ফারহানা-জেসমিন নাটক মঞ্চস্থ করে আলোচনায় সাতকানিয়া শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ চিরাণ

 

সৈয়দ আক্কাস উদদীন 

সাতকানিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশীষ চিরানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে এসব অভিযোগ লিখিতভাবে জানানো হয়।

শুধুমাত্র সাতকানিয়া উপজেলার জনার কেঁওচিয়া প্রাথমিক কমিউনিটি বিদ্যালয়কে সরকারিকরণের সময় ১০ লাখ টাকার লেনদেনের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, সরকার ঘোষিত কমিউনিটি বিদ্যালয়কে সরকার এমপিওভুক্ত করার নির্দেশনা দেয়। সাতকানিয়া উপজেলার কেওঁচিয়া ইউনিয়নের জনার কেওঁচিয়ার কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ উপজেলার কয়েকটি বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়।

অভিযোগ উঠেছে, ওই কমিউনিটি বিদ্যালয়ে শুরু থেকেই স্কুল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউসুফের স্ত্রী জেসমিন আক্তার নকল সার্টিফিকেট ব্যবহার করে এবং ফারহানা ইয়াসমিন নামের এক মহিলার এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সনদ ব্যবহার করে চাকুরী করে আসছিলেন। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি অবৈধ উপায়ে এই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এদিকে সম্প্রতি আকস্মিক পরিদর্শনে যান সাতকানিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশীষ চিরাণ।

তিনি পরিদর্শনে গিয়ে ফারহানা ইয়াসমিনকে বলেন, ‘আপনি ভূয়া নাম আর আরেকজনের সনদ ব্যবহার করে দীর্ঘ এতবছর চাকরি করে আসছেন। তাই আপনি পদত্যাগ করেন। আর না হয় বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরেকজনের সনদ ব্যবহার করে জেসমিন আক্তার এতদিন ফারহানা ইয়াসমিনের নাম ব্যবহার করে আসছিল। জেসমিন আক্তার পারিবারিক কারণ দেখিয়ে ২০১৮ সালের জানুয়ারীতে পদত্যাগ পত্র জমা দেন উপজেলা শিক্ষা অফিসে।

সেই সময় একজনের সার্টিফিকেট আরেকজনে ব্যবহার করে এবং নাম পরিবর্তন করে ভুয়া শিক্ষিকা প্রমাণ করতে পারায় সাতকানিয়া জুড়ে প্রশংসা কুড়িঁয়েছিলেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার আশীষ চীরাণ।

কিন্তু পরবর্তীতে পদত্যাগে বাধ্য করা ভূয়া শিক্ষিকাকে অফিসে ডেকে আনেন আশীষ চিরাণ। এ সময় কার সনদ তিনি ব্যবহার করে আসছিলেন তা জানতে চান জেসমিন আক্তারের কাছ থেকে। তখন তদন্তে প্রমানিত সেই ভূয়া মহিলা শিক্ষক স্বীকার করেন বলেন, ‘এটা তার আপন বড় ভাইয়ে স্ত্রী ফারহানা ইয়াসমিনের সনদ। তিনি চাকরি করতে অনিচ্ছুক। তাই তার সনদ তিনি ব্যবহার করে আসছিলেন। তখন সনদ ব্যবহার করতে দিয়ে এতদিন চাকরির সুযোগ দেওয়া এবং নিজের নাম পরিবর্তন করে আরেকজনের নাম ধারনের অপরাধে দুজনের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। তাদের শাস্তি না দিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ চিরাণ উল্টো ভুয়া শিক্ষিকা জেসমিনের ভাবী ফারহানাকে ডেকে পরামর্শ দেন, ‘আপনাকে আমরা সরকারিকরণ করব। এই ভূয়া শিক্ষিকার অসুস্থতাজনিত পদত্যাগ পত্রটি আপনার বলে আপনি হাইকোর্টে একটা মামলা করেন। যেখানে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হবে। কিন্তু আমার অফিস মামলায় হাজিরা বা আপত্তি জানাবে না।

তখন আপনি একদিনের জন্য চাকরি না করলেও আপনিই সরকারিকরণে অন্তর্ভূক্ত হবেন।’ অভিযোগ রয়েছে, আসলকে নকল আর নকলকে আসল বানানোর জন্য টাকা লেনদেন হয়েছে ১০লাখ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সেই শিক্ষিকা ভুয়া প্রমাণিত হলেও সরকারি বেতনভাতা নিয়েছেন দীর্ঘ ৫ বছর! তবে তাকে শাস্তি না দিয়ে উল্টো জালিয়াতির মাধ্যমে দুইজন মহিলাকে আশীষ চিরাণ বানালেন একজন!হাইকোর্টকেও এখনো জানতে দিলেননা আসলেই এখানে পদ একটি, অথচ মানুষ ছিল দুইজন।

বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, যে অফিসারের তদন্তের উঠে আসে, যার দেওয়া সনদের মাধ্যমে চাকরি করে জেসমিন ভূয়া শিক্ষক প্রমাণিত হয়, সেই মহিলাকে কিভাবে আবার হাইকোর্টে মামলার সুযোগ দিয়ে উল্টো একদিনের জন্য চাকরি না করা মহিলাকে সরকারিকরণ করেছে সে অফিসার?

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের সাথে ‘চুক্তি’ করে বকেয়া বেতন উত্তোলন করে অর্ধেক হিসাবরক্ষন অফিস আর প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নেওয়ার দর কষাকষিও চলছে।

এদিকে ভুয়া সনদ ব্যবহার করে নকল শিক্ষকের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে সাতকানিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশীষ চিরাণ চট্টগ্রাম সংবাদকে বলেন, ‘আসলে আমার তদন্তে ভুয়া প্রমান হয়েছে এটা সত্য। এবং এই ভূয়ার বিষয়ে আমি জেলা শিক্ষা অফিসকেও জানিয়েছি, কিন্তু একদিনের জন্য ও চাকরি না করা যেই ফারহানা ইয়াসমিন কি কারণে বা কার পরামর্শে মাননীয় হাইকোর্টে গিয়ে একটি মামলা করে আদেশ হাসিল করেছেন তা আমার বোধগম্য নয়।’

আপনি তো সেই মামলার বিবাদী তাহলে আপনি আদালতকে অবহিত করেননি কেন এবং আপনার তদন্তে যে সেই ভূয়া প্রমানিত হয়ে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলো সেই ডকুমেন্টস আদালতকে জানাননি কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে আশীষ চিরাণ বলেন, ‘আসলে মামলা কখন হয়েছে আমি জানিনা এবং সমনও পায়নি। তাই একদিনের জন্য ও চাকরি না করা সেই ফারহানা ইয়াসমিন হাইকোর্টকে ভূল রিপোর্ট প্রদান করে আদেশ আনলে আমরা সেই আদেশ মূলে কাজ সম্পাদন করেছি।’

আদেশের পরের ভূয়া প্রমাণিত আপনার স্বাক্ষরকৃত আগের প্রতিবেদনের কথা আদালতে জানাননি কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে আশীষ চিরাণ বলেন, ‘আসলে মামলায় হাজিরা এবং পরিচালনা না করাটা আমার ভুল হয়েছে। তবুও আমরা দেখছি এটা কি করা যায়। আর না হলে প্রতিবেদনের প্রতি স্ববিরোধীতা হয়ে যাচ্ছে ঠিক।’

মামলার প্রতিদ্বন্দ্বীতা এবং আপনার নিজের করা আগের প্রতিবেদন গোপন রাখার জন্য আপনার ১০ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আসলে আমি টাকার লেনদেন করিনি। তবে এটা সত্য, তবে আমি হাইকোর্টের মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার কারণটাই হলো মূলত আমার দোষ।
আর কোনো কিছুই আমার জানামতে দোষ নেই।’

এ সময় আশীষ চিরাণের পাশে বসা থাকা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের আরেক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো.শামসুদ্দীন বলেন, ‘আমি তখন বলেছি দুজনকেই শাস্তি দিতে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সেটা কেন হয়নি তা আমি জানিনা।’

এদিকে শিক্ষা অফিসার ফারহানা ইয়াসমিন স্কুলের শুরু থেকে চাকরি আসছিলেন বলে দাবী করলেও স্কুলের কর্মরত থাকা শিক্ষিকারা জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর এক চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ‘ফারহানা ইয়াসমিন আগে কখনো চাকরি করেননি। এবং পদ একটা হলে মানুষ দুইটা ছিল। কিন্তু শিক্ষা অফিসার আশীষ চিরাণ বার বার বলে আসছেন মানুষ একটা! তাহলে ফারহানা ইয়াসমিন কে? আর জেয়াসমিন আক্তার কে? তাহলে কাকে তিনি পদত্যাগ করালেন? এসব প্রশ্নের উত্তর আদৌ অধরা।’

শুধু তা নই!

পরবর্তীতে আসছে, ‘মনেয়াবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী নিয়ে আশীষ চিরাণের দুই নম্বরী’

 

 

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.