প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে চবি উপাচার্যের প্রশংসা বিকৃত করলো প্রথম আলো


নিজস্ব প্রতিবেদক 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে নিত্যনতুন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি দেখলেই প্রথম আলো পত্রিকার সহ্য হয় না। তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করতে দেখলেই তারা ষড়যন্ত্র শুরু করে, তথ্য বিকৃত করে। তারা অগণতান্ত্রিক উপায়ে পেছনের দরজা দিয়ে অন্য কাউকে ক্ষমতায় বসাতে চায়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও শ্রী অতীশ দীপংকর হলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এসব কথা বলেছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার।

প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট সমাধানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুটি গুরুত্বপূর্ণ হল নির্মাণ করে দিয়েছেন। এ দুটি প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর ২৭ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয়েছে। যার একটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, অন্যটি শ্রী অতীশ দীপংকর হল।

উপাচার্য বলেন, এ হল দুটি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে আমি বক্তব্য রেখেছি। কারণ তিনিই এ দেশের উন্নয়নের প্রতীক। তিনিই এ দেশের জনগণের ভাগ্য বদল করেছেন। তার সিদ্ধান্তেই এ দেশ আজ বিশ্ব মানচিত্রে উন্নয়নের রোল মডেল। আজকে দেশের যে প্রান্তেই তাকাই, শুধুই উন্নয়ন আর আধুনিকতা সমন্বয়। ইউরোপের দেশগুলোর মতই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি তাঁর নেতৃত্বে।

আমি হল উদ্বোধনকালে বলতে চেয়েছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চেয়েছেন বলেই আমি উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়েছি। তিনি আমার উপর আস্থা রেখেছেন। আমি সে আস্থার প্রতিদান স্বরুপ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়ন করেছি। গবেষণা খাতকে সমৃদ্ধ করেছি। আমাদের শিক্ষকরা খুশি মনে গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গবেষণামুখী মনোভাবের ফলে বাজেট কয়েকগুণ বাড়াতে পেরেছি। আজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে আরও এক ধাপ এগিয়েছে দুটি নতুন হল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে। এসব সম্ভব হচ্ছে একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যার কারণে। এ কারণেই উপস্থিত সবার সামনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরুপ আমি বক্তৃতা দিয়েছি। তিনি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন বলেই আমি দায়িত্ব পালন করছি। প্রধানমন্ত্রী যতদিন চাইবেন ততোদিন এ দায়িত্ব আমি পালন করবো শক্ত হাতে৷ আমি কাউকে ভয় পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে থামতে দিবো না। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান, একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। আমার হারানোর কিছুই নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই আমার সাহস, আমার উদ্দীপনা।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে। সরকার বিরোধী অপশক্তি দেশজুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টির নীলনকশার অংশ হিসেবে এসব করতে পারে। তদন্ত হচ্ছে। তবে আমি আমার শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করতে দিইনি। এটা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ। আমি একজন মা হিসেবে সন্তানের ক্ষতি চাইতে পারিনা। নিরপরাধ কাউকে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হতে দিতে পারিনা। তবে অপরাধীদের শাস্তি পেতে হবে।’

জানা গেছে, ২৭ অক্টোবর উপাচার্যের বক্তব্যকে খণ্ডিত করে ‘প্রধানমন্ত্রী চাইলেই চলে যাবো, আপনারা আমাকে আরেকটু সহ্য করুন’ শিরোনাম করে প্রথম আলো অনলাইন চবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। সংবাদ ট্রিবিউন উপাচার্য ড. শিরীণ আখতারের এই বক্তব্যের রেকর্ড সংগ্রহ করে।

রেকর্ড অনুযায়ী উপাচার্যের প্রকৃত বক্তব্য হলো, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন চাইবেন, তখন আমি চলে যাব। এখন উনি চাচ্ছেন না, আমি কী করব? আমাকে থাকতেই হচ্ছে। উনি যখন চাচ্ছেন না, আপনারা আরও কিছুদিন আমাকে সহ্য করুন। উনি যখন বলবেন, তখন আমি সিট ছেড়ে দিয়ে চলে যাব।’

উপাচার্য বলেন, ‘ভিসি, প্রো-ভিসি একটি চলমান প্রবাহ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন চাইবেন, তখন আমি চলে যাব। এখন উনি চাচ্ছেন না, আমি কী করব? আমাকে থাকতেই হচ্ছে। আমারও খুব বেশি আরামের দরকার ছিল। একটু চলে টলে গিয়ে একটু লেখালেখি করা, ঘোরাঘুরি করা। উনি যখন চাচ্ছেন না, আপনারা আরও কিছুদিন আমাকে সহ্য করুন। আপনারা তত দিন পর্যন্ত একটু ভালো রাখুন। আমার বিরুদ্ধে যা বলবেন বলেন, আমার কানে না এলেই হলো। আমাকে কাজগুলো করতে দেন। তবে যত দিন আছি, মাঠ ছেড়ে যাব না।’

শিরীণ আখতার আরও বলেন, ‘আমি বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যা, বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। যে মানুষ সরাসরি যুদ্ধ করেছে, তাঁর স্ত্রী আমি। তাই আমি মাঠ ছাড়ার ভয় পাই না। আমার ওপরে আল্লাহ আছে, নিচে আছে শেখ হাসিনা। আমার আছে সাহিত্যপ্রেম। আল্লাহর প্রতি ভক্তি। আমি তাহাজ্জুদের নামাজ পড়লে সবকিছু ভুলে যাই।’

এদিকে প্রথম আলোর খণ্ডিত বক্তব্য প্রচারের বিষয়ে উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার বলেন, তারা আমার বক্তব্য থেকে নিজেদের মত করে শব্দ খুঁজে নিয়ে সাজিয়ে শিরোনাম করেছে। দুটি হল চালু করতে পারায় আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছি, কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। আর প্রথম আলো কাটছাট সে বক্তব্য বিকৃত করে শিরোনাম করেছে। যা সংবাদপত্র ও সাংবাদিকের নৈতিকতা পরিপন্থী। তারা আমাকে বিব্রত করতেই এই কাজ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এত বড় দুটি হলের উদ্বোধনকে বিতর্কিত করতে চেয়েছে। আসলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে নিত্যনতুন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি দেখলেই প্রথম আলো পত্রিকার সহ্য হয় না। তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করতে দেখলেই তারা ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারা অগণতান্ত্রিক উপায়ে পেছনের দরজা দিয়ে অন্য কাউকে ক্ষমতায় বসাতে চায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিষয়ে প্রথম আলো সবসময় উস্কানিমূলক সংবাদই প্রকাশ করে এসেছে। তাই আমি তাদের বলবো, আপনারা সৎ সাংবাদিকতা করুন। দেশের পক্ষে থাকুন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের পক্ষে থাকুন। মানুষের ভালবাসা নিন। দেশী-বিদেশী অপশক্তির চক্রান্তের অংশ হয়ে নিজেদের বিক্রি করে দিবেন না।’

এর আগে ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.