চবিতে পদবঞ্চিত ছাত্রলীগের অবরোধে অচল, ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বর্ধিত করার দাবিতে মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দিয়েছেন নেতাকর্মীরা।

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে অবরোধ শুরু হয়

আন্দোলনকারীদের বাধার মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষকদের কোনো বাস শহরে যেতে পারেনি। বন্ধ রয়েছে ক্যাম্পাসে রিকশা ও সিএনজি চলাচলও। স্থগিত করা হয়েছে বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা এবং আরবি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ।

জানা যায় সাবেক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজম নাছির উদ্দীনের অনুসারী ভিএক্স, বাংলার মুখ, রেড সিগনাল, কনকর্ড, এপিটাফ ও উল্কার নেতাকর্মীরা এ অবরোধের ডাক দেন।

এসময় তিনটি দাবি জানান তারা। এগুলো হচ্ছে পদবঞ্চিত ত্যাগী ও পরিশ্রমী কর্মীদের মূল্যায়ন করে কমিটিতে অর্ন্তভুক্তকরণ, কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের যোগ্যতা অনুসারে পদগুলোর পুনঃমূল্যায়ন ও কমিটিতে পদপ্রাপ্ত বিবাহিত, চাকরীজীবী ও দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাগ্রহণ।

ভিএক্স গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি প্রদীপ চক্রোবর্তী দুর্জয় বলেন, ‘সদ্য ঘোষিত শাখা ছাত্রলীগের যে অসমাঞ্জস্যপূর্ণ কমিটি সেখানে দীর্ঘদিনের পরিশ্রমী ও ত্যাগী নেতাদের রাখা হয়নি। আমাদের দাবি, কমিটি বর্ধিত করে তাদের পদায়ন করতে হবে এবং কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এতোদিন আমরা শান্তি আন্দোলন করলেও শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে অবরোধে ডাক দিয়েছি আমরা। দাবিসমূহ না মানা পর্যন্ত অবরোধ চলবে।’

শাটল ট্রেন অবরোধের বিষয়টি নিশ্চিত করে ষোলশহর স্টেশন মাস্টার ফখরুল পারভেজ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়গামী সকাল সাড়ে ৭টার শাটল ট্রেনটি ষোলশহরে আসার পর অবরোধ করেছে। ৮টার ট্রেনটিও ঝাউতলা স্টেশন আসার পর আটকিয়ে দিয়েছে তারা। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় রুটে শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।’

এদিকে আন্দোলনকারীদের বাধার মুখে শিক্ষকবাহী কোনো বাস শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়নি বলে জানিয়েছেন পরিবহন দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ নূরুল আবছার। তিনি বলেন, ভোরে পরিবহন দপ্তরে তালা দিয়েছে কয়েকজন যুবক। এরপর থেকে পরিবহন দপ্তর থেকে কোনো শিক্ষক বাস বের হতে পারেনি।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই চবি শাখা ছাত্রলীগের দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ছয় বছর পর গত জুলাইয়ে ঘোষণা করে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে মোট সদস্য হবেন ১৫১ জন। তবে গঠনতন্ত্র ভেঙ্গে চার শতাধিক সদস্যের বিশাল কমিটি গঠন করা হলেও সন্তুষ্ট হননি নেতাকর্মীরা। কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপগুলো।

এমনকি কমিটি বর্ধিত না করলে সেপ্টেম্বরে ‘সহিংস’ আন্দোলনের হুশিয়ারী দেয় নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অনেকেরই ছাত্রত্ব নেই, কেউ বিবাহিত, কেউ বা করছেন চাকরি। কারো নামে আবার আছে একাধিক মামলাও। অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজির। ছাত্রী হেনস্তায় বহিষ্কার হওয়া কয়েকজনও পদ পেয়েছেন কমিটিতে। এমন বিতর্কিত নেতাদের নিয়ে ‘টাউস কমিটি’ গঠনের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন সাবেক ছাত্রলীগের নেতারাও।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.