সাতকানিয়ায় :গভীর রাতে নয় মাগরীবের সময়ও চলে ডাকাতি, নির্বাসনে গেল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে  ব্যবসায়ির ঘরে দুর্ধর্ষ ডাকাতি

 

এহেছানুল ছগীর রুবেল ও সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এক ব্যবসায়ি ও পরিবেশ কর্মীর ঘরে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা  সংঘটিত হয়েছে। এতে ডাকাত দল স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান কাগজপত্রসহ ১৮ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটে নেয় বলে ডাকাত কবলিত পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

বুধবার (১৫অক্টোবর) গভীর রাত ৩ টার দিকে উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের নিকটে জনার কেঁওচিয়া আধার মানিক দরগাহ সংলগ্ন ব্যবসায়ি ও পরিবেশ কর্মী হোছাইন মোহাম্মদ এহেসান এর বসত ঘরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায়  ব্যবসায়ীর ২১ বছর বয়সী ভাগিনা এমরান বিন মুসা ডাকাতদের মারধরে আহত হয়েছেন। তাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে ডাকাত দল ফাঁকা গুলি গুলি ছুড়তে ছুড়তে মাইক্রোবাস নিয়ে পালিয়ে যায়।

ব্যবসায়ী ও পরিবেশ কর্মী হোছাইন মোহাম্মদ এহেসান বলেন, ব্যবসার কাজে আমি চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করি। মাঝে মাঝে ঘরে যাই। বুধবার গভীর রাত তিনটার দিকে ৭-৮ জনের মুখোশ পরিহিত ডাকাতদল প্রথমে বাড়ির বাউন্ডারি ওয়াল টপকিয়ে জানালার গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে। পরে প্রধান ফটকের তালা কেটে মূল ঘরে থাকা আমার মা, বোন ও ভাগ্নে-ভাগ্নিদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আলমারির চাবি কেড়ে নেয়। এসময় আলমারিতে রক্ষিত ৮ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ এক লাখ ১৫ হাজার টাকা, পাঁচটি মোবাইল ফোন,  কয়েকটি চেক বই ও মূল্যবান কাগজপত্রসহ ১৮ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটে নেয় ডাকাত দল। এ সময় ডাকাতিতে বাধা দিতে গেলে আমার ভাগ্নেকে মারধর করে আহত করে ডাকাত দলের সদস্যরা।

হোছাইন মোহাম্মদ এহেসান আরও বলেন,

ঘরের কাছে ইছাপুকুর মসজিদের সামনে রাখা ডাকাতদের বহন করা মাইক্রোবাসের সাথে আরও ১২ জনের মত ডাকাত দাঁড়িয়ে ছিল। পরে ডাকাতির খবর পেয়ে এলাকার লোকজন এগিয়ে আসলে সব ডাকাত ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে  মাইক্রোবাস নিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার দিয়ে উত্তর দিকে পালিয়ে যায়।

ডাকাতি সংগঠিত হওয়ার পেছনে কোন কারণ আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি বিগত সময়ে ইট ভাটায় দেওয়ার জন্য ফসলি জমি থেকে মাটি কাটতে নিষেধ করায় কিছু ইট ভাটার মালিক ও মাটি ব্যবসায়ী আমার উপর ক্ষিপ্ত থাকতে পারে। ধারণা করছি-তাদের কোন হাত রয়েছে। আমি এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

স্থানীয় বাসিন্দা মো.ফরিদ উদ্দিন বলেন, এহেসান এর ঘরে যখন ডাকাত দল গ্রিল কাটছিল তখন তাঁর (এহেসান) ভাগ্নে এমরান আমাকে মোবাইলে ফোন করে বিষয়টি জানালে আমি তাৎক্ষণিক মোবাইল ফোনে পাড়ার লোকদের ডাকাতির কথা জানাই। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে পাড়ার লোকজন ঘুম থেকে উঠে ডাকাত ডাকাত চিৎকার করলে তারা (ডাকাত) ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে মাইক্রোবাস নিয়ে পালিয়ে যায়।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার  (সাতকানিয়া সার্কেল) আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী ডাকাতি সংগঠিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ডাকাত কবলিত পরিবারের সদস্যের সাথে আলাপকালে জেনেছি-ডাকাতরা হাফ জিন্স প্যান্ট, মুখোশ  ও টি শার্ট পরিহিত অবস্থায় ছিল। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কিছু স্বর্ণালংকার ও টাকা লুটে নিয়েছে। আমি তাদের থানায় অভিযোগ দিতে বলেছি। এছাড়া এ বিষয়ে অপরাধীদের ধরতে ইতোমধ্যে পুলিশও কাজ শুরু করেছে।

এদিকে গেল সপ্তাহে উপজেলার ছদাহার একটি গরুর খামারে অস্ত্র নিয়ে লুটের সময় পাহারাদারকে ছুরিকাঘাত করে ডাকাতদল। শুধু তাই নয় গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার সময় বাজালিয়ার বড়দুয়ারা এলাকায়ও ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

বাজালিয়া বড় দুয়ারার বিষয়ে সাতকানিয়া থানার ওসি আবু মাহমুদ কাওসার হোসেন বলেন বাজালিয়ার ডাকাতিটা তো এখনো কেউ অভিযোগ করেনি।

এদিকে সচেতন মহল জানিয়েছেন, ডাকাতি কখন কার বাড়িতে ঘটে তার কোন সুনির্দিষ্ট কারণ বলা যাচ্ছেনা।

পুরো সাতকানিয়াবাসীই এখন অজানা কারণে আতংকিত।

আজ পর্যন্ত ডাকাতি /চুরি করে গেছে পরবর্তীতে পুলিশ নিজ থেকে কেন চোর কিংবা ডাকাত গ্রেফতার করছে তার কোন নজির অন্তত ২০২৪সালের ৫ই আগস্ট পরিবর্তিত পরিস্থিতির সময়ে আমরা দেখিনি।

সচেতন মহল আরো বলেন,এক কথায় সাতকানিয়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক নেই যেন নির্বাসনে গেছে।

 

এদিকে সাতকানিয়ার প্রবীন সাংবাদিক বাংলা টিভির প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম বলেন,সাতকানিয়ায় আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে।

 

 

 

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.