বন কর্মকর্তাদের কার্যালয় ঘেরাও হবে: রিজওয়ানা হাসান

 

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পাহাড়ে-বনাঞ্চলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সক্রিয় পরিবেশ কর্মীদের নির্বিঘ্নে কাজ করতে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘যেখানে দেশে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের লালন হওয়ার কথা, সেখানে আমরা উল্টোটা ঘটতে দেখছি।’

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মাহফুজ রাসেলের ওপর হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে তিনি একথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিসহ ১০টি সংগঠন রোববার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও নাগরিক সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা দেখি মাঝরাতে সাংবাদিকের কোমরে দড়ি দেওয়া হয়। তাহলে কেন দেখি না পরিবেশ রক্ষাকারীদের ওপর হামলায় জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে? তাহলে আমরা কি একটি মূল্যবোধহীন জাতিতে পরিণত হচ্ছি? তা হতে পারে না। এই জাতির মূল্যবোধ হবে সহযোগিতার–সহমর্মিতার।’

পরিবেশ রক্ষাকারীদের ওপর হামলায় জড়িতদের ‘পরিবেশ ধ্বংসকারী’ আখ্যায়িত করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সংবিধানের ১৮(ক) ধারায় রাষ্ট্রকে বর্তমান ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে জীববৈচিত্র্য রক্ষার কথা বলা হয়েছে। যে মানুষটি উন্নত বিশ্বের বিলাসী জীবন ফেলে খাগড়াছড়ির গভীর জঙ্গলে জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য কাজ করছেন, তার ওপর ধারাবাহিক হামলা হচ্ছে। মানুষ তার মা, ভাই, সন্তানকে ভালোবাসে। কিন্তু কয়জন মানুষ আছেন যারা রাস্তার কুকুরকে ভালোবাসেন, কয়জন মানুষ আছেন বনের শিয়াল–হরিণকে নিয়ে চিন্তা করেন?’

তিনি বলেন, ‘বন্য পশুপাখির প্রতি ভালোবাসা নিঃস্বার্থ, এই ভালোবাসা সমাজের মানুষ কেমন সেটাই সবাইকে জানতে শেখায়, বুঝতে শেখায়। আমাদেরও পরিবেশ নিয়ে যারা কাজ করেন, বন্য প্রাণী নিয়ে কাজ করেন, তারা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেন। তাদের ওপর আঘাত মানে জাতীয় মূল্যবোধের ওপর আঘাত। খাগড়াছড়ির রাসেলসহ সব পরিবেশকর্মীকে নির্বিঘ্নে কাজ করতে দিতে হবে। রাসেলের ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সরকার যদি আমাদের দাবি না মানে, আজ চট্টগ্রামে প্রতিবাদ সমাবেশ করছি, ভবিষ্যতে খাগড়াছড়ির বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম, চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন, অগ্নিবীণা পাঠাগার, গ্রিন ফিঙ্গারস, পরিবেশ ফোরাম ৮৮, সেভ দ্য নেচার, বাংলাদেশ ওয়াইল্ড ওয়াচ, স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ ও জলাশয় রক্ষা আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি সংগঠনের প্রতিনিধিরা এই কর্মসূচিতে যোগ দেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সাধার ওণ সম্পাদক বেলার নেটওয়ার্কিং মেম্বার আলীউর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে পরিবেশবিদ অধ্যাপক নোমান আহমেদ সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সচিব জলাশয় রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি আবদুল আলীম, ন্যাপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাশগুপ্ত, বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ, গ্রিন ফিঙ্গারসের কো-ফাউন্ডার আবু সুফিয়ান, রিতু ফারাবি, সাংবাদিক প্রীতম দাশ, সেভ দ্য নেচারের চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন, পরিবেশ ফোরাম ৮৮–এর পরিচালক মঞ্জুরুল কবির বক্তব্য দেন।

উল্লেখ্য, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাটিরাঙ্গায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করে আসা মাহফুজ রাসেলের ওপর গত ১১ এপ্রিল খাগড়াছড়িতে হামলা হয়।

জলাশয় বাঁচাও আন্দোলন

এদিকে জলাশয় বাঁচাও আন্দোলনের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে রোববার সাক্ষাত করেন। এসময় মেয়র বলেন, ‘জলাশয় রক্ষায় চট্টগ্রামের সকলকে সোচ্চার হতে হবে। প্রতিটি এলাকায় আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে যাতে ভূমিদস্যুরা জলাশয় ভরাট করে দালান বানাতে সাহস না পায়। জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।’

জলাশয় বাঁচাও আন্দোলনের উদ্যোক্তা চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক আবদুল আলীম নগরীর বলুয়ারদীঘিসহ চট্টগ্রামের বিপন্ন জলাশয়ের অবস্থা মেয়রের কাছে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আন্দোলনে আছি। কোনো হুমকিধমকি বা প্রলোভনের মুখে এই আন্দোলন থেকে এক ইঞ্চিও সরে আসব না।’

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.