চুরির নাটক সাজাতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন লোহাগাড়ার ২ ইউপি সদস্য

লোহাগাড়া প্রতিনিধিঃ

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় মোটরসাইকেল চুরির নাটক সাজাতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন কলাউজান ইউনিয়ন পরিষদের ২ ইউপি সদস্য। এ ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। ঘটনার পরপরই পালিয়ে যায় দুই ইউপি সদস্য।

সোমবার দিবাগত রাত ১টায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বান্দরবানের লামা সরই আমতলী এলাকার গোলাম ছোবহান ফকিরের ছেলে আবু বক্কর ছিদ্দিক (৩২) মঙ্গলবার সকালে লোহাগাড়া থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১১ জনকে আসামি করা হয়।

আটককৃতরা হলেন— কলাউজান হাছিলা মহাজন পাড়া ইদ্রিছ মোল্লার বাড়ি কামাল উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩০), মো. মাহফুজ (২৩) ও মো. রেজাউল (৩০)। ঘটনার সাথে জড়িত ইউপি সদস্যরা হলেন— কলাউজান ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সালাউদ্দিন (৩৮) ও ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রহিম (৩৭)।

জানা যায়, বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই (কেয়াজু পাড়া) আমতলী পাড়া সেলিমের দোকান সংলগ্ন এলাকা থেকে ইউপি সদস্য সালাউদ্দিন ও মো. রহিমের নেতৃত্বে অপহরণ করে সোমবার রাতে আবু বক্কর ছিদ্দিককে মোটরসাইকেল চোর সাজিয়ে মারধর করে লোহাগাড়া থানায় হস্তান্তর করেন। একটি চুরির মামলার এজাহারও দায়ের করেন থানায়।

রাতেই লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকের হোসাইন মাহমুদের নেতৃত্বে এসআই সামছুদ্দৌহা সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ ঘটনার কোন সুরহা না পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই তিনজনকে আটক করেন। তিনজনকে আটক করার পরপরই থানা থেকে পালিয়ে যায় ইউপি সদস্য সালাউদ্দিন ও মো. রহিম।

এদিকে, লামার কেয়াজু পাড়া পুলিশ ফাঁড়ির একটি টিম আবু বক্কর ছিদ্দিককে অপহরণের বিষয়টি জানতে পেরে খোঁজ খবর নেন। পরে তারা লোহাগাড়া থানা পুলিশের সাথে যোগোযোগ করলে থানা হাজত থেকে মুক্তি মিলে ছিদ্দিকের। এছাড়া অপহরণ মামলার আসামি হতে হয় চুরির ঘটনা সাজানোর সাথে জড়িতদের।

আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, ‌‘বাগির পাশে দোকান থেকে চোখ বন্ধ করে মারধর করে গাড়িতে তুলে। মাঝপথে এসে চোখ খুলে দেই। সিএনজিতে করে তারা আমাকে লোহাগাড়ার কলাউজানে নিয়ে যায়। সেখানেও মারধর করে পরে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ চুরির কোন সত্যতা না পেয়ে আমাকে সম্মান জানিয়ে ছেড়ে দেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘মূলত জায়গা জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে আমাকে অপহরণ করে চুরির নাটক করে থানায় সোপর্দ করেন। পুলিশের বিচক্ষণতায় নাটকের অবসান হয় এবং তিনজনকে আটক করে মামলা দায়ের করে আদালতে সোপর্দ করা হয়।’

অপহরণ মামলায় অভিযুক্ত কলাউজান ইউপি সদস্য মো. সালাউদ্দিন সিকদার বলেন, ‘অপহরণের ঘটনার সাথে আমি মুঠেও জড়িত নয়। আমি যেহেতু জনপ্রতিনিধি আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি ষড়যন্ত্র মাত্র। আটক করে থানায় হস্তান্তরের বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে রাজি হননি।’

কেয়াজু পাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক আবুল হাসেম জানান, মূলত জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় ছিদ্দিকের সাথে মারামারির ঘটনা ঘটে। রাতেই ছিদ্দিককে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে উদ্ধারের তৎপরতা শুরু করি। ঘটনাটি খুবই নগন্য।

লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকের হোসাইন মাহমুদ জানান, লোহাগাড়ার কলাউজান ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সালাউদ্দিন ও রহিম উদ্দিনসহ কয়েকজন ব্যক্তি আবু বক্কর ছিদ্দিক নামের এক ব্যক্তিকে টেনে-হিঁছড়ে মোটরসাইকেল চুরি করছে বলে থানায় নিয়ে আসে। বিষয়টি সন্দেহ হলে তদন্ত করে ঘটনাটি তদন্ত করা হয়। ঘটনাটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় সালাউদ্দিন মেম্বার ও রহিম মেম্বার পলিয়ে রক্ষা পেলেও তিনজনকে আটক করতে সক্ষম হয়। চুরির নাটক সাজাতে এসে অপহরণ মামলায় এখন তারাই ফেঁসে গেল।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.