সায়মন হত্যাকান্ডে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন লোহাগাড়া থানা পুলিশ

তদন্তের ভার পরিবর্তন চায় নিহতের পরিবার

 

সৈয়দ আককাস উদদীন

 

সাতকানিয়ার হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানও টমটম চালককে ভাড়ায় নেয়ার কথা বলে কৌশলে লোহাগাড়ার চুনতি নিয়ে গিয়ে ছুরিকাঘাত করে নিহত করার অভিযোগ ওঠেছে আপন চাচাও চাচাত ভাইদের বিরুদ্ধে।

নিহতের ঘটনায় ২২দিন পার হয়ে গেলেও এজাহারনামীয় মূল আসামী কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় হতাশায় ভুগছেন নিহত সায়মনের অসহায় পরিবারসহ ছদাহার ফজুরপাড়ার লোকজন।

(১৭ই আগষ্ট)বুধবার বিকেলে উপজেলার ছদাহার ফজুর পাড়া সেন্টারে পরিদর্শনে গেলে এমন চিত্র দেখা যায়।

পরিবারও স্থানীয়দের অভিযোগ সাতকানিয়ার ছদাহার নিহত সায়মনের পিতা সিরাজুল ইসলাম একজন দিনমজুর পুলিশ প্রশাসনকে ঠিকমত টাকাপয়সা দিয়ে অন্য দশজন বাদীর মত মামলা পরিচালনা করতে না পারায় এখনো অধরা থেকে গেল মূল খুনী আরমানও ফারুক।

এদিকে সায়মনের পিতাসহ স্থানীয়রা প্রতিবেদককে জানান-লোহাগাড়া থানা পুলিশের অবহেলায় হয়তো আরো দেরী হবে আসামীদের বিচারের আওতায় আনতে, তাই মামলাটি যদি অন্য কোন সংস্থায় তদন্ত করেন- তাহলে আমাদের বিশ্বাস আসামীরা দ্রুত গ্রেফতার হবে।

এদিকে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে লোহাগাড়া থানার ওসি আতিকুর রহমান বলেন-নিহতের পরিবার গরীব তাই আমরা আসামী ধরতে অবহেলা করছি এসব আসলে শুনতে সত্যিই খারাপ লাগে-এসব ঠিক না।

বাস্তবতাটা হচ্ছে ভিন্ন- সাতকানিয়া সার্কেলের এডিশনাল এসপি শিবলী নোমান স্যারসহ আমরা সবাই আন্তরিক, বেশকয়েকবার ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছি ঘাতকদের সন্ধানে।এবং এখনো আসামীদের ধরার সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত।

তবে আমার বিশ্বাস দ্রুত আসামীরা আইনের আওতায় আসবে।
এতে আপনারা যারা সাতকানিয়ায় মিডিয়ায় আছেন তারা আমাদের খোঁজ খবর দিবেন আমরা ওই জায়গায়ও যেকোন মুহূর্তে হানা দিব,আমাদের আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই।

লোহাগাড়া থানার ওসি আরো বলেন-আসলে দেখেন ওইদিনের ঘটনাস্থল লোহাগাড়া হলেও নিহত এবং ঘাতকের বাড়ি সাতকানিয়ায় হওয়ার কারণে বিলম্বটা স্বাভাবিক তবুও আমরা দুই থানায় বিষয়টা দেখতেছি।

উল্লেখ্য-সাতকানিয়ার ছদাহার ফজুর পাড়ার সিরাজুল ইসলামের ছেলে সায়মন (১৯)কে ভাড়ার কথা বলে চুনতি নিয়ে যান কয়েক দূর্বৃত্ত পরে চুনতীর নির্জন জায়গায় গিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করেন আগে থেকে ওতঁপেতে থাকা তার চাচাত ভাই ফারুকও আরমানসহ বেশ কিছু দূর্বৃত্তরা।

পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে(সায়মনকে)চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করা হলে গত (২৭শে জুলাই)বুধবার সকালে ছুরিকাঘাতের ফলে চমেক এ মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেন নিহত সায়মনের পিতা রিক্সাচালক সিরাজুল ইসলাম।

তখন নিহত সায়মনের এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে একাধিক স্থানীয়রা জানিয়েছিলেন-মূলত ফরমানুল্লাহ ছেলে হচ্ছে আরমানও ফারুক।

আর সিরাজুল ইসলামের ছেলে হচ্ছে নিহত সায়মন।
সিরাজুল ইসলাম আর ফরমানুল্লাহ আপন ভাই।

ভাইদের মধ্যে ভিটি-মাটি ভাগবাটোয়ারা নিয়ে গ্রাম্য শালিসসহ পরিষদেও বিচার চলে আসছিল।

কিন্তু ফরমানুল্লাহর ছেলেরা বেপরোয়া আর একটু স্বচ্ছল হওয়ার সুবাদে আরমান আর ফারুকরা মিলে সবসময় সিরাজুল ইসলামের গায়ে হাত তুলতো- পরে পিতাকে চাচাত ভাইদের রোষানল থেকে বাঁচাতে প্রায় সময় সায়মন এগিয়ে আসতো।

আর এই এগিয়ে আসাটাই কাল হলো নিহত সায়মনের।

সায়মনকে তার চাচাত ভাইগন প্রায়-সময় দেখে নেয়ার হুমকী দিচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরে।

পরে এই চাচাত ভাইয়েরা সুকৌশলে অপরিচিত অন্যলোক দিয়ে সায়মনের চালিত টমটম রিক্সায় ওঠে চুনতীর জাইল্লা পাড়া নির্জন এলাকায় গিয়ে তাকে(সায়মন)কে পূর্বপরিকল্পিত ছুরিকাঘাত করেন।

এদিকে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আগে ফরমানের কাছে জমি দখল বেশী ছিল।

কিন্তু বিচারের মাধ্যমে সিরাজুল হককে তাদের কিছু জমি ছেড়ে দিতে হয়েছিল। এঘটনাকে কেন্দ্র করে একদিন ফরমানের ছেলে ফারুক ফজুর পাড়ার সেন্টারের চায়ের দোকানে জনসম্মুখে ও আমার উপস্থিতিতে সাইমুনকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল।

তখন আমি বকা দিয়ে তাকে ঐ স্থান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম।

তিনি(মেম্বার) আরো বলে,সায়মনকে হামলার ঘটনার আগের দিন তারা সবাই বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল।

ঘটনার একদিন পরে তারা বাড়িতে পূণরায় এসে হাস মুরগী যা ছিল সব বিক্রি করে দিয়ে আবার চলে যায়৷

অদ্যাবধি তাদের কেউ বাড়িতে আসেনি। এতে বুঝা যায় এ ঘটনাটি পরিকল্পিত একটি হত্যাকান্ড।

ফারুকের নানার বাড়ি সাতকানিয়ার বাজালিয়ার মাহালিয়া।

 

তখন সাতকানিয়া সার্কেলের এ্যাডিশনাল এসপি শিবলী নোমান এই প্রতিবেদকে জানিয়েছিলেন -সায়মন নিহত হওয়ার ঘটনার ১দিন আগে একটি মামলা হয়েছে এখন আবার ওই মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে।

আমরা আদালতে আবেদন পাঠায়ছি।

পরে অবশ্যই আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে লোহাগাড়া পুলিশ প্রশাসন তখন হত্যাচেষ্টা মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করেন।
 

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.