আওয়ামী লীগের মিছিল: ঢাকায় ‘২৪৪ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার’

ঝটিকা মিছিলের সময় ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের ২৪৪ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করার তথ্য দিয়েছে পুলিশ।

বুধবার এ তথ্য জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছে ১৪টি হাতবোমা ও সাতটি ব্যানার পাওয়া গেছে।

এদিন দুপুরে গুলিস্তান, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, আগারগাঁও ও পান্থপথ এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের করেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তারা ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির পায়তারা করছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে ২৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

“এদের মধ্যে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ৫০ জনকে, সিটিটিসি ২৭ জনকে, তেজগাঁও বিভাগ ১০০ জনকে, রমনা বিভাগ ৫৫ জনকে, গুলশান বিভাগ ৫ জনকে, মিরপুর বিভাগ ৪ জনকে এবং উত্তরা বিভাগ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে।”

এ বিষয়ে বুধবার বিকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, “ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অর্থ যোগানদাতা, আশ্রয়দাতা ও লোক সরবরাহকারীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।”

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এর আগে ডিএমপির বিভিন্ন ইউনিনের ধারাবাহিক অভিযানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠনের যে কোনো অপতৎপরতা রোধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে এক দিনে প্রায় আড়াইশ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হওয়ায় নিজেদের লোকজনকেই দায়ী করছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

এদের একজন বলছেন, “ঢাকায় একযোগে মিছিলের পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপের আলাপের তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন দলেরই কেউ কেউ।”

ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা বলছেন, “১৫টি স্থানে মিছিলের পরিকল্পনা ছিল। সেটা গতরাত থেকেই সবাই জেনে গেছেন। মিছিলের স্পটের তথ্যও ফাঁস হয়েছে। এ কারণে সকালে থেকেই পুলিশ তৎপরতা বাড়িয়েছে।”

তিনি বলছেন, “পালিয়ে থাকা নেতাকর্মীরা ‘ক্রেডিট নিতে গিয়ে’ এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছেন বেশি। এ কারণেই আজ এত নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হলো।”

গ্রুপ থেকে তথ্য ফাঁস নিয়ে ফেইসবুকেও ক্ষোভ ঝেড়েছেন নেতাকর্মীদের অনেকে।

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মিছিল হবে- এই তথ্য আগে থেকে ছিল পুলিশের কাছেও। এ কারণে ফার্মগেট, পান্থপথসহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল।

এদিকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা যেন সহজে জামিন না পান, সে ব্যাপারে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

বুধবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বিভাগের বিভিন্ন জেলা প্রশাসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা বলেন তিনি।

সার্কিট হাউসে মতবিনিময় সভার কয়েক ঘণ্টা আগে নগরীর দামপাড়া এলাকায় মিছিল করেন ‘নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা। পরে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নজরে এনে এক সাংবাদিক জানতে চান, নির্বাচনের সময় কী হতে পারে।

জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “চট্টগ্রামে না শুধু, আজকে ঢাকায়ও মিছিল হয়েছে। তাদের (মিছিলকারী) অনেককে কিন্তু আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। আইনের আওতায় আনার পরেও অনেকে কিন্তু জামিন পেয়ে যায়। আমরা চেষ্টা করছি এরা যেন আর সহজে জামিন না পায়, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য…।”

তিনি বলেন, “নির্বাচনের সময় মিছিলের সংখ্যা বাড়বে, প্রচুর মিছিল হবে। কিন্তু এই মিছিল তখন হবে না। তখন সবাই মিছিলের জন্য বেরিয়ে যাবে, অনেক মিছিল হবে কিন্তু এখন যারা ছোটখাটো মিছিল করে এগুলো হবে না।”

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.