প্রধানমন্ত্রীর ছবি পোড়ানো ও নৌকা প্রতীক ভাংচুর কারীকে নৌকা প্রতীক দেয়ার পায়তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি পোড়ানো এবং নৌকা প্রতীক ভাংচুর মামলার প্রধান আসামি ও জাতীয় পার্টির ইউনিয়ন সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানকে ৭নং হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক দেয়ার পায়তারা করছেন একটি মোহল। গত বছরের ২৫’শে নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় খটশিংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিশেষ এক কর্মিসভায় তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করলে বিভিন্ন বিতর্কের কারণে তাকে ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ইং তারিখে ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির সভাপতি সাদেক হোসেন কুরাইসি ও সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়ের স্বাক্ষরিত কাগজে আওয়ামী লীগের কোন কমিটিতে না রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু এই নির্দেশ অমান্য করে পীরগঞ্জ উপজেলার ৭নং হাজীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটিতে ১নম্বর সদস্য করা হয় তাকে। এ নিয়ে উপজেলার আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীদের মাঝে বেশ মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। সেই সাথে (১১অক্টোবর) সোমবার ৭নং হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০২১ উপলক্ষে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একটি বর্ধিত সভায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের মনোনয়ন সংগ্রহ অনুষ্ঠানে এই বিতর্কিত চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিল বলে জানা গেছে। সেই বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি ইমদাদুল হক এবং পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বিপ্লব উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তারা অনুপস্থিত ছিলেন। সেখানে আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন কমিটির লোকজন তাকে ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক দেয়ার সমর্থন করেন। এখন উপজেলার বেশির ভাগ নেতাকর্মীদের প্রশ্ন সে সদস্য হলোনা তাকে তার জন্য নৌকার প্রস্তাব কেন দেয়া হবে। ইউনিয়ন কমিটি যারা তাকে সদস্যভূক্তি করলেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা কমিটির কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন একাধিক উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে আসা সিদ্দিকুর রহমান ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়নাল আবেদিনকে পরাজিত করে জাতীয় পার্টি থেকে হাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে নির্বাচনী নীতিমালা তোয়াক্কা না করে ২৬ এপ্রিল নির্বাচনী এলাকায় ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ঘোড়ারগাড়িতে চড়ে বিজয় মিছিলে নেতৃত্ব দেন সিদ্দিকুর রহমান নিজে। মিছিলটি নির্বাচনী এলাকার সিংগারোল-দহগা নামক স্থানে পাকাসড়কে পৌঁছলে সেখানে নির্মিত নৌকা প্রতীক সংবলিত তোরণ ভাংচুর করা হয়। এ সময় বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত গেটটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়নাল আবেদিনের বাড়িতেও হামলা চালিয়ে মারপিট, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরদিন ২৭ এপ্রিল পরাজিত প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনের ভাই জালাল উদ্দীন বাদী হয়ে সিদ্দিকুর রহমানসহ ১০৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৭০-৮০ জনের বিরুদ্ধে পীরগঞ্জ থানায় দ্রুতবিচার আইনে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ পরবর্তীতে তদন্তসাপেক্ষে ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুরসহ ১১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০১৬ সালের আগস্টের শেষ সপ্তাহে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক সিদ্দিকুর রহমান চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ সময় ওই মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে যান সিদ্দিকুর এবং স্বপদে বহাল হন তিনি। শুনানি শেষে মামলাটি বিচারের জন্য নিম্ন আদালতে পাঠিয়েছেন হাইকোর্ট। নিম্ন আদালতে মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়। এ অবস্থায় হাইকোর্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রিভিউ করেন সিদ্দিকুর। এতে নিম্ন আদালতে আবারও থেমে যায় মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম। বর্তমানে বিষয়টি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য রয়েছে। এ অবস্থায় সিদ্দিকুরসহ তার অনুসারীরা আওয়ামী লীগে যোগদান করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আকতারুল ইসলাম, সাবেক অর্থ সম্পাদক জয়নাল আবেদিনসহ একাধিক নেতা জানান, সিদ্দিকুর বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেখানে স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর করে পুড়িয়ে দেয়া মামলার প্রধান আসামি হয়েও তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছিলেন তাকে আবার বহিস্কারও করা হয় তাহলে সে কিভাবে ইউনিয়ন কমিটির সদস্য হয়। তার নাম চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের জন্য ইউনিয়ন কমিটি প্রস্তাব করে পাঠানোর পায়তারা করে। তাদের অভিযোগ,বহিস্কার করার পরেও কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতাদের নির্দেশ অমান্য করে বিশেষ সুবিধা নিয়ে তার নাম আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন কমিটিতে রাখাসহ নৌকা প্রতীক দিয়ে ইউপি নির্বাচন করার চেষ্টা চালাচ্ছে ইউনিয়ন কমিটি। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান বলেন,নৌকা যে পাউক আমি নৌকার পক্ষে নির্বাচন করবো। এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান খাইরুল আনাম চৌধুরী বলেন,সিদ্দিকুর চেয়ারম্যানকে এখনো বহিস্কার করা হয়নি সে এখনও ৭নং হাজীপুর ইউনিয়নের জাতীয় পার্টির সভাপতি বহাল রয়েছে। এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাবেক এমপি হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১২ সালে বিএনপি নেতা সিদ্দিকুর রহমান স্বার্থ হাসিলের জন্য জাতীয় পার্টিতে এসেছিলেন। ঠিক একইভাবে নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য আবারও আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। তিনি আরও বলেন, সিদ্দিকুর নিজেই নির্বাচনী প্রতিহিংসা সৃষ্টি করে জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি চালিয়ে মামলায় পড়েছেন। তবে সিদ্দিকুর রহমান জাতীয় পার্টি ছেড়ে যাওয়ায় দলের কোনো ক্ষতি হবে হয়নি।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.