যোগ্যতা না থাকার পরও অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ, মামলা করল দুদক

আবেদনের যোগ্যতা না থাকার পরও অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেয়ে সরকারি বেতন ভাতা নেওয়ার অভিযোগে রংপুরের সমাজ কল্যাণ বিদ্যাবিথী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ নাহিদ ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক। এছাড়া তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রেও নিয়মের ব্যতয় ঘটানো হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। তবে দুদকের এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন অধ্যক্ষ নাহিদ ইয়াসমিন।

প্রায় দুই বছর অনুসন্ধান শেষে মঙ্গলবার মামলাটি করেন দুর্নীতি দমন কমিশন, রংপুরের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফ। সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমান সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘নাহিদ ইয়াসমিনের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান শেষে মামলাটি করা হয়েছে। দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক রুবেল হোসেন মামলাটির তদন্ত করবেন।’

মামলার এজাহারে জানা যায়, নাহিদ ইয়াসমিন প্রতিষ্ঠানটির ২০০২ সালের ১ মার্চ থেকে ২০০৩ সালের ২৯ জুলাই পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে গভর্নিং বডির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন এবং অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাচিবিক দায়িত্বে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ফলে অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থেকে তিনি নিজেই অধ্যক্ষ পদের প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেন। এ ছাড়া সাজানো একটি নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

জানা যায়, নাহিদ ইয়াসমিন ১৯৮৭ সালের ৭ জুলাই সমাজ কল্যাণ বিদ্যাবিথী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাসের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পরের বছর তিনি এমপিওভুক্ত হন। তিনি ১৯৯৫ সালে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। সেই পদে দায়িত্ব পালনকালে সাবেক অধ্যক্ষের অবসরজনিত কারণে ২০০১ সালের ৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ম্যানেজিং কমিটি সভার সিদ্ধান্তের আলোকে স্থানীয় যুগের আলো পত্রিকায় ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তবে বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা কি হবে তা ইচ্ছাকৃতভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

নাহিদ ইয়াসমিন ১৯৭৭ সালে মাধ্যমিক ও ১৯৭৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এছাড়া ১৯৮২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে স্নাতক পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে এবং ১৯৮৩ সালে একই বিভাগ হতে এম, এ পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। অর্থাৎ, ১৯৯৫ সালে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী তিনি অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ লাভের আবেদন করার জন্য উপযুক্ত ছিলেন না মর্মে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে।

দুদক বলছে, সমাজকল্যাণ বিদ্যাবিথী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় ২০০২ সালের ১৬ নভেম্বর প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে যে ৬ জন প্রার্থী অধ্যক্ষ পদে আবেদন করেন তাদের নাহিদ ইয়াসমিনসহ ৫ জনই ওই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। আর বাকি ১ জন শশাঙ্ক শেখর রায় রংপুরের মাহীগঞ্জ কলেজে উপাধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তবে নাহিদ ইয়াসমিনের চেয়ে বাকি ৫ জনেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি ছিল। তার মধ্যে মর্জিনা খাতুন ও শশাঙ্ক শেখর রায় আবেদন করলেও তারা লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। অধ্যক্ষ পদে আবেদন করা ৬ জনের মধ্যে ৪ জন পরের বছর ২০০২ সালের ১০ জুলাই লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। সেই ৪ জনের মধ্যে নাহিদ ইয়াসমিন সর্বোচ্চ ২৬ নম্বর পেয়ে প্রথম হন এবং তিনি ওই বছরের ৩০ জুলাই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হতে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান।

দুদক জানায়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য ১৯৯৫ সালের ২৪ অক্টোবর জনবল কাঠামো নীতিমালায় অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় শ্রেণীর অনার্সসহ দ্বিতীয় শ্রেণীর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। এ ছাড়া সব পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে। জনবল কাঠামো ১৯৯৫ অনুযায়ী শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে দুইটি তৃতীয় শ্রেণি গ্রহণযোগ্য ছিল না। যেহেতু নাহিদ ইয়াসমিনের অধ্যক্ষ নিয়োগকালীন সময় দুটি তৃতীয় বিভাগ ছিল সেক্ষেত্রে তার শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও ব্যতয় ঘটেছে।

তবে দুদকের এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন অধ্যক্ষ নাহিদ ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ‘মামলার বিষয়টি জানা নেই। তবে কাগজপত্র হাতে পেলে বিষয়টি দেখে বিস্তারিত বলতে পারব।’

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.