মো. নিয়াজুল হক। হেড অব এইচ.আর ও অ্যাডমিন। বর্তমানে কাজ করছেন সাইডার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। ২০১০-এ আইইউবি হতে বিবিএ সম্পন্ন করে ২/৩ বছর বিভিন্ন কোম্পানিতে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ২০১৩ সাল থেকে কাজ করছেন সাইডারে। এর আগে বাংলা লায়ন, পেনিনসুলা হোটেল ও পুবালী ব্যাংকে কাজ করেছেন তিনি। গত ৫ বছর ধরে একজন প্রফেশনাল ট্রেইনার হিসেবে বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানিতে লিডারশীপ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন। এইসব প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তরুণদের সঠিক দিক নির্দেশনাও দিয়ে যাচ্ছেন। দক্ষ ও যোগ্য কর্মী নিয়োগ দেয়া যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ।কর্মী বাছাইয়ের এ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করার দায়িত্ব পালন করেন একজন হিউম্যান রিসোর্স অফিসার বা এইচআর ম্যানেজার । বর্তমান চাকুরির বাজারে এইচ.আরকেন গুরুত্বপূর্ণ, কোথায় এর অবস্থান, চাকুরির বিধি-বিধান সব বিষয় নিয়ে চট্টগ্রাম সংবাদ অনলাইনে কথা বলেছেন তিনি। চলুন দেখা যাক-
চট্টগ্রাম সংবাদ : কি কি যোগ্যতা থাকলে একজন হিউম্যান রিসোর্স অফিসার হওয়া যায়?
নিয়াজুল হক : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি। এইচ.আর ম্যানেজার পোস্টে কাজ করার জন্য অবশ্যই কিছু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও সনদ দরকার। মেজর এইচ.আর সহ বি.বি.এ যদি করা থাকে অথবা এম.বি.এ ইন এইচ.আর বা ডিপ্লোমা ইন এইচ.আর, তাহলে ভালো। শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে যে বিষয়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ, তা হল মানবিক মূল্যবোধের সংরক্ষণ। নৈতিকভাবে প্রবুদ্ধ, বিশ্বজনীন সাতত্য, ইনসাফ, অপরের অধিকার ও মর্যাদার প্রতি সংবেদনশীল এবং সর্ব অবস্থায় অপরের চাহিদার প্রায়োর বিবেচনার বোধ যার মধ্যে বিদ্যমান তার পক্ষে একজন ভালোএইচ.আর ম্যানেজার হবার সম্ভাবনা সর্বাধিক।সেবাব্রতসহ নিজেকে প্রতিপক্ষের স্থানে রেখে পরিস্থিতির বিচার, সহমর্মিতা প্রদর্শন,সময়নিষ্ঠা ইত্যাদি গুণাবলী তার স্কিল হিসেবে পরিগণিত হতে পারবে। উপর্যুক্ত মূল্যবোধ এবং স্কিলের সমবায় হলেন একজন ভালো এইচ.আর ম্যানেজার।
চট্টগ্রাম সংবাদ : বর্তমান বিশ্বের সাথে মিলিয়ে আমাদের দেশে এর ব্যাপ্তি, পরিধি কতটুকু?
