লাইনে দাঁড়িয়েও মেট্রোরেলে চড়তে না পেরে মন খারাপ তাদের

দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও মেট্রোরেলে উঠতে না পেরে ফিরে গেছেন হাজী মোহাম্মদ আবুল হোসেন মিয়া। ছবি : এনটিভি

সময় তখন সকাল পৌনে ১২টা। দিয়াবাড়ি মেট্রোরেল স্টেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন অন্তত ৫০০ মানুষ। এমন সময় মেট্রোরেলের স্টেশন গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন থেকে মানুষ লাইন ভেঙে যে যেভাবে পারে চলে যেতে শুরু করেন।

হাজী মোহাম্মদ আবুল হোসেন মিয়া। বয়স ৯০ বছর। তিনি স্ত্রীসহ পরিবারের মোট ছজনকে নিয়ে এসেছিলেন রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি মেট্রোরেল স্টেশনে। সকাল ১০টার সময় এখানে এসে লাইনে দাঁড়ান আবুল হোসেনসহ তার পরিবার। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত মেট্রোরেলে না চড়েই ফিরতে হয়েছে বাসায়। কারণ, অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে এবং নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে আজকের মতো রেল চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

আবুল হোসেন মন খারাপ করেই বলছিলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম ট্রেনে চড়ব। কিন্তু হলো না। এটা সত্য, আজ অনেক মানুষ এসেছে এখানে। কিন্তু, সরকারের উচিত ছিল, আজকের জন্য হলেও সময় বাড়ানো। তারা নিজেরাও তো জানে, এতো মানুষ ১২টার আগে ট্রেনে উঠতে পারবে না।’

গাজীপুর থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন মোহাম্মদ শফিক। তিনি দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও মেট্রোরেলে উঠতে পারেননি। বলছিলেন, গাজীপুর থেকে এসেছি, কাল আবার আসতে পারব না। ফলে, আজ সময় বাড়াতে হতো। আর কবে আসব জানি না। পুরো কষ্টটাই বৃথা গেল।

শুধু আবুল হোসেন কিংবা শফিক নয়, এমন শতশত মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও ট্রেনে চড়তে পারেননি। তাদের কেউ মন খারাপ করে স্টেশন ছেড়েছেন, কেউ পরে সুযোগ হবে মর্মে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে স্টেশন ত্যাগ করেছেন।

শাহীন হোসেন একজন প্রবাসী। ১৬ বছর ধরে থাকেন লন্ডনে। দেশে এসেছেন গত রোববার। আজ এসেছিলেন ট্রেনে চড়বেন বলে। কিন্তু, দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও উঠতে পারেননি। শাহীন বলছিলেন, ২৭ বছর ধরে কয়েকটি দেশে থেকেছি। আমেরিকা ও লন্ডনে মেট্রোরেলে উঠেছি। কিন্তু, দেশের ব্যাপারটাই আলাদা। তাই এখানে এসেছি। মন খারাপ হলো।

বেলা ১১টার দিকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অনেককে হতাশ হতে দেখা যায়। তখনও দীর্ঘ সারি যাত্রীদের। তাদের তখন একটাই প্রশ্ন ছিল, উঠতে পারব তো ট্রেনে? শেষ পর্যন্ত তারা আর উঠতে পারেননি।

রীতা ধর নামের এক বয়স্ক নারী এসেছিলেন উত্তরা থেকে। তিনি ট্রেনে না চড়েই ফিরে গেছেন। যাওয়ার সময় বলছিলেন, আবার আসব ট্রেনে চড়তে। আজ একটু মন খারাপ হয়েছে। তবে, ইতিহাসের সাক্ষী তো হলাম।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.