আনোয়ারা প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের আনোয়ারার বরুমচড়ায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী আবুল বশর (৫০) কে ধরতে গিয়ে পুলিশের সাথে মারামারির ঘটনায় ২৮ জনের নাম উল্লেখ থাকলেও মামলা থেকে বাদ যায়নি প্রবাসী, প্রতিবন্ধি ও মৃত ব্যক্তি। পুলিশের ভয়ে গ্রাম শূণ্য হয়ে পড়েছে সাধারণ নিরীহ মানুষও। তবে পুলিশের মামলার এজাহারে দেখানো হয়, পুলিশ ধরতে গিয়েছিলো বারখাইন ইউনিয়নের তৈলারদ্বীপ গ্রামের আবুল বশরকে কিন্তু হামলার ঘটনা ঘটে বরুমচড়ার আবুল বশরকে নিয়ে।
সোমবার (০১ ফেব্রুয়ারী) উপজেলার বরুমচড়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের চুয়ানীর বাপের বাড়ি এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বুধবার (২৭ জানুয়ারী) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে চুয়ানীর বাপের বাড়ির সাজাপ্রাপ্ত আসামী আবুল বশর (৫০) কে সাদা পোষাকে এসআই আবু মুসা, এএসআই মোহাম্মদ নয়ন মিয়া ও কনস্টেবল জ্ঞানতোষ চাকমা গ্রেপ্তার করতে আসলে আবুল বশরের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এসময়ে ঘটনাস্থলে থাকা লোকজন ও আবুল বশরের পরিবারের লোকজন সাদা পোষাকে পুলিশের কাছে জানতে চাই, গ্রেপ্তারের ওয়ারেন্ট কপি দেখান আর আপনারা যে পুলিশ সেটা প্রমান কি?। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আবুল বশরকে ফেলে দৌড়ে আধা কিলোমিটার দূরে শামসুর মিয়ার বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এসময়ে আবুল বশরের স্বজনরা ডাকাত-ডাকাত বলে চিৎকার করে ধাওয়া করে। এতে গুরতর আহত হন পুলিশের এসআই আবু মুসা, এএসআই মোহাম্মদ নয়ন মিয়া ও কনস্টেবল জ্ঞানতোষ চাকমা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ জানুয়ারী রাত সাড়ে ৯টায় পুলিশ আদালতের সাজাপ্রাপ্ত আসামী বারখাইনের তৈলারদ্বীপ এলাকার হাজী আবুল বশর চৌধুরীকে বরুমচড়া ৮নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আলী টেক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। আটক করার সাথে সাথেই আসামীকে পুলিশের হেফাজত হইতে ছিনাইয়া নেওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তারকৃত বিবাদীদ্বয়সহ পলাতক আসামী ও অজ্ঞাতনামা ৬০-৭০ জন লোক বে-আইনী জনতাবদ্ধে ধাঁরালো কিরিচ, দেশীয় তৈরী অস্ত্র সন্ত্র ও গাছের লাঠি নিয়া ডাকাত ডাকাত বলিয়া পুলিশের উপর অতর্কিতভাবে আক্রমন করে।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় মো. রফিক (৫০), জামাল উদ্দিন (৪৫) ও মো. ইয়াছিন (২২) জানায়, পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোষাকে তিনজন লোক বরুমচড়া এলাকার ৮নং ওয়ার্ডের উকিল বাড়ির হাজী আবুল বশর নামে এক লোককে ওয়ারেন্টের আসামী বলে আটক করলে উপস্থিত জনতা ওয়ারেন্টের কপি দেখাতে বলে। এসময় তারা ওয়ারেন্টের কপি দেখাতে না পারলে জনতা পুলিশের পরিচয় পত্র দেখাতে বলে। তখন পুলিশ পরিচয় ব্যক্তিরা পরিচয়পত্রও দেখাতে না পারলে স্থানীয় লোকজন ভূয়া পুলিশ বলে ক্ষেপে গেলে তারা তিনজন আবুল বশরকে ফেলে দৌড়ে আধা কিলোমিটার দূরে শামসুর মিয়ার বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এসময় লোকজন ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি মেম্বার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর খাকি পোষাকে আরো তিন-চারজন পুলিশ উপস্থিত হয়ে তাদের উদ্ধার করে। ঘটনার পর বরুমচড়ার আবুল বশরের ভাই আনোয়ার, আইয়ূব