নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে বয়ে যাওয়া বন্যায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও স্বাভাবিকতা ফিরে আসেনি। ১০ দিনের অধিক সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পরও এখনও কয়েকটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রিতরা থেকে যাওয়ায় ও বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসায় ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে শিক্ষকরা চাকুরীর কারণে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও খুবই কম সংখ্যক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন বলে প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে আলাপকালে জানা যায়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে ৬৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ২০ লাখ টাকার মত ক্ষতি হয়েছে এমন একটি তালিকা ইউএনও এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পাঠানো হয়েছে বলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. গোলাম মাহবুব জানিয়েছেন। অপর দিকে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বৃহস্পতিবার) মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে ক্ষয়ক্ষতির পূর্নাঙ্গ তালিকা এখনও তৈরী হয়নি বলে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতকানিয়ায় বন্যার পানি আসা শুরু করলে, ৭ আগষ্ট উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩৩টি মাদ্রাসা ও সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৬টি কলেজসহ ২৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষনা করে জনস্বার্থে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগনের মোবাইল নম্বরসহ দেয়া রয়েছে। এছাড়া ৫টি সাইক্লোন সেল্টারকেও আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ঘোষনা দেয়া হয়। তবে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠদানের উপযোগী না হওয়ায় এখনও পুরোপুরি পাঠদান কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
সরেজমিন পরিদর্শন ও বিভিন্ন লোকের সাথে আলাপকালে জানা যায়, উপজেলার ঢেমশা উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তর ঢেমশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ মরফলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাটগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত ১০টির মত বিদ্যালয় এখনও বন্ধ রয়েছে বলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সূত্রে জানা গেছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রিতরা এখনও থেকে যাওয়ায় ও বিদ্যালয়ের আশ-পাশ এলাকার শিক্ষার্থীরা বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠে বিদ্যালয়ে আসতে না পারায় স্কুলে পাঠদান শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা চাকুরীর কারণে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকে বিদ্যালয়কে পাঠদানের উপযোগী করে গড়ে তুলতে কাজ করছে।
ঢেমশা উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া উত্তর ঢেমশা গ্রামের মনোয়ারা বেগম ও মো. আলমগীর বলেন, ঘরের অবস্থা এখনও খারাপ থাকায় স্কুলে রয়ে গেছি। কয়েক দিনের মধ্যে ঘর ঠিক করে চলে যাব।
ঢেমশা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দয়াল হরি মজুমদার বলেন, বন্যার পানি বাড়ার সাথে সাথে বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকার অনেক লোক পরিবার পরিজন ও গবাদি পশু নিয়ে আমাদের বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়। তারা এখনও নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে না পাওয়ায় বিদ্যালয়ে অবস্থান করছেন। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তাঁরা চলে যাবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা করে আগামী রোববারের দিকে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর চিন্তা রয়েছে। ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করে বুধ ও বৃহস্পতিবার স্কুল বন্ধ ছিল। একই কথা জানালেন, ঢেমশা উচ্চ বিদ্যালয় কম্পাউন্ডে থাকা উত্তর ঢেমশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজিমুল ইসলাম চৌধুরী।
স্কুল বন্ধ থাকা কাটগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ্ আলম বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ের ক্যাচম্যান এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকের বই-খাতা ও শিক্ষা সামগ্রী নষ্ট হয়ে গেছে। পাশাপাশি বাড়ি-ঘরও এখনও বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের আসার সড়কও চলাচলের অনেকটা অনুপযোগী। তাই বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম এখনও চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আগামী রোববার থেকে পুরোদমে শ্রেণি কার্যক্রম চালুর আশা করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খোলা থাকা বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চাকুরীর কারণে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকছেন ঠিকই। কিন্তু বিদ্যালয়ের শিক্ষাথীর উপস্থিতির সংখ্যা খুবই নগন্য। ফলে উপজেলার শতকরা ৭০ ভাগ বিদ্যালয়ে পুরোপুরি শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়নি। এখনও ধোয়া মুছার কাজ চলছে।
বিদ্যালয় খোলা রাখা কেরানীহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হামিদা বেগম বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর শিক্ষকরা নিয়মিত উপস্থিত থেকে উপস্থিতির খাতায় স্বাক্ষর করছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীর উপস্থিতির সংখ্যা হাতেগুনা কয়েকজন। যেমন আজ (বৃহস্পতিবার) সব শ্রেণি মিলিয়ে ৬ থেকে ৭ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. গোলাম মাহবুব বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় এ উপজেলার ৬৫ টি বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা ইউএনও এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করেছি। এতে আনুমানিক ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখ করা হয়েছে। কয়েকটি বিদ্যালয়ে এখনও শিক্ষা কার্যক্রম চালু না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিদ্যালয়ের পার্শ্ববতী এলাকা এবং শিক্ষার্থীদের ঘর-বাড়ির পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় এখনও স্কুলের শ্রেনি কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে গত রোববার থেকে পুরো উপজেলায় পুরোদমে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করছি।
সাতকানিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অন্যান্যগুলোতেও ধোয়া মুছার কাজ চলছে। সাতকানিয়ায় সবকিছুই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বাদ যায়নি। আশা করি কয়েকদিনের মধ্যে পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে।