আ. লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির কি যাচ্ছেন জামায়াতে?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ছবিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনা ও গুঞ্জন!
নিজস্ব প্রতিবেদক :
উখিয়ার রাজনীতিতে তোলপাড়—আওয়ামী লীগের শীর্ষ প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর জামায়াতে ইসলামীতে যোগদানের গুঞ্জনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবি ও সংশ্লিষ্ট পোস্টকে ঘিরে এখন চায়ের দোকান থেকে রাজনৈতিক অঙ্গন—সবখানেই চলছে গরম আলোচনা।
ফেইসবুকজুড়ে ভাইরাল সেই ছবিতে দেখা যায়, স্থানীয় জামায়াত নেতা নূর মোহাম্মদ সিকদারের সঙ্গে জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর ঘনিষ্ঠতা ও বায়াত করানোর দৃশ্য। মুহূর্তেই ছবিটি রাজনৈতিক মহলে সাড়া ফেলে দেয়। কেউ বলছেন—এটি উখিয়ার রাজনীতিতে “বড় অঘটন”, কেউ দেখছেন “রাজনৈতিক কৌশল” বা “সময়ের সঙ্গে অবস্থান বদল” হিসেবে।
উখিয়ার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃত্ব যখন নানা অন্তর্দ্বন্দ্বে জর্জরিত, ঠিক সেই সময় উপজেলা সভাপতি জাহাঙ্গীর কবিরের জামায়াতে যোগদানের খবর নতুন ধাক্কা হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ, তিনি শুধু আওয়ামী লীগের সভাপতি নন—তিনি সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির শ্যালক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহিন আক্তারের ভাইও। একসময় উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলে ব্যাপক পরিচিতি পান। এমন একজন ব্যক্তিত্বের দলবদলের সম্ভাবনা আওয়ামী লীগের ভেতরে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় সূত্র বলছে, আলোচিত-সমালোচিত জামায়াত নেতা নূর মোহাম্মদ সিকদারের ঘনিষ্ঠজনরাই প্রথম এই খবর ফেইসবুকে ছড়ান। তাদের দাবি, “ নুর মোহাম্মদ সিকদারের সাথে জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ও রাজনৈতিক আস্থার জায়গা থেকে” জাহাঙ্গীর কবির জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন! তবে এসব দাবির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে প্রভাবশালী জামায়াত নেতা নূর মোহাম্মদ সিকদার বিষয়টি অস্বীকার করেন, এবং অপপ্রচার ও তার ভাবমূর্তি নষ্টের অপচেষ্টা বলে দাবি করেন।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বিষয়টি নিয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলতে নারাজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নেতা বলেন, “জাহাঙ্গীর ভাই স্বাধীনতা বিরোধী দলের সঙ্গে যাবেন, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। তবে এখন যে খবর ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে, তাতে আমরা অস্বস্তিতে আছি। এটা যদি সত্য হয়, তাহলে উখিয়ার রাজনীতি পুরো পাল্টে যাবে।”
অন্যদিকে রাজনৈতিক মহলে আলোচনায় এসেছে বির্তকিত জামায়াত নেতা নূর মোহাম্মদ সিকদারের নামও। একসময় আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ বছর ধরে তিনি সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী এবং বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর পারিবারিক ও রাজনৈতিক উপদেষ্টার পাশাপাশি প্রেস সচিব হিসেবে কাজ করেছেন। এমনকি শেখ হাসিনার সরকারের সময়েও তিনি বিভিন্নভাবে সুবিধাভোগ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই নূর মোহাম্মদ সিকদারের হাত ধরেই জাহাঙ্গীর কবিরের জামায়াতে যোগদানের গুঞ্জন ছড়িয়েছে জামায়াত নেতারা—এমন দাবি করছেন আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র। তাদের মতে, “এটি হয়তো জামায়াতের নতুন রাজনৈতিক প্রজেক্ট—প্রভাবশালী স্থানীয় নেতাদের দলে টেনে নেওয়ার পরিকল্পনা।”
জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীকে ঘিরে বিতর্কও নতুন নয়। তার বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজায় বাধা দেওয়া, জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্রজনতার ওপর হামলা, এবং উখিয়া-কক্সবাজারে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া একাধিক মামলায় তার নামও উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনে নিহত বিএনপি নেতা জাকির হত্যা মামলার প্রধান আসামি হিসেবেও তার নাম ওঠে আসে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি এই গুঞ্জন সত্যি হয়, তবে এটি শুধু আওয়ামী লীগ নয়, উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলের রাজনীতিতেও এক বিরাট মোড় আনবে। কারণ, জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর মতো প্রভাবশালী নেতা জামায়াতে যোগ দিলে স্থানীয় নেতৃত্বের ভারসাম্য বদলে যেতে পারে।
উখিয়ার রাজনীতি এখন উত্তপ্ত। কে কোন দিকে যাচ্ছেন, আর কে অবস্থান বদলাচ্ছেন—তা নিয়ে চলছে গোপন বৈঠক ও কানাঘুষা। কেউ বলছেন, “এটা নিছক গুজব।” আবার কেউ ফিসফিস করে বলছেন, “রাজনীতিতে গুজবেরও তো কোনো জন্ম হয় না।”
সময়ই বলবে—এ গুঞ্জনের পেছনে সত্য আছে কিনা, নাকি এটি উখিয়ার রাজনীতিতে নতুন এক ঝড় তোলার পূর্বাভাস মাত্র।