টুকু নির্বাচনি এলাকা ছেড়েছেন কি না— জানাতে হবে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে

সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুকে পাবনার বেড়া পৌরসভার নির্বাচনি এলাকায় অবস্থান না করতে রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়া চিঠি কার্যকর হয়েছে কি না, তা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাবনার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে (বেড়া পৌরসভা নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার) ওই তথ্য জানাতে বলা হয়েছে।

সোমবার (২২ নভেম্বর) ওই নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল বাতেনের করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও মো. সাইফুল আলম।

আগামী ২৮ নভেম্বর বেড়া পৌরসভা নির্বাচনের ভোট নেওয়া হবে। এর আগে ১৪ নভেম্বর সংসদ সদস্য শামসুল হকের প্রতি পাবনার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা পৌরসভা বিধিমালার (নির্বাচন আচরণ) বিধান উল্লেখ করে একটি চিঠি পাঠান।

আদেশের পর আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানান, সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুকে নোটিশ দিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার। এ বিষয়ে রোববার (২১ নবেম্বর) একটি দৈনিক পত্রিকায় ‘মায়াদয়া করব না, পিষে দেব’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেটিও আদালতে দেখিয়েছি।

আদালত পাবনার রিটার্নিং অফিসারের প্রতি আদেশ দিয়েছেন। ১৪ নভেম্বর দেওয়া চিঠি কতটুকু প্রতিপালিত হচ্ছে, তা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিয়ে জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) আবার মামলাটি কার্যতালিকায় আসবে।

এর আগে, একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংসদ সদস্য টুকুকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘আমি মায়াদয়া করব না, কিন্তু পিষে দেব।’ পাবনার বেড়া পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এক মেয়র পদপ্রার্থীর সমর্থককে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শামসুল হক টুকু বিরুদ্ধে এই হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

জানা যায়, শুক্রবার সকালে বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা পশ্চিমপাড়ার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী আব্দুল বাতেনের সমর্থক, আওয়ামী লীগ কর্মী ইয়ামিন আলী। এ সময় তিনি পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর সামনে পড়েন। তখন ইয়ামিনকে এই হুমকি দেন শামসুল হক।

বেড়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন শামসুল হক টুকুর ছেলে আসিফ শামস। অন্যদিকে দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হয়েছেন শামসুল হক টুকুর ভাই আব্দুল বাতেন। টুকুর বড় ভাই বদিউল আলমের মেয়ে ভাতিজি সাদিয়া আলমও এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী।

আব্দুল বাতেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং বেড়া পৌরসভার বর্তমান মেয়র। একই পরিবারের তিন জন মেয়র প্রার্থী হওয়ায় বেড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

এর মধ্যেই বেড়া পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মাহবুবুর রহমান গত ১৪ নভেম্বর শামসুল হককে একটি চিঠি পাঠান। তাতে বলা হয়, ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচনি এলাকায় প্রচারণা বা নির্বাচনি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। বেড়া পৌরসভা সাধারণ নির্বাচন প্রভাবমুক্তভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পৌরসভা (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তথা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনি এলাকায় অবস্থান না করার জন্য আপনাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করা হলো।’

নির্বাচন কর্মকর্তার চিঠি পাওয়ার পরদিন ১৫ নভেম্বর সকালে শামসুল হক বৃশালিখা পল্টন সমাজের আয়োজনে এক দোয়া ও আলোচনা সভায় অংশ নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.