নিয়াজুল হক : রাজধানী ঢাকা এইচ.আর বা মানব সম্পদ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিপুল পরিসর সৃষ্টি করতে পেরেছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। মানব সম্পদ উন্নয়নের প্রাতিষ্ঠানিক ধারণা ও এর অনুসরণে ঢাকা যতটুকু অগ্রসর হতে পেরেছে, চট্টগ্রামে এর তত বিকাশ ঘটেনি।। হ্যাঁ, চট্টগ্রামের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যেকটিতে মানব সম্পদ উন্নয়ন বিভাগ রয়েছে এবং তারা নিজ নিজ সামর্থ্য বা সুবিধা অনুযায়ী কাজ করছে। তবে, যে ব্যাপারটি বলা প্রয়োজন তা হল, এইচ.আর বা মানব সম্পদ উন্নয়ন বলতে যে বিপুলায়তন কাজের পরিসর উন্মুক্ত হবার কথা তা এখনও যথাযথ ভাবে হচ্ছে না। আপনি যদি, উদাহরণ হিসেবে চট্টগ্রামের এডুকেশন ইন্ডাস্ট্রির দিকে দৃষ্টি দেন দেখবেন, খুব কম স্কুল এইচ.আর বা মানব সম্পদ উন্নয়ন বিভাগকে গুরুত্ব দিয়েছে। দুঃখজনকভাবে, অধিকাংশ স্কুলই এই আধুনিক কর্মপদ্ধতি এবং এ বিভাগ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন অথবা একে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করেন না। এর মধ্যে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম রয়েছে সাইডার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। সাইডার কর্তৃপক্ষ এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ এইচ.আর বা মানব সম্পদ উন্নয়ন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং যে কোনো উন্নত কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সমমান এইচ.আর সার্ভিস প্রদান নিশ্চিত করেছেন।এতে প্রতিষ্ঠানের কাজের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হতে পারছে। যা হোক আমরা কাজ করে চলেছি, যথার্থ এইচ.আর বা মানব সম্পদ উন্নয়ন কাজের প্রাতিষ্ঠানিকিকরণ হতে আমাদের যে ঊনতা রয়েছে তা কাটাবার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
চট্টগ্রাম সংবাদ : একজন তরুণ কেনো এইচআরে নিজের ক্যারিয়ার বিল্ডআপ করবে?
নিয়াজুল হক : একজন তরুণ কেন এইচ.আর বা মানব সম্পদ উন্নয়ন বিভাগে তার ক্যারিয়ার সন্ধান করবেন- প্রথমত এই জগতটাতে আত্মসন্তুষ্টির ব্যাপার আছে। একজন এইচ.আর অফিসারের কাজের ক্ষেত্র বিশাল,ফলে ব্যাপকভাবে এতে অবদান রাখা যাবে। পক্ষান্তরে অন্য কোনো চাকুরি যেমন বিপণন ইত্যাদি চরম একঘেয়ে এবং ক্লান্তিকর জব। ওখানে অবাধ পরিসর নেই, মনে হয় একটা রোবোটিক জব রাতদিন শুধু অর্থের হিসাব আর যোগান দেয়া। কিন্তু একজন এইচ.আর অফিসার বা ম্যানেজার শত শত মানুষের জীবন বা জীবনমান উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা করেন। গবেষণা করেন। অপরের সুবিধা ও স্বার্থের বিষয়ে যথার্থ মানবিক দৃষ্টি দেন। এ কাজ গুলো মানবিক সংবেদনার উচ্চ স্তর থেকে করতে জানলে তা আর অফিস জব থাকেনা, বরং মহৎ কর্ম হয়ে ওঠে। অপরের সুবিধা ও স্বার্থকে যখন প্রাতিষ্ঠানিক কাজের ভেতর দিয়ে বাস্তবায়ন করা যায় তখন তার তৃপ্তি ও কল্যাণবোধের অভিপ্রকাশ ভাষায় অসম্ভব। একজন এইচ.আর অফিসার বা ম্যানেজার একটি প্রতিষ্ঠানের অকল্পনীয় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারেন। এটা এমনকি সমাজকেও প্রভাবিত করতে পারে। এটি ব্যক্তিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা পূরণের দারুণ সুযোগ সৃষ্টি করে। যখন অনেক মানুষের অনেক ধরনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে বিবেচনার পর্যায় উপস্থিত হয় তখন আসলে একটা সোশ্যাল স্কিল অর্জন সম্পন্ন হয়ে যায়! অন্য অনেক জব-এ এধরনের কিছুই তেমন নেই। তারুণ্যের চরম অবক্ষয়ের সময়ে আমি মনে করি মেধাবীদের এইচ. আর-এ কাজের সুযোগ নেয়া উচিত। কেননা এখানে ক্যারিয়ারের পাশাপাশি নৈতিক ও মানবিক মানুষরূপে গড়ে ওঠার সুযোগ আছে।
চট্টগ্রাম সংবাদ : একজন হিউম্যান রিসোর্স অফিসারের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
নিয়াজুল হক : এইচ.আর বা মানব সম্পদ উন্নয়ন অফিসার যখন কোনো একটি প্রোগ্রাম যেমন পিকনিক বা গেট টুগেদার আয়োজন করবেন তখন তাকে একজন দক্ষ সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করতে হয়। যখন তিনি কোনো এমপ্লয়ির বিপদ বা অসুস্থতাজনিত বিষয় দেখভাল করেন তখন তার কাজের ধরন ও পরিধি দাপ্তরিক সীমাকে অতিক্রম করে যায়। এখানেই এইচ.আর বা মানব সম্পদ উন্নয়ন বিভাগের অনন্যতা। এখানে একজনের পক্ষে দক্ষ প্রফেশনাল হবার পাশাপাশি মহৎ মানুষ হবার অমিত সম্ভাবনা বিদ্যমান।
চট্টগ্রাম সংবাদ : যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এইচ আরে ডিগ্রী নিয়েও অনেকে অন্য সেক্টরে কাজ করে সেটাকে আপনি কিভাবে দেখবেন বা তাদের জন্য করণীয়?
নিয়াজুল হক : এইচ.আর বা মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয় নিয়ে যারা পড়াশোনা করেছেন পরবর্তীতে একই ফিল্ডে জব শুরু করেছেন এবং তা ছেড়ে অন্য কোনো ফিল্ডে ক্যারিয়ার সন্ধান করছেন, আমি দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি, তারা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে দৈন্যদশায় ভুগছেন। তারা জানতেন না কেন তারা একটি বিষয় বেছে নিচ্ছেন আবার কেনই বা তা ত্যাগ করছেন। এটা বাস্তবে আমাদের দুর্বল ও প্রায় উদ্দেশ্যহীন শিক্ষাব্যবস্থার পরিণাম। কেননা, আমাদের শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে যে কোনো প্রকার একটা চাকুরির সংস্থান! ফলে শিক্ষার বহুমাত্রিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের কোনো আয়োজন এখানে উপস্থিত নেই। এ প্রজন্মের প্রায় বোধহীন তরুণেরা জানেন না শিক্ষার লক্ষ্য একমাত্রিক জীবিকা সন্ধান নয়। জীবনমান উন্নয়ন এবং ব্যক্তি ও সমাজের বৃহত্তর কল্যাণ নিশ্চিত করাই এর আসল লক্ষ্য। আমাদের এ দৈন্য দশার অবলোপ করতে হলে শিক্ষার গোড়ায় হাত দিতে হবে। প্রতিদিনের রুটিন ক্লাসে যেসব বিষয়গুলোর পাঠ দান হচ্ছে সেসব বিষয়ের পাঠ দান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছাত্রদের বোঝাতে হবে। কেন সে ভাষা শিখবে– এর লক্ষ্য ও প্রয়োগ ক্ষেত্র কী? কেন সে গণিত বা ফিজিক্স অথবা ধর্মশিক্ষা নেবে? অথবা, যে কোনো বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণের বাস্তব ও নৈতিক লক্ষ্যসমূহ কী? প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরুতেই যখন একজন ছাত্র শিক্ষার নৈতিক-দার্শনিক ও বাস্তব-প্রায়োগিক উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য সম্পর্কে প্রাথমিক অথচ গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান পেয়ে যাবে তখন তার পক্ষে একজন প্রবুদ্ধ জ্ঞানী মানুষ হয়ে ওঠা সম্ভব হবে। এভাবে একটি সমৃদ্ধ সমাজ সৃষ্টি হবে। একটি উন্নত জাতি তৈরি হবে।
আমার নিজের ক্ষেত্রেও এহেন পরিণাম ঘটতে পারতো। আমি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের দ্বিধাদ্বন্ধের মাঝে এইচ.আর বা মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি তিনি আমার জন্য একটি অসাধারণ বিষয় নির্ধারণ করে রেখেছিলেন এবং উচ্চতর জ্ঞান অর্জনের সুযোগ করে দিয়েছেন। নিজের অজান্তেই আমি আমার জন্য সর্বোত্তম বিষয়টি অধ্যয়ন করেছি এবং চট্টগ্রামের একটি নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হেড অব এইচ.আর হিসেবে কাজ করছি। দীর্ঘ ছয় বছরের হেড অব এইচ.আর-এর কাজের অভিজ্ঞতায় উপলব্ধি করেছি,এইচ.আর বা মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়টি গড়পড়তা আর দশটা সাবজেক্টের মত কিছু নয়। বহুমাত্রিক নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন ও তার প্রয়োগের অবারিত স্কোপস এখানে রয়েছে।
চট্টগ্রাম সংবাদ : তরুণদের জন্য কিছু বলুন, যারা এইচ আরে ক্যারিয়ার গড়তে চায়?