আলী ও আহসান উল হককে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে আমরা জানতে পারি আবুল বশরের ভাই আনোয়ারকে ছেড়ে দিয়েছে আর গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে মো. লিটন নামে এক ব্যক্তিকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় পুলিশদের মারধরের ঘটনায় যাদের আসামী করা হয়েছে তাদের মধ্যে বিদেশে রয়েছে দুইজন তারা হলেন ১৮নং আসামী জামালের পুত্র প্রবাসী ইসমাঈল ও ২২নং আসামী বশির আহমদের পুত্র মো. আনোয়ার সৌদিয়া আরব প্রবাসী, ২১নং আসামী মো. ইউনুস পিতা অজ্ঞাত, তবে ইউনুস নামে এ এলাকায় ব্যক্তি রয়েছে তিনজন। তাদের মধ্যে একজন মারা গেছে অনেক আগে আর একজন বিদেশে অপরজন প্রতিবন্ধি। তাহলে আমাদের প্রশ্ন কোনো ইউনুসকে মামলার আসামী করা হয়েছে। কিন্তু যার পরিবার ও স্বজনদের সাথে এঘটনা ঘটেছে তাদের অনেকেই নাম নেই মামলায়। এখন প্রতিদিন সন্ধ্যা হলে এলাকার মানুষ ঘর ছাড়া হয়ে পড়ে কখন জানি পুলিশ এসে নিয়ে যায় এ ভয়ে। এছাড়ায় ১ মাস আগে ডিবি পরিচয়ে সাদা পোষাকে স্থানীয় জামাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে ৭০ হাজার নিয়ে ছেড়ে দেয়। পরে জানতে পারি এরা কোনো আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নয়। এসব কারণেই এলাকার মানুষদের মনের মধ্যে এ আতংক রয়েছে। ২০০৬ সালে ইসলাম নামে এক ডাকাতকে জনতার গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে এ এলাকায়। পুলিশের হয়রানী থেকে বাঁচতে আমরা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহেরসহ গ্রামের লোকজন গিয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি মহোদয়কে বিষয়টি জানিয়েছি।
৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু জাফর চৌধুরী মিজান জানান, সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেপ্তার করতে এসে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার সময় পুলিশ আমাকে মুঠোফোনে জানালে আমি স্থানীয়দের বিষয়টি নিশ্চিত করি। তবে এঘটনায় অজ্ঞাত নামে আসামী করায় অনেক নিরীহ মানুষও গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে পুলিশের হয়রানীর কারণে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহদাত হোসেন চৌধুরী জানান, বরুমচড়া এলাকার উকিল বাড়ির হাজী আবুল বশরকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে অনাঙ্খাকিত এ ঘটনা ঘটেছে। আমি ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর দেখলাম তিনজন সাদা পোষাকে আর চারজন পুলিশ খাকি পোষাকে ছিলেন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলা গ্রহণ যোগ্য নই।
মামলার বাদী এসআই (নি:) এস.এম আবু মুসা বলেন, আসামীর বিষয়ে আমরা শতভাগ নিশ্চিত হয়ে হাজী আবুল বশরকে গ্রেপ্তার করি। ঔই সময়ে স্থানীয় লোকজন আমাদের উপর হামলা করে। মামলার এজাহারে উল্লেখিত তৈলারদ্বীপের আসামী ধরতে বরুমচড়া কেন গিয়েছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার এজাহারের বিষয়ে এটা আদালতে দেখবে। আমি ঘটনার বর্ণনা দিলাম।
এবিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম দিদারুল ইসলাম সিকদার জানান, গ্রেপ্তারকৃত লিটনের স্বীকারোক্তি মতে ব্যক্তিদের মামলায় আসামী করা হয়েছে। তবে মামলার এজাহারের উল্লেখিত তৈলারদ্বীপ এলাকার হাজী আবুল বশর ও বরুমচড়া এলাকার ঘটনার শিকার আবুল বশরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার এজাহার দেখে আমাকে বলতে হবে।