‘৮০ শতাংশের ভ্যাকসিন নিশ্চিত হবে ২০২২ এর মধ্যে’

 

২০২২ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে করোনা ভ্যাকসিনের আওতায় আনার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজিএইচএস) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, উৎপাদকদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভ্যাকসিন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। বাংলাদেশ আগামী জুনের মধ্যে প্রায় ১৪ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কিনতে চাইছে এবং পরিকল্পনা বাস্তায়নের জন্য পরবর্তী মাসগুলোতে বাকি প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ১৩ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার জন্য ভ্যাকসিন সংগ্রহ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ ও কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, চুক্তির আওতায় চীনের সিনোফার্ম থেকে তিন কোটি ডোজ, রাশিয়া থেকে এক কোটি ডোজ স্পুটনিক ভি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাত কোটি ডোজ জনসন অ্যান্ড জনসন ও সাড়ে ছয় কোটি ডোজ ফাইজার এবং জাপান থেকে ৩০ লাখ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, কোভ্যাক্সের আওতায় বিনামূল্যে ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা হচ্ছে। যদিও এই বিশেষ উৎস থেকে ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনো কিছু বাধা রয়ে গেছে। এদিকে, জনসন অ্যান্ড জনসন ভ্যাকসিন এক ডোজের। এর মানে এই ভ্যাকসিন দিয়ে সাত কোটি মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা যাবে। তবে অন্য ভ্যাকসিনগুলো প্রত্যেককে দুই ডোজ করে দিতে হবে।

ডা. আলম জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এ পর্যন্ত প্রায় তিন কোটি ভ্যাকসিন সংগ্রহ করেছে। এখন দিনে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে এবং এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। প্রতি মাসে এক কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। ডিজি হেলথ বলেন, ১৬ মাসের মধ্যে বাংলাদেশের ইনসেপ্টা ও চীনের সিনোফার্মের মধ্যে সহ-উৎপাদন চুক্তির আওতায় দেশে উৎপাদিত ভ্যাকসিন ছাড়াই টার্গেট সংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হবে।

প্রসঙ্গত, ভ্যাকসিন ঘাটতির কারণে প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ভ্যাকসিন গ্রহণ প্রক্রিয়া সহজ করার মাধ্যমে দেশব্যাপী ত্বরিত ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি শুরু করে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট (এসআইআই) থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের সরবরাহের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু ভারতে প্রত্যাশিত চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এই ভ্যাকসিন সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারেনি সিরাম। বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও এসআইআই’র মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে তিন কোটি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত তার মাত্র ৭০ লাখ ডোজ পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ২০২২ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার লক্ষ্য পূরণের পথে রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কোভ্যাক্সের আওতায় ৩০ আগস্ট মার্কিন উপহার হিসেবে বাংলাদেশ ১০ লাখ ডোজ ফাইজার ভ্যাকসিন পাবে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে মোট ৬০ লাখ ডোজ ফাইজার ভ্যাকসিন বাংলাদেশে পৌঁছবে।

সরকারী তথ্য অনুযায়ী, ২৮ আগস্ট পর্যন্ত এক কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছেন এবং ৭৬ লাখের বেশি লোক ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে কোর্স শেষ করেছেন। এ পর্যন্ত ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করেছেন তিন কোটি ৭০ লাখের বেশি মানুষ । এ ব্যাপারে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটি (এনটিএসি)’র সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ভ্যাকসিনের সম্পূর্ণ সুফল পেতে হলে প্রতি মাসে দেশের এক কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় চার লাখ মানুষকে টিকা দিতে হবে।

পাশাপাশি, বাংলাদেশের বিপুল জনসংখ্যার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তিনি ভ্যাকসিন কর্মসূচি যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য রোড ম্যাপ বজায় রাখার ওপর জোর দেন।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.