রিকশা চালক খুন:গরীব মানুষ খুন হওয়ায়-পুলিশ গ্রেফতার করেনা খুনিদের
অভাবে ৭দিন ধরে অল্প অল্প খেয়ে বেচেঁ আছে রিকশা চালকের এতিম শিশুরা
সৈয়দ আককাস উদদীন, সাতকানিয়া
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার দিনেদুপুরে আলোচিত হত্যাকান্ডের শিকার হয় দিনমজুর রিকশা চালক নুরুল কবির।
নিহত নুরুল কবির হত্যাকান্ডের ১মাস ৪০ পেরিয়ে গেলেও আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
রবিবার (১২সেপ্টেম্বর) সকালে নিহত নুরুল কবিরের শোকাহত পরিবার গিয়ে খোঁজ খবর নিতে গেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতের মা ও তার ছোট ছোট ২ছেলে ২মেয়ে।
নিহতের মা মমতাজ বেগম নিহত পুত্র (নুরুল কবিরের কথা বলতেই তার রেখে যাওয়া ছোট ছোট বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন।
কি করে খাবে কোথায় মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে এই ভেবে কেঁদে বার বার মূর্ছা যাচ্ছে।
মমতাজ বেগম আরো বলেন, খুনি ছোবানের স্ত্রী জোহরা বেগম এলাকায় বলে বেড়াচ্ছেন থানা পুলিশ থেকে নাকি আসামিদের বলে দিছে যে চার্জশিট না দেয়া পর্যন্ত পালিয়ে থাকতে। চার্জশিট দেয়ার পর একটা সবকিছু লাইনে চলে আসবে।
এদিকে -৪০দিনেও গ্রেফতার না হওয়ার বিষয়ে সাতকানিয়া থানার ওসি আবু মাহমুদ কাউসার বলেন,আমি আসছি থানায় নতুন বিষয়টি আমি খোঁজ লাগাচ্ছি, খুনীদের গ্রেফতারে যা যা দরকার সব করা হবে ইনশাআল্লাহ।
এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী বলেন,সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও আমি আসামিদের ধরতে পারতেছিনা, আপনারা খোঁজ পেলে একটু জানাবেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় -নুরুল কবিরের বড় ছেলের বয়স ১৪ বছর! মাত্র এই বয়সে তার স্কুলে যাওয়ার কথা এবং মাঠে খেলা করার কথা,কিন্তু তাকেও চালাতে হচ্ছে রিকশা।
আরো দু:খের বিষয় তারা তাদের মাকেও হারিয়েছে গত ৩বছর আগে এবং এই মজিদ আর তার ছেলেদের আঘাতে বাবাকে হারালো গত ৬সেপ্টেম্বর।
ছেলেমেয়ে গুলোর আগামী জীবন কেমন কাটবে মা বাবা ছাড়া আল্লাহ ভালো জানে।
প্রতিবেশী সূত্রে জানা যায়, নুরুল কবির যেদিন নিহত হলো -সেদিন রাতে নাকি চাউল না থাকায় ভাত খেতে দেরী হয়েছিল মেয়েগুলোর!
ঘটনার দিন নিহত নুরুল কবিরের রক্তমাখা শার্টে রাতের চাউল আর বাজার কেনার টাকা ছিলো মাত্র দেড়শত টাকা-
ওই দেড়শো টাকা পকেটে রেখেই তাকে কুপিয়ে লাল করে পরপারে পাঠিয়ে দেয় শহিদও মজিদরা -মাত্র ৪ ইঞ্চি জায়গার জন্য।
নিহতের ভাই নুরু আলম আক্ষেপ করে বলেন- এই শহিদ ও মজিদদের চোখে বিন্দু মাত্রও কি ভেসে আসলোনা- নিহত নুরুল কবিরকে আঘাত করলেও চিকিৎসা করা যাবেনা টাকার অভাবে!
তাদের চোখে কি একবারও ভাসেনি! নুরুল কবিরের অবিবাহিত ২টি মেয়ের কথা?
নুরুল কবিরকে হত্যার সময় মজিদদের চোখে কি একবারও আসলোনা নিহত নুরুল কবির তার ছেলেকে পড়াশোনা না করিয়ে বাজার খরচ চালানোর জন্য রিকশা দিয়ে রাস্তায় নামালো মাত্র ১৪বছর বয়সে!
নিহত নুরুল কবিরের ছেলে সেই কিশোর রিকশা চালকের নাম শেফায়েত উল্লাহ(১৪)।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, নিহত নুরুল কবিরের ছেলে শেফায়েত উল্লাহ নাকি রিকশার ভাড়া না মেরে মাঝে মাঝে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন মাদার্শা বাবুনগর বলখেলার মাঠে বলও খেলে- এদিকে রিকশার ভাড়াও পরিশোধ করতে হতো নিহত নুরুল কবিরকে।
স্থানীয়রা আরো বলেন, এখন তো আর তার বাবা(নিহত নুরুল কবির) বেঁচে নেই, রিকশার ভাড়া কি এই শেফায়েত উল্লাহ পরিশোধ করতে পারবে?
নাকি তার কিশোরবয়সী মন বল খেলার মাঠে রিকশা দাঁড় করিয়ে আবারো বল খেলবে!
বল খেললে কি তার এতিম ভাই বোনকে চালাতে পারবে?এই বয়সে রিকশার প্যাডেল মেরে কি চাউল আর তরিতরকারি কী সে কিনতে পারবে?
এসব ভেবে ভেবে তার অবিবাহিত ২টি বোন কান্নায় মূর্ছা যাচ্ছে বার বার।
তার (শেফায়েত)৬বছর বয়সী একটা ছোট ভাই ও আছে -সে কোন একটা হাফেজ খানায় নাকি পড়ে, এখন কি এই শেফায়েত উল্লাহ রিকশা চালিয়ে তার বোন বিয়ে দিবে নাকি ছোট ভাইকে কোরআনের হাফেজ বানাবে?
এদিকে তাদের তো থাকার জায়গাও নেই, সেজন্য দেওদীঘি শিশুতল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকে তারা-নিহত নুরুল কবির ৭০০টাকার টিনের বেড়ার ঘরের ভাড়া চালাতো,এখন শেফায়েত কি ভাড়া ঘরে থাকতে পারবে?তাহলে এখন শেফায়েত উল্লাহ রাতে ঘুমাবে কোথায়?
শেফায়েত উল্লাহ কি বুঝতে পারে তারও বেঁচে থাকা আর না থাকা এখন একই কথা!
আব্দুল মজিদ আর তার ছেলেরা কি জানে?নুরুল কবিরের সাথে অবুঝ ৪টা ছেলেমেয়েকেও যে পরোক্ষভাবে হত্যা করা হলো সেটা?
কারণ মজিদদের ফাঁসি আর জেল এ শেফায়েত উল্লাহদের কোন ভবিস্যৎ নেই, এই সমাজে শেফায়েত উল্লাহদের কোন আগামী নেই।
এদিকে নিহতের জেঠাতো ভাই আবছার শেফায়েতের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বল্ল, শেফায়েত তুই বাবা ক্ষমা করিস আমাদেরকে আর ক্ষমা করিস এমন সমাজকে, ক্ষমা করিস তুর মরহুম বাবাকে।