নিয়াজুল হক : পারপাস অব লাইফ বা জীবনের লক্ষ্য কী- এখনকার তরুণদের উচিত এ প্রশ্নের যথাযথ উত্তর সন্ধান করা। দুঃখজনক ব্যাপার যে এখনকার তারুণ্য জীবনের ভিশন সম্পর্কে অজ্ঞ এবং পরিণামে তার কোনো মিশন নির্ধারিত নেই। তাদের ভিশন-মিশন বাড়ি, মোটর কার এবং জমকালো একটা ভোগী জীবনের পরিবৃত্তে আটকে পড়েছে। অথচ এটা জীবনের এক মহৎ অপচয়। একজন মানুষের জীবন সামান্য বস্তুগত সমৃদ্ধির গুহায় আটকে থাকার পরিণাম ভয়াবহ। যদি কাঙ্ক্ষিত সব বস্তুগত উপকরণ একজন তরুণের হস্তগত হয়, তারপর কী! তরুণদের বুঝতে হবে, জীবনের দৈহিক আকাঙ্ক্ষার পূরণ বস্তু কিছুটা করতে সক্ষম। কিন্তু তার নৈতিক ও আদর্শিক জীবনের শূন্যতা কীসে পুরণ হবে! তরুণদের বলব, জীবনের বৃহৎ ও মহত্তর লক্ষ্যের সন্ধান প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সীমিত পরিসরে না খুঁজে নিজেকে বড় পরিসরে হাজির করুন। পাঠ করুন বিভিন্ন উন্নত বই। নজর রাখুন আন্তর্জাতিক সমাজের পারস্পরিক লেনদেন ও সম্পর্কের উপর। র্সবসাম্প্রতকি জ্ঞান ও তার রচয়তিাদরে জানুন। ধর্মকে জানুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন। সর্বসাম্প্রতিক জ্ঞান ও তার রচয়িতাদের জানুন। জীবন যেহেতু অস্থির, সেহেতু পরিবর্তনের নানা অনুসঙ্গের সাথে জ্ঞানগতভাবে যুক্ত থাকুন। স্বার্থ আর পরার্থের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করুন। নিজের চিন্তা ও ধ্যানকে বড় চিন্তা ও ধ্যানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। একটা হলিস্টিক লাইফ যদি আমাদের উদ্দিষ্ট হয় তাহলে অধ্যয়ন অনিবার্য। রিসার্চ এবং অধ্যয়নে গভীর অভিনিবেশ থাকলে একজন তরুণ জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে বস্তুগত প্রাপ্তিকে একমাত্র বিবেচনা করবেন না।
তারা বুঝবেন কেন আজকের সমাজ এত বস্তুগত সমৃদ্ধি সত্ত্বেও নৈরাজ্যের অতলে নিমজ্জিত হচ্ছে, কেন তরুণরা আত্মহত্যার মতো চরম গ্লানিকে বেছে নিচ্ছে, কেন খুন, ধর্ষণ এত সহজসাধ্য হতে পেরেছে! আমি মনে করি, বাস্তব সমাজকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে তরুণরা এখানে কোনো আশা দেখতে পাবেন না। এ কারণ, শিক্ষার গোড়ার ভ্রান্তি। এ ভ্রান্তি তরুণদেরকেই দূর করতে হবে। জীবনের আসল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যের উপলব্ধি ঘটতে পারলে বস্তুগত সমৃদ্ধি এবং নৈতিক জীবনের মধ্যে একটা ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। সেরকম সম্ভাবনাময় তরুণরাই হবে এদেশ এবং বিশ্বের সম্পদ যারা ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠা করবেন অনেকগুলো উন্নত স্কুল যেখানে ছাত্ররা শিখবে প্রকৃত শিক্ষা। যেখানে পাঠ দান হবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইতিহাস। ভাষা, ধর্ম, বিজ্ঞান, গণিত প্রভৃতি বিষয়ের যৌক্তিক অভিজ্ঞান লাভ করবে ছাত্ররা। জাগতিক ভাবে রচনা হবে একটি মানবিক সমাজ।
