সাতকানিয়ায় :উন্নয়নের বারোটা বাজিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতাচ্ছে পিআইও এবং সহকারী জাহিদ
পুরো উপজেলার উন্নয়নের ফাইল সহকারী জাহিদের হাতেই জিম্মী
সৈয়দ আককাস উদদীন, সাতকানিয়া
গোটা দেশ ব্যাপী অস্তিরতার আড়ালে প্রশাসনের যথাযথ নজরদারির অভাবে সাতকানিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো: আলমগীর ও তার সহকারী জাহিদুল ইসলাম যেন দুর্নীতির বরপুত্র হয়ে উঠেছেন পুরো চট্টগ্রাম জেলায়।
পিআইও’র’পক্ষে জাহিদুল ইসলাম সাতকানিয়ার প্রতিটি প্রকল্প থেকে ঘুষ নিলেও সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকছেন পিআইও মো: আলমগীর এবং সহকারি জাহিদ।
সাতকানিয়া উপজেলার ইউনিয়নগুলোর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর তদারকি করেন মো’আলমগীর, কিন্তু অফিসে বসে সকল ফাইল প্রসেসিং ও লেনদেনের দায়িত্ব সহকারী জাহিদুল ইসলামের।
অভিযোগ উঠেছে, এ তদারকির সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা ২জনেই প্রতিটি প্রকল্প থেকে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা।
টিআর, কাবিখা, কাবিটা, অতি দরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থানসহ সকল প্রকল্প থেকেই অফিস খরচ বাবদ মোটা অংকের টাকা আদায় করে নেন পিআইও’র পক্ষে সহকারী জাহিদ।
বর্তমান পিআইও নতুন হলেও অফিস সহকারী জাহিদ নতুন না হওয়ায় অফিসের মূল নিয়ন্ত্রন তার হাতেই বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা ও উপজেলার অনেক সরকারি কর্মচারী।
জনপ্রতিনিধিরা জানান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা(পিআইও) ও জাহিদ প্রতি প্রকল্প থেকে অফিস খরচের নামে টাকা নেন।
ফলে উন্নয়ন কাজ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। তবে, এসব প্রকল্প থেকে ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি পিআইও আলমগীর এবং বক্তব্য দিতেও নারাজ।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো:আলমগীরকে তার এবং পূর্ববর্তী পিআইও এর অধীনে বাস্তবায়ন করা প্রকল্পের কয়েকটি ইউনিয়নের কিছু তথ্য চাইলে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাহানা দেন।
পরে একই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার মাহমুদুল হাসানকে কল করা হলে তিনি তথ্যের জন্য বলে দিলেও পরে পিআইও মো:আলমগীর আর কল রিসিভ করেননি ও তথ্য চেয়ে টেক্সট দিলেও কোন সদুত্তর দেয়নি।
তার এমন আচরণে শতভাগ স্পষ্ট যে সে এবং তার অফিস সহকারী দূর্নীতি করলেও কারো কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়।
সম্প্রতি সাতকানিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিশেষ করে সোনাকানিয়ার বিভিন্ন স্পটে টিআর, কাবিটা, কাবিখা, কর্মসূচিসহ একাধিক প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে- অধিকাংশ প্রকল্পেই পূর্ণাঙ্গ কাজ করা হয়নি।
আংশিকভাবে কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে। তবে টাকা পুরো কিস্তিই পেমেন্ট করেছেন পিআইওকে ম্যানেজ করে এই সহকারি জাহিদ।
এসব প্রকল্পের কিছু প্রকল্প সভাপতিরা নাম প্রকাশে জানান, পিআইও অফিস থেকে বরাদ্দের টাকার ১২ থেকে ১৫ শতাংশ টাকা অফিস খরচের নামে অফিসারের পক্ষে জাহিদের মাধ্যমে দিতে হয়।
এ ছাড়া মাস্টাররোলেও এই জাহিদ নেন আলদা টাকা খরচ করতে হয়। অনেক সময় মসজিদ, মন্দির, মাদরাসার বরাদ্দেও ছাড় দিতে চায় না এই জাহিদ।
সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের একাধিক প্রকল্প সভাপতির সঙ্গে কথা বলেছেন এ প্রতিবেদক-
এসব প্রকল্প সভাপতিরা সবাই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও প্রকল্প সভাপতি বলেন, ‘পিআইওর এবং কর্মচারী জাহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার সাহস কারো নেই।
কারণ পিআইও অফিসে এখন ঘুষ বাণিজ্য প্রকাশ্যে হচ্ছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন জানে প্রতিটি প্রকল্প থেকে অফিস খরচের নামে পিআইওর সহকারী জাহিদ অফিস খরচের টাকা নেয়।
পিআইওসহ তার অফিসের সবাই এ ঘুষ-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। যেখানে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নেন না, সেখানে আমাদের মতো ইউপি সদস্যরা অভিযোগ করে বিপাকে পড়তে যাবেন কেন?’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাতকানিয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আলমগীর বলেন, ‘আমি ইউএনও স্যারের অনুমতি ব্যতিত কোনো মন্তব্য করতে বা ডকুমেন্টস দিতে পারব না।’
উপজেলা নির্বাহী খোন্দকার মাহমুদুল হাসান বলেন আমি বলে দিচ্ছি তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবে।
সোনাকানিয়ার ৬নং ওয়ার্ডের একটি রাস্তা ২লাখ ৪৯হাজার টাকার বিনিময়ে ৪৪০ফুট করার কথা থাকলেও একই রাস্তা জাহিদুল ইসলামের মাধ্যমে ২বার পাশ করিয়ে কাজ না করে ২বারই টাকা পেমেন্ট দিয়েছে পিআইও কর্মকর্তা ও সহকারী জাহিদ,সরেজমিনে গেলে ওই রাস্তা ২বার পাশ হয়েও এখনো ৪০০ফুটও বাস্তবায়ন হয়নি।
এদিকে সোনাকানিয়ার এক ইউপি সদস্য বিন্দুমাত্রও কাজ না করে কাজের বাস্তবায়িত ছবি না দিয়ে শুধু মাত্র পিআইও অফিসের সহকারী মি:জাহিদকে ম্যানেজ করে টাকা উত্তোলন করে চলে যায়।
পরে অবশ্যই ওই ইউপি সদস্যকে জাহিদ কয়েক শতবার কল দিয়েও রাস্তা এবং কাজের বাস্তবচিত্র খুঁজে পায়নি।
এই বিষয়ে জাহিদকে কল করা হলে জাহিদ বিস্তারিত জানেননা বলেন এবং তিনি ফিল্ডে যাননা ও শুধু অফিসে কাজ করে বলেও জানান।
এদিকে একটি ব্রিজে দূর্নীতি করার জন্য সরাসরি বার বার ভিজিটে গেছেন বলেও জানান সোনাকানিয়ার আনিস।
প্রতিবেদককে উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে আগের পিআইও ও সহকারী জাহিদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ করেছেন।
পরে তাকে (জাহিদকে) হোয়াটসএ্যাপে একটি টেক্সট দেয় প্রতিবেদক নিজেই-যা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো – ব্রো সোনাকানিয়ার ৯নং ওয়ার্ডের এহেছান মেম্বারকে কি পাওয়া গেছে?
সে রাস্তার কাজ কমপ্লিট বলে আপনাকে ছবি দিবে বলিয়া টাকা উত্তোলন করে আর আপনার কল ধরতেছেনা যে ওই রাস্তার কি অবস্থা
কোন কাজ না করে মাস্টার রোলে আপনার মাধ্যমে কাজের পিকচার ছাড়া এবং বাস্তবায়ন করছে কিনা সেটাও না দেখে টাকা কেমনে দিলেন?
সে তো এখন আপনার ভয়ে নাকি উপজেলায়ও যাচ্ছেনা।
এটা দেখার পরেও কোন রিপ্লাই দেয়নি দূর্নীতিবাজ সহকারী এই জাহিদ।
সোনাকানিয়ার একাধিক ব্যক্তি প্রতিবেদককে বলেন, ইউপি সদস্যসহ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিলেমিশে সহকারী জাহিদকে হাতে নিয়ে এই দূর্নীতিমূলক কাজকাম করে থাকেন।
এখানে প্রতিটা কাজে ইউপি সদস্য এবং জাহিদ যেমন জড়িত তেমনি দায় এড়াতে পারেননা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহিউদ্দিনও।
চলমান পর্ব-০১