মিতু হত্যায় ওয়াসিম-আনোয়ার শ্যোন অ্যারেস্ট!

নিজস্ব প্রতিবেদক :  চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা দুই আসামি ওয়াসিম ও আনোয়ারকে নুতন মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট করা হয়েছে। এদের মধ্যে ওয়াসিম মিতুকে সরাসরি গুলি করেছিলেন।

আজ রবিবার দুপুরে পিবিআইয়ের শুনানি শেষে এই আদেশ দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহান ।

বর্তমানে বাবুল আক্তার ও সাইদুল ইসলাম সাকু মিতুর বাবার দায়ের করা মামলায় রিমান্ডে আছেন আর আগে থেকেই কারাগারে আছেন ওয়াসিম ও আনোয়ার। তবে এখনও পলাতক অস্ত্র সরবরাহকারী ভোলা, নেতৃত্বদাতা মুছা, কালু ও শাহজাহান। এদের গ্রেপ্তারে পিবিআই অভিযান চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিষয়টি সিভয়েসকে নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক (ম্রেট্রো) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘এই মামলায় চারজন এখন গ্রেপ্তার আছে। বাকী চারজন পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

গত ১২ মে মিতুর বাবার করা মামলায় বাবুল আক্তার ছাড়াও মামলার অপর আসামিরা হলেন, কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসা, এহতেসামুল হক ভোলা, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, খায়রুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম সিকদার, শাহজাহান মিয়া। এদের মধ্যে ওয়াসিম ও আনোয়ার আগে থেকেই জেলে। সাকুকে ওই দিন রাতে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে এবং বাবুল আগে থেকেই পিবিআইয়ের হেফাজতে ছিল। এদের মধ্যে মুছাকে ২০১৬ সালের ২২ জুন ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ থাকলেও পুলিশ তা অস্বীকার করেছে বারবার। অন্যদিকে শুরু থেকে কালু অধরা। এছাড়া ভোলা ও শাহাজাহান জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক রয়েছেন।

১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ের প্রকাশ্য সড়কে গুলিতে ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা আক্তার মিতু। ওই দিন রাতে তার স্বামী তৎকালীন পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত এসপি বাবুল আক্তার বাদি হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেন। অনেকবার আলোচিত এ মামলার চার্জশিট দেওয়ার গুঞ্জন শোনা গেলেও কোন অগ্রগতি ছিল না। বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফ অব্যাহতভাবে হত্যাকাণ্ডের জন্য বাবুল আক্তারকে দায়ী করতে থাকেন। তবে পুলিশের তরফ থেকে কখনোই এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি এতোদিন। গোয়েন্দা পুলিশ এরআগেও বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। শুরু থেকে চট্টগ্রামের ডিবি পুলিশ মামলাটির তদন্ত করে। তারা প্রায় তিন বছর তদন্ত করেও অভিযোগপত্র দিতে ব্যর্থ হয়। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার পিবিআইকে দেয়।

গত মঙ্গলবার (১১ মে) দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ হত্যা মামলায় সম্পৃক্ততা মেলায় বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে আইনিভাবে বাদিকে গ্রেপ্তারের সুযোগ না থাকায় আদালতে তাকে হাজির করার পর তার পিতার মোশাররফ হোসেনের করা নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। একই সাথে বাবুলের করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়।

স্ত্রী মিতুকে হত্যা করতে ভাড়াটে খুনিদের তিন লাখ টাকায় কিংলিং মিশনের চুক্তি করেন তারই স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। এ কিলিং মিশনে নেতৃত্ব দেন তারই ঘনিষ্ট সোর্স মুছা। আর চুক্তির তিন লাখ টাকা বাবুলের নিকটাত্মীয় সাইফুলের মাধ্যমে মুছার এক আত্মীয়ের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। মূলত উন্নয়নকর্মী গায়ত্রী সিংয়ের সঙ্গে বাবুলের প্রেমের বিরোধ থেকেই স্ত্রীকে মিতুকে সরিয়ে দিতে এ কিলিং মিশন বলে তদন্তে উঠে আসে।

হত্যাকাণ্ডের পর জানা গেছিল, প্রতিদিন সকালে একজন কনস্টেবল এসে বাবুল আক্তারের ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যেত। এরপর ছোট মেয়েকে নিয়ে বাসার কাছের একটি স্কুলে যেতেন মিতু। কিন্তু ঘটনার দিন সকালে কোনো কনস্টেবল না আসায় মিতু নিজেই ছেলেকে নিয়ে বের হয়েছিলেন। বাসার কাছেই জিইসি মোড়ের আগেই ৫ জুন মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে হত্যা করে মোটর সাইকেলে চলে যায় খুনিরা। এরপর ২৬ জুন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তৎকালীন কমিশনার ইকবাল বাহার সংবাদ সম্মেলন করে মিতু হত্যায় সরাসরি জড়িত ওয়াসিম এবং আনোয়ারকে গ্রেপ্তারের খবর দেন। তারা একই দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে বলেছিলেন, মুছার পরিকল্পনাতেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।

জবানবন্দিতে ওয়াসিম আরও বলেছিলেন, নবী, কালু, মুছা ও তিনি সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন এবং এদের মধ্যে নবী ও কালু মিতুকে ছুরিকাঘাত করেন। আর শাহাজাহান ঘটনাস্থলের অদূরে একটি হোটেলের নিচে অবস্থান নিয়ে পর্যবেক্ষণে ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের সময় মোটরসাইকেল আরোহী তিনজনের মধ্যে একজন হলেন ওয়াসিম এবং তিনিই শ্যুট (গুলি) করেছেন। আনোয়ার ঘটনাস্থলে রেকি করার জন্য যে কয়েকজন দাঁড়িয়েছিল তাদের একজন।

 

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.