কূপমণ্ডুক না হয়ে উদারহৃদয় হোন। অপরের মতকে সম্মান করুন। আর এসব কথা বা পরামর্শকে শুষ্ক বচন মাত্র বিবেচনা না করে নিজের জীবন ও প্রফেশনের সাথে সংযোগ সমন্বয় করুন। আলহামদুলিল্লাহ, এসব কথা আমি কেবল কথার কথারূপে উপস্থাপন করছি না, আমার চিন্তা, অভিজ্ঞতা এবং অন্তর্দৃষ্টির সিন্থেসিস হিসেবে হাজির করছি।
চট্টগ্রাম সংবাদ : একজন হিউম্যান রিসোর্স অফিসারের মাসিক আয় কেমন হতে পারে, কোন সেক্টরে এইচ আর কাজ করে?
নিয়াজুল হক : পঁচিশ থেকে চল্লিশ এমনকি এক পর্যায়ে লক্ষাধিক টাকা আয়ের সুযোগ পেতে পারেন একজনএকজনহিউম্যানরিসোর্সঅফিসার।এটা কিছুটা নির্ভর করে কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে কাজ করে তার ওপর। তবে ট্যালেন্টেড তরুণদের জন্য নামী প্রতিষ্ঠানগুলো দুয়ার উন্মুক্ত রাখে। সেক্ষেত্রে আয়ের পরিধি প্রত্যাশিত সীমা অবশ্যই স্পর্শ করবে। তবে একজন দূরদর্শী তরুণ কয়েক লক্ষ টাকা মান্থলি উপার্জন করতে পারে যদি যে তার কাজে মৌলিক ভ্যালু অ্যাড করতে সক্ষম হয়। এইচ.আর-এর কাজ অনেক কোয়ালিটিফুল কাজ। যদিও আমাদের দেশে এ বিভাগটির সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা বা অবমূল্যায়ন রয়েছে, এইচ.আর এবং অ্যাডমিনকে এক মনে করা হয়। বাস্তবে দুইটা সম্পূর্ণ আলাদা বিভাগ। অনেক প্রতিষ্ঠানে ট্রেনিং এন্ড ডেভলপমেন্ট পোস্টও আছে। রিক্রুটমেন্ট এন্ড সিলেকশন ম্যানেজারও থাকে।
একজন এইচ.আর অফিসারকে ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট বা পারফরমেন্স জানতে হবে। একজন এমপ্লয়ির ইভ্যালুয়েশনের যে সিস্টেমেটিক পদ্ধতি রয়েছে তার যথাযথ অ্যাপ্লিকেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। মূলতঃ চারটি বিভাগে এইচ.আর অফিসারকে কাজ করতে হয়-রিক্রুটমেন্ট এন্ড সিলেকশন, কম্পানসেশন এন্ড বেনিফিট, পারফরমেন্স ম্যানেজমেন্ট এবং ট্রেনিং এন্ড ডেভলপমেন্ট। এ অর্গানোগ্রাম ঠিকভাবে বোঝা এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে সচেষ্ট হলে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি আসবে প্রতিষ্ঠান ও এইচ.আর অফিসারের জীবনে।
চট্টগ্রাম সংবাদ : নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন?
