করে দীর্ঘকাল ধরে বসতি স্থাপন করে আসছিলো, মিজানদের দখলে থাকা জায়গায় রোপন করা গাছগুলি বড় হলে ওই গাছ এবং জায়গায় নজর পড়ে ইউনুস এবং তার ছেলেদের,পরে ইউনুসরা পার্শ্ববর্তী কেঁওচিয়া বন গবেষণা কেন্দ্রের রেঞ্জার মো: আনিসুর রহমানকে হাত করে ওই জায়গায় থাকা গাছ কেটে ভূমিটা দখলে নিয়ে, উল্টো ইউনুসরা সেই সরকারি জায়গায় পাকা ঘর নির্মাণ করার কাজ শুরু করেন।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে দখলে থাকা মিজানরা তাদের রোপণ করা গাছ ও জায়গার কথা বললে বন গবেষণা কেন্দ্রের রেন্জারের দোহায় দিয়ে মিজানদের গত ৭ই ডিসেম্বর ব্যাপক মারধর করেন।
পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মিজানরা সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা গ্রহণ শেষে সাতকানিয়া থানায় এই বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এদিকে একাধিক স্থানীয়রা প্রতিবেদককে জানান,মূলত এই এলাকার অধিকাংশ জায়গা বন গবেষণা কেন্দ্রের রেঞ্জারকে ম্যানেজ করে সরকারি জায়গায় পাবলিকরা গাছবাগান ও পাহাড় কেটে পাকাঘর বা টিনের ঘর নির্মাণ করে থাকেন।
এমন কি এই সরকারি পাহাড়গুলোতে কি পরিমাণ ঘর আছে বা কি পরিমাণ এস্কেভেটর মাটি কাটে ওই এস্কেভেটর এবং ড্রাইভারদের তালিকা ও ভূমিদস্যু এবং মাটি ব্যবসায়ীদের তালিকা রেঞ্জার আনিস সাহেবের হাতে আছে।
রেঞ্জার আনিস সাহেব এসব অনিয়ম ও দূর্নীতিগুলি নিয়ন্ত্রণ করেন তারই অফিসের পুরাতন স্টাফ বনকর্মী কলিমকে দিয়ে।
এদিকে হরিণতোয়ার মিজানদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনায় সরকারি জায়গায় দখল বদল বিনিময় করতে ইউনুসদের থেকে বনকর্মী কলিমকে দিয়ে এক লক্ষ টাকার লেনদেন করেন বলে জানান ভুক্তভোগী মিজান ও তার স্বজনরা।
মিজান আরো বলেন,ঘটনার পরেরদিন ও ৫০জন লোক নিয়ে ইউনুসরা আমাকে মেরে ফেলার জন্য বাড়ুি ঘর ঘেরাও করছিলো।
সরকারি জায়গার জন্য আমাকে বাঁধা দিবে রেঞ্জার কিন্তু তারা রেঞ্জারের পক্ষে হয়ে আমার লাগানো গাছ কাটবে এবং সরকারি জায়গায় পাকা ঘর নির্মাণ করবে এটা তো হতে পারেনা,এটা হচ্ছে মূলত রেঞ্জাররের শেল্টারে।
তারা রেঞ্জারকে ম্যানেজ করছে।
শুধু তাই নয়,সরকারি জায়গা দখল করে পাকা ঘর নির্মাণ করা ইউনুসদের থেকে প্রতিদিন গরুর দুধ কলিমকে দিয়ে রেঞ্জার আনিসের অফিসে আনা হয় বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা।
তবে সরকারি জায়গা দখলকারী ইউনুসের বাড়ি থেকে বনকর্মী কলিমের মাধ্যমে দৈনিক অফিসে গরুর দুধ আনা নেওয়ার বিষয় এবং লাখ টাকার চুক্তিতে দখল বদলের বিষয়টা সরাসরি অস্বীকার করেন কেঁওচিয়া বন গবেষণা কেন্দ্রের রেঞ্জার মো:আনিসুর রহমান,তিনি বলেন আপনাকে এসব বানোয়াট বিষয় কারা অভিযোগ করছে তা আমি জানি তবে কথা গুলি সঠিক নয়।
আমার অফিসের কর্মচারী কলিম তাদের থেকে কোন গরুর দুধ আনেনা এবং ওই বিষয়ে কোন আর্থিক লেনদেন হয়নি।
তিনি আরো বলেন,এই এলাকার সরকারি জায়গাগুলো উদ্ধারের জন্য জোরালো পদক্ষেপ ইতিমধ্যে আমরা গ্রহণ করেছি।
এমনকি আমি নির্দেশ দিয়েছি সরকারি পাহাড়ী জায়গায় কোন বাড়ি নির্মাণ কাজ চলতে পারবেনা,ফলে এখন কাজ বন্ধ।
তবে তার কথার ভিত্তিতে এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাকা ঘরের বিম ঢালাই করার জন্য বড় বড় গর্ত খনন করা হয়েছে কিন্তু আপাতত কাজ বন্ধ, তবে রাতের বেলায় লোকচক্ষুর আড়ালে এই নির্মাণ কাজ চলবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন ।
এই বিষয়ে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।