মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের আনোয়ারা-বাঁশখালী উপজেলার মধ্যবর্তী শঙ্খনদীর উপর নির্মিত তৈলারদ্বীপ সেতুর পূর্ব পাড়ে বাঁশখালী পুকুরিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম পুকুরিয়া এলাকায় ভোরের আলো ফুটতেই কেবলই দিগন্ত জোড়া সবুজ-হলুদের সংমিশ্রণে অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টি সমৃদ্ধ চৈত্রের বাহারি মৌসুমী ফল বাঙ্গি ও তরমুজের (ফুট) সমারোহ। সড়কের দুপাশেই বাঙ্গির স্তূপ। ভোরের আলো ফুটতেই বিক্রেতাদের হাঁকডাকে জমে উঠেছে বেচাকেনা। প্রায় সাড়ে তিন মাস নিবিড় পরিচর্যার পর কোলাহলমুক্ত পরিবেশে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পযর্ন্ত চলছে বাঙ্গি ও তরমুজের হাট। ক্রেতাদের কেউ বাঙ্গি হাতে নিয়ে টোকা মেরে, টিপে দেখছেন, কেউ বা নাকের কাছে ধরছেন। পুর দিকে বাঙ্গির মনকাড়া এক সুন্দর সুগন্ধা ।
ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রীজের পর্ব পার্শে বাঁশখালী অংশে পিএবি প্রধান সড়কের ২ পার্শ্বেই নিয়মিতই বাঙ্গির হাট বসে। চাষিরা খেত থেকে বাঙ্গি তুলে ভোরের আলো ফোঁটার সঙ্গে সঙ্গে সড়কের ২ পাশেই এসে হাট বসান। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকারি ক্রেতারা হাজির হন এই হাটে। আসেন আশপাশের এলাকার ক্রেতারাও।
এ ছাড়া যানবাহন থামিয়েও অনেক যাত্রীরা বাঙ্গি কিনে নিয়ে যান। বাঙ্গি চাষে বেশ লাভবান হচ্ছেন এই এলাকার কৃষকরা। নায্য দাম পেয়ে চাষিদের মুখে হাসির ঝিলিক। পেঁপে, পেয়ারা, লিচু ও আম জাম মিষ্টি কুমড়ার সহ বিভিন্ন শাক সবজির পাশাপাশি কৃষকরা সাথি ফসল হিসাবে বাঙ্গির চাষ করছেন। বাঙ্গি চাষ অধিক লাভজনক ও ফলন বেশি হওয়ায় এ উপজেলার কৃষকরা দিন দিন এ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। অন্যান্য ফসল আবাদের চেয়ে অল্প পুজি বিনিয়োগ করে এটি চাষের মাধ্যমে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি সাংসারিক নিত্য প্রয়োজনীয় খরচ মেটাচ্ছেন এ বাঙ্গি চাষের মাধ্যমে।
২০১১ সাল থেকে শুরু করে আনোয়ারা-বাঁশখালী উপজেলার মধ্যবর্তী তৈলারদ্বীপ ব্রীজের পূর্ব পার্শ্বে বাঁশখালী পুকুরিয়া ইউনিয়নে ডুকতেই বাঙ্গি-তরমুজের হাট। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে বড় আকারের বাঙ্গির দাম ১৫০-২০০ টাকা, মাঝারির দাম ১০০-১৫০ টাকা এবং ছোটটির দাম ৫০-৫৫ টাকা। প্রতিদিন দুই শতাধিক ব্যবসায়ীরা এসব ফল নিয়ে ভোর সকালে সূর্য উদয় হওয়া থেকে শুরু করে রাত পযর্ন্ত এ ফল বিক্রি করেন সাধারণ যাত্রীদের কাছে। এমনকি চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিকল্প পিএবি প্রধান সড়ক দিয়ে আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া(আংশিক), পেকুয়া, চকরিয়া, কুতুবদিয়া-মহেশখালীসহ কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চলাচল করা যাত্রীরাও গাড়ি থামিয়ে কিনে নেন সুস্বাধু এসব ফল।
