দোহাজারী বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের ট্রান্সফরমার চুরিতে জড়িত খোদ কর্তৃপক্ষ 

চোরের সিন্ডিকেট পরিচালিত হয় আবাসিক প্রকৌশলীর নেতৃত্বে-

সৈয়দ আককাস উদদীন, সাতকানিয়া 

চট্টগ্রাম সাতকানিয়ার কালিয়াইশ ইউনিয়নের দোহাজারী  বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় কেন্দ্রে প্রকাশ্যেই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, আবাসিক প্রকৌশলী মেহেদী হাসানের  নেতৃত্বে পিডিবি অফিসে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী চোর  সিন্ডিকেট।

শনিবার (১৮ই অক্টোবর) রাতে দৈনিক সকালের সময়ের হাতে দোহাজারী বিদ্যৎ ও বিপণন কেন্দ্রের  খোদ আবাসিক প্রকৌশলী মেহেদী হাসানের অধীনে কাজ করা লাইনম্যান জামাল ও কায়সার একটি ট্রান্সফরমার চুরি করে প্লেটসহ খুলে সাজিয়ে সাজিয়ে বস্তা ভরে নিয়ে যাওয়ার পৃথক পৃথক ফুটেজের একটি ১৫মিনিটের চুরির লাইভ দৃশ্য হাতে এসেছে।

ভিডিও পর্যালোচনায় দেখা যায়,  দোহাজারী আবাসিক বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের কর্মরত লাইনম্যান জামাল ও কায়সার ২৫০ কেভিএ( kvA) একটি বড়  ট্রান্সফরমার দোহাজারী পিডিবির পূর্বে অর্থাৎ রাজমহল ক্লাবের সোজা ১০০০বর্গফুটের পূর্বে হিন্দু পাড়ার আগে, ওয়াপদার এর রাস্তার পার্শ্বে একটি বসতভিটার ওঠোনে ট্রান্সফরমারটি রেখে জামাল ও কায়সারসহ মোট ৫জনে মিলে- বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে প্রথমে ট্রান্সফরমারটির প্লেটগুলি খুলে এবং প্লেট গুলি খুলতে তাদের প্রায় ১০মিনিট সময় লাগে।

পরে প্লেটগুলি খুলে পাটের ৩টি বস্তায় ওগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে সাজিয়ে ঢুকিয়ে ফেলার পর আরেটি দৃশ্যে ট্রান্সফরমারটির নিচে কয়েল খোলার চেষ্টা চালায় অফিসিয়াল এই চোর সিন্ডিকেট।

চেষ্টা চালাতে চালাতে লাইনম্যান জামাল ও কায়সার ক্লান্ত হলে কোমরে হাতদিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করতেও দেখা যায়।
পাশে মাঝবয়সী একজন লোক তাদেরকে সাহায্য করতেও দেখা যায়।

যাদের বসতভিটায় ওই ট্রান্সফরমারটি প্রসেসিং করে খুলে খুলে বস্তায় ঢুকাচ্ছে ওই বাড়ির ছোট ছোট শিশুদেরও বিষয়টি পরিলক্ষিত করতে দেখা যাচ্ছে একই ফুটেজে।

জানা যায়,   দোহাজারী আবাসিক বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের কর্তৃপক্ষের  লাইনম্যান কায়সার ও জামালের বাড়ি দোহাজারী এলাকায় হওয়ায় আবাসিক প্রকৌশলী ( আরই) বদলালেও বহাল থাকে তাদের দাপট -সেই সুবাদে তাদের কন্ট্রোলে থাকে দোহাজারীতে আসা সকল আবাসিক প্রকৌশলী।

এক্ষেত্রে স্থানীয়রা জানান,  আবাসিক প্রকৌশলী মেহেদী হাসানসহ মিলে এই চুরি কাজটি করেছেন তাই কিছুদিন পর মেহেদী ইসলামের নেতৃত্বে  চুরিতে অংশ নেয়া লাইনম্যান দুজনকে সেফ করার জন্য তিনি নিজেই অন্যত্রে বদলী করে দেন।

