সাতকানিয়ায় স্লীপ ফান্ডের টাকা হেড শিক্ষিকার লেডিস ব্যাগে

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ডের টাকা ‘নয়ছয়’

সাতকানিয়া প্রতিনিধি 

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া  উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান (স্লিপ) ফান্ডের টাকা ‘নয়ছয়’ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ না করাসহ নানা অনিয়ম করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা (এসএমসি) এর সঙ্গে জড়িত।

এ ছাড়া শিক্ষা অফিস থেকে ভ্যাট ও আয়করের নামে বরাদ্দের টাকা থেকে অতিরিক্ত হারে কেটে নেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ২০২২-২৩ অর্থবছরে সাতকানিয়া  উপজেলার ১৪৯টি বিদ্যালয়ের জন্য স্লিপ ফান্ডের টাকা দিয়েছে।

তথ্যঅনুযায়ী,২০০ পর্যন্ত শিক্ষার্থী থাকা বিদ্যালয়ে ৫০ হাজার টাকা এবং ৫০০ পর্যন্ত শিক্ষার্থী থাকা বিদ্যালয়ে ৭০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত টাকা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যৌথ ব্যাংক হিসাবে রাখা হয়েছে।

সেখানে থেকে উত্তোলন করে সচেতনতামূলক ও প্রয়োজনীয় উন্নয়নমূলক কাজ গত জুন মাসের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল।

কিন্তু সমন্বয়হীনতা আর কিছু প্রধান শিক্ষকের রহস্যজনক ভূমিকার কারণে স্লিপ গাইডলাইন অনুসরণ করে সঠিক সময়ে কাজ করা হয়নি। এ ছাড়া অধিকাংশ বিদ্যালয়ে স্লিপ ওরিয়েন্টেশন সভা, মা সমাবেশসহ প্রাক্কলন মোতাবেক কাজ হয়নি।

বিদ্যালয়ের এমএসসি, পিটিএ কমিটির সমন্বয়ে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ বিদ্যালয়ে তা হয়নি। তবে কাগজে-কলমে কাজ দেখিয়ে স্লিপের টাকা উত্তোলন করে ব্যয় দেখানো হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোথাও টাকা ব্যয় করা নিয়ে কমিটি আর প্রধান শিক্ষক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। আবার কোথাও প্রধান শিক্ষক কমিটিকে পাশ কাটিয়ে ভুয়া প্রাক্কলনের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে টাকা উত্তোলন করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী অর্থ ব্যয় করার জন্য প্রাক্কলন তৈরি, ক্রয় কমিটি গঠন করাসহ অডিট করার কথা থাকলেও একাধিক স্কুলে তা করা হয়নি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষকসহ বেশ কয়েকটি স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্যরা।

এমনই একটি উপজেলার ঢেমশা রোডস্থ কেরানীহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে স্লিপ ফান্ডের টাকা ব্যয়ের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ টাকা কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে- গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নে সদুত্তর দিতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা হামিদা আকতার। পরে তিনি তড়িঘড়ি করে কিছু কাগজপত্র বের করে গনমাধ্যম কর্মীদের দেখান এবং তিনি উপজেলা প্রাথমিক কর্মকর্তার অনুমোদন ছাড়া কোন সাংবাদিকদের বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারবেননা বলে সাফ জানিয়ে দেন।

পরে তার কথা মত গণমাধ্যমকর্মীরা তার সামনেই উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কাশেদুল হককে কল করা হলে তার অনুমোদন সাপেক্ষে তথ্য দিতে বাধ্য হয়।

দুই অর্থ বছরের স্লীপ ফান্ডের টাকার হিসাব গনমাধ্যম কর্মীদের শুধুমাত্র ৬৩৫৫টাকার হিসাব দিলেও তার রেফারেন্সে কোন ভাউচার প্রধান শিক্ষিকা হামিদা আক্তার দিতে পারেননি।

এবং তিনি সাফ জানিয়ে দেন লেজার এবং কমিটি গঠন না করলেও তিনি স্বচ্ছ ভাবে টাকাগুলি খরচ করেছেন তবে সরলমনে লেজার মেইনটেইন করা হয়নি।

পরক্ষণেই তিনি বলেন শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যার ফলে  স্লীপ ফান্ডের টাকার খরচের ডকুমেন্টস পানিতে ভেসে চলে যায়।

এদিকে নথিপত্র ঘেঁটে দেখতে দেখতে একটি সাদা কাগজে দেখা যায় স্কুল উন্নয়নের জন্য চলতি বছরের ২০ই জুন সাতকানিয়া উপজেলা ইন্জিনিয়ার অফিসে জসিম নামে এক ব্যক্তিকে ২লক্ষ টাকা উত্তোলনের জন্য  ঘুষ দেয়া হয়েছিল মাত্র একহাজার টাকা,এবং আরেক পাতায় হাত কলমে লেখা আছে ২০-৬-২০২৩ইং তারিখে স্লীপ ফান্ডের টাকা অডিট করার জন্য সাতকানিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা  গোলাম মাহবুবকে দেয়া হয়েছে ৪হাজার টাকা।

এখন প্রশ্ন থেকে যায় স্লীপ ফান্ডের টাকা উত্তোলনের পর যে স্কুলে কোন লেজারই মেইনটেইন কিংবা ভাউচার রাখা হয়নি সেই স্কুলে একই ফান্ডের টাকার অডিটের জন্য কেনইবা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মাহবুবকে অডিট ফি দেয়া হবে?

