দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ভারত সাড়া দিচ্ছে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভারতের মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হলেও তাদের সাড়া মেলেনি
কয়েক দফা অশুল্ক বাধা আরোপের পর ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক এগিয়ে নিতে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হলেও তাদের সাড়া মেলেনি।
এ তথ্য জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে বাংলাদেশের পাটপণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকরা তার প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন। উপদেষ্টা অবশ্য বলেন, পাটপণ্যে এই বিধিনিষেধ রপ্তানিতে তেমন প্রভাব পড়বে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ-সংক্রান্ত সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
এ সময় রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পণ্য আমদানিতে ভারতের বিধিনিষেধ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় আলোচনার উদ্দেশ্যে আমাদের দপ্তর থেকে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। তবে আমরা এখনও তাদের কাছ থেকে কোনো জবাব পাইনি। বিষয়টি যতটুকু সংবেদনশীলতার সঙ্গে মোকাবিল করা দরকার, আমরা তা করছি। তবে এর জন্য অবশ্যই ভারতের অংশগ্রহণ দরকার।’
ভারতের সঙ্গে অনেক বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে জানিয়ে শেখ বশিরউদ্দীন আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করছেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে সমস্যা আছে বলে মনে হচ্ছে না।’
সোমবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য মহাপরিচালকের কার্যালয়ের (ডিজিএফটি) এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে চার ধরনের পাটপণ্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করতে পারবেন না। শুধু মুম্বাইয়ের নভসেবা বন্দর দিয়ে এসব পণ্য আমদানি করা যাবে বলে ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়।
বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে সম্প্রতি কয়েক দফায় অশুল্ক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত। এর আগে গত ১৭ মে স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও সুতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয় প্রভৃতি পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ দেয় দেশটি। এর আগে ৯ এপ্রিল ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা প্রত্যাহার করে দেশটি। এরপর বাংলাদেশ ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করে।
বাংলাদেশ ও ভারতের বর্তমান বাণিজ্য সম্পর্কের বিষয়ে গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান মঙ্গলবার সামাজিক মাধ্যমে এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যে অশুল্ক বাধার ব্যবহার বাড়ছে। ভারতের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের প্রবাহে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। কেননা বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের ৯৯ শতাংশের বেশি স্থলপথেই ভারতে যায়। নতুন নিষেধাজ্ঞা শুধু খরচ বাড়াবে না, বরং বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য বড় ধরনের লজিস্টিক জটিলতাও তৈরি করবে।
তিনি বলেন, শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশও একই পথে হাঁটছে। ২০২৪ সালের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশ ভারতীয় সুতা ও কয়েকটি পণ্যের আমদানিতে স্থলবন্দর দিয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ভারতের সীমান্তবর্তী তিনটি স্থলবন্দর বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে পরিচিত ভারত ও বাংলাদেশ এখন বাণিজ্য সমস্যা সমাধানে স্বচ্ছ সংলাপের পরিবর্তে একতরফা নিষেধাজ্ঞা ও অশুল্ক বাধার দিকে ঝুঁকছে। এসব পদক্ষেপ শুধু দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষতি করছে না বরং দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতির সম্ভাবনাও ধ্বংস করছে। তিনি মনে করেন, দুই দেশের মধ্যে একটি ধারাবাহিক সংলাপ শুরু হওয়া উচিত, যা স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ থেকে মুক্ত।