এবং মেহেদী হাসান জড়িত বিধায় এতবড় চুরির বিষয়ে চুপ থেকে লাইনম্যানদের বিরুদ্ধে কোনরকম মামলা মোকদ্দমা ও জিডি পর্যন্ত করেননি।

এদিকে ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়ে দোহাজারী আবাসিক বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন-আমি তাদেরকে বদলী করেছি দেড় দুমাস হচ্ছে- তখন প্রতিবেদক বলেন ২মাস আগের চুরির বিষয়ে আপনি কোন ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে? তিনি সদুত্তর না দিয়ে বলেন আমি নিজেও তো এসেছি মাত্র ২/৩মাস হচ্ছে।
তখন তিনি অপরপ্রান্তে  প্রতিবেদককে বলেন আচ্ছা আপনি ফুটেজ গুলি দিয়েন তো!

এদিকে প্রতিবেদক আবাসিক প্রকৌশলীকে পাল্টা প্রশ্ন করেন-আপনাদের কোন ট্রান্সফরমার নষ্ট হলে চট্টগ্রাম  মনসুরাবাদ ব্যতিত কোন লাইনম্যান হাত দেয়ার তো অনুমতি নেই, তখন তিনি বিষয়টি অকপটে স্বীকারও করেন হ্যা হাত দেয়ার নিয়ম নেই সেটা সঠিক।

তিনি আরো বলেন আর মনসুরাবাদেও ট্রান্সফরমারের কয়েল খুলে ঠিক(মেরামত) করা হয় প্লেট খুলে ফেলা হয়না কখনো।

এই প্রতিবেদক মেহেদী হাসানকে আরো প্রশ্ন করেন,টোটাল ট্রান্সফরমারের অফিসিয়াল হিসাব থাকে কিনা?তখন তিনি বলেন অবশ্যই থাকে।

তাহলে আপনার পিরিয়ডে একটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে গেল এবং অফিসিয়াল  হিসাব থেকে কমে গেল আপনার হিসাবে ধরা খেলে আপনি ব্যবস্থা নেননি কেন?

তখন তিনি অবশ্যই এই প্রশ্নে চুপ ছিলেন।

এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগের    পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী  মো: হুমায়ুন কবিরকে চুরির ৮মিনিটের পৃথক ২টি ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপ এ পাঠিয়ে  বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি নিজেই ফোন ব্যাক করে বিষয়টির আদ্যোপান্ত  আলাপ করেন এবং  অভিযুক্ত জামাল ও কায়সারদের বদলী করা হয়েছে বলে জানান।

এবং এই চুরির বিষয়ে লাইনম্যানরা  বদলী হলেও কোন ছাড় নেই বলে জানান,এবং  এই বিষয়ে দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে আবাসিক প্রকৌশলী মেহেদী হাসানের বিষয়েও ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।

এবং মেহেদী হাসান যে দোহাজারী আবাসিক বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের যোগদানের ৩মাসের বিষয়টি মিথ্যা বলেও জানান এবং মেহেদী ইসলাম দোহাজারী আবাসিক বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগে যোগদানের সময়কাল ১বছর হচ্ছে সেটাও জানান।

ওই কেন্দ্রে বিভিন্ন অনিয়মে বেশকয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি।

এদিকে স্থানীয় সেবাপ্রত্যাশীদের আবাসিক প্রকৌশলী মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে  আরও অভিযোগ, এখানে বিদ্যুৎ এর নতুন সংযোগ, ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক খুঁটি, লাইন অপসারণ, মিটার বিকল, মিটার পরিবর্তন, লোড বৃদ্ধিসহ মাটি ব্যবসায়ীদের সুবিধার্তে পানি সেচসহ   বিভিন্ন সেবায় গ্রাহক ভোগান্তি চরম আকারে পৌঁছেছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নির্ধারিত ফি জমা দিয়েও ঘুষ না দিলে গ্রাহকদের দিনের পর দিন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এ যেন পিডিবি বিদ্যুৎ অফিস আর ঘুষ একাকার!

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.