অপরদিকে সাতকানিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মাহবুবের নথিপত্র ঘেটে দেখা যায় হামিদা আক্তারের স্কুলে কোন অডিটই করা হয়নি।
অথচ!অডিট কলামে খরচের ব্যাখা দেয়া ৪০০০টাকা কি তাহলে মনগড়া ভাবে লিপিবদ্ধ করা হলো?

অপর আরেক পাতায় যোগ হিসাবেও ভুল করেন কেরানীহাট  সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হামিদা আক্তার,তিনি ১৪-৮-০২৩ ইং এর একটি হিসাবে লিখেছে অডিট খরচ ৪০০০টাকা, ইন্জিনিয়ার অফিস ১০০০+১০০০ টোটাল ৫৬হাজার টাকা, অর্থাৎ সামান্য হিসাবেও বড় ধরনের ভুল করেছে প্রধান শিক্ষিকা হামিদা আক্তার।

এদিকে স্থানীয়রা জানান, স্কুলে নিয়মিত মা সমাবেশ, উঠান বৈঠক, অভিভাবক সমাবেশ করার কথা থাকলেও এসবের কিছুই করেন না তিনি।’
তবুও তিনি দাপুটে চলেন নিয়মিত এমনকি বর্তমান কমিটিকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে কর্ণপাত করেননা এই শিক্ষিকা,নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান প্রধান শিক্ষিকার বাড়ি সাতকানিয়ার পৌরসভায় হলেও কেরানীহাট কেঁওচিয়ার কানিজ ফাতেমা নামে এক স্থানীয় শিক্ষিকা ওই স্কুলে শিক্ষকতা করেন ফলে তার একক দাপটের ভাব দেখিয়ে চলেন প্রধান শিক্ষিকা হামিদা আক্তার।

কাগজে কলমে হামিদা আকতার প্রধান হলেও কলকাঠি নাড়েঁন কানিজ ফাতেমা নামে এক প্রভাবশালী সহকারী শিক্ষিকা।

তাই স্থানীয়রাসহ স্কুল কমিটির সাবেক এক নেতা বলেন,কানিজ ফাতেমা নামে ওই সহকারী শিক্ষিকাকে যদি কেরানীহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বদলী করা না হয় তাহলে প্রধান শিক্ষিকার সাথে তিনি মিলে অচিরেই এই প্রাথমিক স্কুল ধ্বংস করে দিবেন।

এদিকে একাধিক স্থানীয়রা আরো জানান,হেড শিক্ষিকা হামিদা আক্তার প্রতিদিন সকাল ৭টায় স্কুলে আসেন প্রাইভেট পড়ানোর জন্য কিন্তু স্কুল ছুটির অন্তত ১ঘন্টা আগে তিনি বাড়ি ফিরে যান।

তবে স্কুলে সরকারি ভাবে কোন প্রাইভেট পড়ানোর নিয়ম না থাকলেও স্কুল প্রধান হামিদা বেগম যেন অনিয়মকে করেছেন নিয়ম,এতে অভিভাবককরা ক্ষোভে ফুঁসে বলেন সরকারি বিদ্যুৎ খরচ করে স্কুলে সারেন ব্যক্তিগত কাজ।

এ ছাড়া নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ডের বরাদ্দ থেকে সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট ও দুই শতাংশ আয়কর (আইটি) কর্তন করার কথা। কিন্তু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে ১৮ শতাংশ কাটা হয়েছে। ফলে বিদ্যালয়গুলো বরাদ্দ থেকে সাড়ে আট শতাংশ কম পেয়েছে। এতে সাধারণ শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ হলেও হয়রানির ভয়ে প্রতিবাদ করছেন না।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মাহবুব বলেন, এসব অনিয়ম তদন্তে সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্লিপের অর্থ নিয়ে কোনো ধরনের অনিয়ম করার সুযোগ নেই। কোনো প্রতিষ্ঠানপ্রধান বা সংশ্লিষ্ট কেউ অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এ ছাড়া অতিরিক্ত ভ্যাট কর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়মমাফিক কাটা হয়েছে বলে জানান এ শিক্ষা কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.