সরেজমিনে গতকাল বুধবার সকালে পুকুরিয়া চাঁদপুর তৈলারদ্বীপ ব্রীজের ২ পাশেই প্রধান সড়কে বাঙ্গি বিক্রি করতে আসা চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১১ সালের শুরুর দিকে প্রথম প্রথম কয়েকজন চাষি সড়কের উপর বাঙ্গি রাখতেন স্তুপ করে। প্রতিনিয়ত পথচারীরা ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে কিনে নিয়ে যেতেন। তাদের দেখাদেখি অন্যান্য চাষিরাও ওখানে বাঙ্গি ও তরমুজের হাট বসাতে শুরু করেন। এভাবে এই সড়কেই বিচরণ হতে থাকে বাঙ্গির হাট।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই মৌসুমে বাঁশখালী উপকূলীয় পুকুরিয়া, সাধনপুর, বানীগ্রাম, বাহারছড়া, গন্ডামারা, সরল, খানখানাবাদ, চাম্বল, নাপোড়া ও পুঁইছড়ি এলাকায় তরমুজ ও বাঙ্গির ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে। প্রতিবছরের মত এ বছর ফলন হয়েছে ভাল। তবে শুরু থেকেই ক্রেতাদের মধ্যে তরমুজের প্রতি আগ্রহ বেশি থাকায় দাম একটু বাড়তি রয়েছে। তবে শেষের দিকে কমে আসবে বলেও জানান কৃষকরা।
পুকুরিয়ার চাঁনপুর এলাকার চাষী আবুল কাশেম ও ফোরকান বলেন, এ বছর কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবং পোকার উপদব্র কম থাকায় বাঙ্গির লাভজনক উৎপাদন হয়েছে।’ তাই তো পুকুরিয়া অংশের শঙ্খনদীর তীরে আমাদের মত চাষিরা খুশিতে আত্মহারা। উৎপাদিত ফসল নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছেন অনেকে। প্রতিবছরের মত এ বছর আমরা মোটামুটি লাভবান হচ্ছি। এ বছরেও আমরা প্রায় ২ খানি বাঙ্গির চাষ করে বর্তমানে আমরা নায্য মূল্য বিক্রি করে লাভ বান হচ্ছি। আমাদের এই খানকার বাঙ্গি অনেক সুস্বাদু হয়। মানুষ অগ্রিম টাকা দিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে এসে বাঙ্গি ও তরমুজ ক্রয় করে। আমরা প্রায় ফল তৈলারদ্বীপ ব্রীজের পাশে পিএবি প্রধান সড়কে বিক্রি করি।
গত ৭-৮ বছর যাবৎ এই সড়কে আমরা খুচরা দামে বিক্রি করি। সকাল থেকে রাত পযর্ন্ত এই সড়কে চলাচলকারীরা পথচারীরা এইখান থেকে বাঙ্গি ও তরমুজ ক্রয় করে। এতে করে বাজারে নিয়ে যাওয়ার ঝামেলা কমে গেছে আমাদের। তবে অনেক ব্যবসায়ীরা অগ্রিম টাকা দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের কাছ বাঙ্গি কিনে নিয়ে যায়। যার কারণে কোনো টেনশন করতে হয় না।
চট্টগ্রাম শহর থেকে পেকুয়া মগনামা যাওয়ার পথে কুতুবদিয়ার বাসিন্দা শাহরিয়ার মুহাম্মদ ছোটন বলেন, আমি প্রতি সপ্তাহে নিজ কর্মস্থল চট্টগ্রাম শহর থেকে কুতুবদিয়া যাওয়ার পথে এইখান থেকে প্রতিনিয়ত বাঙ্গি ক্রয় করি। এখানকার বাঙ্গি অত্যন্ত মজার সুস্বাধু। দামেও কম। এখানে অনেক কম দামে ভালো বাঙ্গি পাওয়া যায়। তাই এই পথে যাতায়াত করার সময় সুযোগ থাকলেই বাঙ্গি কিনে নেই। এখানকার বাঙ্গি যেমন সুস্বাদু, তেমন পুষ্টি সমৃদ্ধ। আমার মনে হয় এই উপজেলার বাঙ্গি ও তরমুজের কদর সারাদেশেই।
বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিসার আবু ছালেক বলেন, ‘বাঙ্গির বাম্পার ফলন দেখে মন জুড়িয়ে যায়। যেকোনো সহযোগিতার জন্য আমরা কৃষদের পাশেই আছি। অনেক কৃষক আমাদের থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা এবং পরার্মশ নিয়ে থাকে। উপজেলার কয়েকটি এলাকার মাটি বাঙ্গি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বাঙ্গি চাষীদেরকে কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হয়।
কৃষকরা আরো একটু পরিশ্রমী হলে বহুমুখী ফসল উৎপাদন করে আরও বেশি সফল হতে পারবে।