টাঙ্গাইলে বাছুর প্রসব না করেই দুধ দিচ্ছে বকনা

ফরমান শেখ, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:

শুনতে বেশ আবাক মনে হলেও সত্যি। টাঙ্গাইলের সখীপুরে মর্জিনা খাতুন নামের এক নারীর ১০ মাস বয়সি বকনা বাছুর প্রসব না করেই প্রতিদিন তিন কেজি করে দুধ দিচ্ছে। বুধবার (২৬ মে) সকালে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবদুল জলিল ঘটনার সত‌্যতা নিশ্চিত করেছেন। মর্জিনা খাতুন গড়গোবিন্দপুর গ্রামের খোরশেদ আলমের স্ত্রী। সরেজমিনে দেখা যায়, মর্জিনা খাতুন গড়গোবিন্দপুর গ্রামের খোরশেদ আলমের স্ত্রী নামেই পরিচিতি। সাম্প্রতিক অলৌকিক এ ঘটনার জন্য পরিচিতি আরও কয়েক গুন বেড়ে যায় তার। মর্জিনা খাতুন গত দশ বছর ধরে বিদেশি জাতের গরু লালন পালন করেন। তার একটি গাভী গত সাড়ে তিন বছরে পর্যায়ক্রমে তিনটি বাছুর প্রসব করেছে। আগের দুটি বাছুর বড় করে বিক্রিও করেছেন। কিন্তু শেষবারের বকনা বাছুরটি একদমই ব‌্যতিক্রম। বয়স প্রায় ১০ মাস। হিটে না আসায় বাছুরটি গর্ভধারণের সময়ও হয়নি। কিন্তু অলৌকিকভাবে প্রতিদিনই তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার দুধ দিচ্ছে নিজের বাছুর ছাড়াই। ১৫ দিন আগে মর্জিনা খাতুন ১০ মাস বয়সি বাছুরকে গোসল করাতে গেলে গরুটির দুধের বাঁট ফোলা দেখে ধারণা করেন, এর বাঁটে দুধ জমেছে। তিনি তাৎক্ষণিক গরুটির ওলান থেকে দুধ সংগ্রহ করেন। প্রথম কয়েক দিন আধা লিটার দুধ পান করেন তিনি। এখন দুধের পরিমাণ বেড়েছে। প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে কেজি দুধ দিচ্ছে। পরিবারের সদস্যরা এই দুধ পান করছেন। মাঝেমধ্যে এলাকার লোকজনকেও বিনামূল‌্যে দিচ্ছেন তিনি। বাছুর দেখতে আসা কেরামত আলী বলেন, ‘আমি প্রায় ২০ বছর ধরে গরু লালন পালন করি। কখনও এ রকম বাছুর ছাড়া দুধ দিতে দেখিনি। শুনে তাই দেখতে এসেছি। ঘটনার সত্যতাও পেয়েছি।’ স্থানীয় হারুন খান বলেন, ‘গাভীর বাছুর মারা গেলে সেই গাভী দুধ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। আর এখানের বাছুর ছাড়াই বকনা বাছুর দুধ দিচ্ছে। বিষয়টি ব‌্যতিক্রম।’ খোরশেদ আলমের চাচা আবদুল হাই তালুকদার বলেন, ‘সাধারণত যে গাভী বাচ্চা জন্ম দেয়, সেই গাভীই দুধ দিয়ে থাকে। অল্প বয়সি বাছুরটি দুধ দেয়, এটা একটা ব‌্যতিক্রমী ঘটনা। অনেকেই বিষয়টি শুনে আশ্চর্য হয়েছেন। তাই প্রতিবেশীরা এ দৃশ্য দেখতে বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে।’ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবদুল জলিল জানান, হরমনের কারণে এমনটা হয়। অক্সিটোসিন হরমন যদি বেড়ে যায় তাহলে এরকম বকনা গরু থেকে দুধ আসতে পারে। এটা নিয়ে কৌতূহলের কিছু নেই। এই দুধ স্বাস্থ্যসম্মত এটা যে কেউ খেতে পারে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রানা মিয়া জানান, গ্রোথের ওপর নির্ভর করে বাছুর হিটে আসে। দেশী বাছুরগুলো দেড় থেকে দুই বছরে হিটে আসে। আর হাইব্রিড জাতের বাছুর সোয়া থেকে দেড় বছরে হিটে আসে। গাভীর ১০ ভাগ দুধ বাছুরকে খাওয়াতে হয়। কোনো কোনো বাছুর আট মাস পর্যন্ত দুধ খেয়ে থাকে। কিন্তু মাঝে মাঝে হরমোনের কারণে বাছুর ছাড়াই দুধ দেয় বকনা। এটা নিয়ে কোনো সমস‌্যা হবার কথা নয়। এটা সবার জন্য আনন্দের সংবাদ বিশেষ করে মর্জিনা খাতুনের পরিবারের জন্য তো বটেই।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.