নিয়াজুল হক : বর্তমানে আমি, আগেই উল্লেখ করেছি সাইডার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে কাজ করছি হেড অব এইচ.আর এবং অ্যাডমিন হিসেবে। সাইডারে কাজ করছি ২০১৩ সাল থেকে। এর আগে ২০১০-এ আইইউবি হতে বিবিএ সম্পন্ন করে ২বা৩ বছর বিভিন্ন কম্পানিতে স্ট্রাগল করে শেষপর্যন্ত সাইডারে থিতু হই। আমি বাংলা লায়নে কাজ করেছি, পেনিনসুলা হোটেল ও পুবালী ব্যাংকে কাজ করেছি। বিগত ৫ বছর ধরে আমি একজন প্রফেশনাল ট্রেইনার হিসেবে বিভিন্ন বড় বড়কম্পানিতে লিডারশীপ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি। এইসব প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আমি তরুণ সমাজকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়েছি। আমার গত ১০ বছরের কর্মজীবনে যেসব ভুল ও অদক্ষতাগুলো চিহ্নিত করেছি তার প্রতি তরুণদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি যাতে ঐসব ক্ষতির দায় তাদের পোহাতে না হয়। আমি তরুণদের শেখাতে চাই জীবনের পারপাস কী এবং তার বাস্তবায়নে কী ধরণের বাস্তব পন্থা অনুসরণ করতে হয়। প্রথাগত ট্রেইনার অথবা মোটিভেশনাল বক্তাদের চাইতে একটা জায়গায় আমি নিজের স্বাতন্ত্র্যত দাবী এইভাবে করি যে, আমি তরুণদের কেবল ক্যারিয়ারিস্টরূপে প্রতিষ্ঠার প্রতিই কেবল ধাবিত করি না বরং জীবনের বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জগুলোর দিকে তাদের উৎসাহিত করি সাথে সাথে সেসব চ্যালেঞ্জগুলোর বৈচিত্র্যেপূর্ণ দিক ও তার সম্মুখীন হবার পথ-নির্দেশ করি। আমি এটা করতে সক্ষম হই বিভিন্ন বিষয়ে লব্ধ জ্ঞান ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য-উপাত্তের সঠিক প্রয়োগের দ্বারা। আমি অত্যন্ত অভিনিবেশি একজন ছাত্র যে তার বিষয় সম্পর্কে সর্বসাম্প্রতিক জ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পছন্দ করি। ফলে দেশ এবং বিশ্ব সমাজের আশা ও হতাশার জায়গাগুলো আমি চিহ্নিত করতে পারি।
তরুণদের শেখাতে কিংবা দেখাতে চাই, বিশ্ব একটা মনো-দৈহিক বৈকল্যের পর্যায় অতিক্রম করছে। এর থেকে উত্তরণের যে উপায় আমি আবিষ্কার,অনুমান করতে পারি তা শেয়ার করতে চাই তরুণদের সাথে। আমার ট্রেনিং গ্রন্থবদ্ধ মডিউল শুধু অনুসরণ করে না বরং এটা একটা রিয়েল লাইফ ট্রেনিং যা অধীত বিদ্যা আর বাস্তব অভিজ্ঞতাকে সমন্বয় করে থাকে।
আমি আমার কর্মজীবনের সাথে উপলব্ধ জ্ঞানের যে সমন্বয় করতে শিখেছি, আমি মনে করি তার নৈতিক ও বাস্তব মূল্য আছে। সুতরাং, এ প্রজন্মের তরুণরা তা হতে উপকৃত হতে পারবে এবং একটা সার্থক জীবনের ধারণাকে বাস্তব রূপ দিতে সক্ষম হবে। আমি প্রকৃতপক্ষে মানুষ গড়ে আনন্দ পাই। কারো যদি অর্থসংকট থাকে অথচ শেখার আগ্রহ আছে আমি তাকেও সহযোগিতা করতে চাই। আমাকে উপকারী জ্ঞান দেওয়ার জন্য আমি আল্লাহর কাছে সত্যিই কৃতজ্ঞ।