প্রবাসী মঞ্জুর হত্যা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা

স্টাফ রিপোর্টার, ঈদগাঁও:

মৃত্যুর পর ফেসবুকে একটি ছবি আপলোড হয়- ছবিতে তার মুখখানী একটু খোলা, দাঁত দেখা যা্চ্ছিল। ছবি দেখে মনে হল-সে যেন বলতে চায় তার উপর কি সীমাহীন নির্যাতন করা হয়েছিল। অপরদিকে বাড়ির ছাদে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিল ৯ বছরের কন্যা।

এমনি আবেগময় স্ট্যাটাস লিখেন উত্তর মাইজ পাড়ার সন্তান ও ব্যবসায়ী জানে আল।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২১শে মে মনজুর হত্যার ভিডিও ভাইরাল হয় এবং প্রতিবাদের ঝড় উঠে। আসামীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবীতে স্থানীয় জনগন প্রতিবাদে ফুঁসে উঠে। দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ঘটনা আর ভয়ংকর রূপ ধরনের সম্ভবনা ছিল। এর দায় আমরা কেউ এড়াতে পারিনা।

মনজুরের স্থায়ী নিবাস ছিল চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের নতুন মহাল গ্রামে। ১২ বছর আগে উত্তর মাইজপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল মতলবের পুত্র নুরুল আজিমের কন্যা রুনা আকতারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে তাদের সংসার আলো করে আসে একটি কন্যা সন্তান। জীবিকা নির্বাহের আশায় মনজুর আজ থেকে প্রায় আট বছর পুর্বে সৌদি আরব পাড়ি জমান। সৌদি থেকে নিয়মিত টাকা পাঠাতেন স্ত্রী রুনা আকতারের নামে। ভালই চলছিল সংসার এরই মধ্যে ঈদগাঁও কালিরছড়া গ্রামে কিছুদিন বসতি করতে চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অনুরোধ ও পরামর্শে উত্তর মাইজপাড়া এলাকায় শ্বশুর বাড়ির পার্শ্ববর্তি ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন এবং উক্ত জমিতে দ্বিতলা বসত বাড়ি নির্মাণ বসতি শুরু করেন। তিন বছর আগে সৌদি আরবে ভিসা জটিলতায় দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হন অনেকটা খালি হাতে। সেই খালি হাতে দেশে ফেরত আসা শ্বশুর বাড়ির লোকজনের একদম পছন্দ হয়নি এবং জানতে পারেন প্রবাস থেকে পাঠানো টাকায় কেনা জমি তার নামে ক্রয় করা হয়নি। গোপনে স্ত্রী রুনা আকতারের নামে ক্রয় করা হয়।
মনজুরের হাতে আগের মত তেমন টাকা পয়সা নেই, দিন মজুরী করে সংসার চালায় সে, স্ত্রীর নামে ক্রয় করা জমি আত্বসাৎের জন্য বেকার শ্বশুরের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন মিলে ষড়যন্ত্র শুরু করে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে মনজুরকে নিজের বানানো বাড়ি থেকে নির্যাতনের মাধ্যেমেবের করে দিতে সক্ষম হয়। মনজুর আজ এখানে পরশু ওখানে, লবণ মাঠে কামলার কাজ করে খেয়ে না খেয়ে দিনা তিপাত করতে থাকে।

তার প্রতি সংঘটিত অন্যায়-জুলুমের জন্য ন্যায় বিচারের আশায় স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন অনেক দিন। জীবিত থাকতে আমরা সবাই ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছি। শেষ পর্যন্ত দিন দুপুরে তার নিজের বানানো বাড়ির ছাদ থেকে মাথায় ইট ছুড়ে মেরে আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেই স্ত্রী- শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্মম নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেন।

পরিশেষে- মনজুরের বিদেহী আত্মর শান্তি ও খুনিদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী ও মনজুরের প্রবাসে ঘামের টাকায় কেনা জমি কন্যার নামে করে দেওয়ার দাবী জানাই। মহান আল্লাহ আমি ও আপনাদের সকলকে সুস্থ্য রাখুন।

চট্টগ্রাম সংবাদ/জাই

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.