পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮৯ চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হকের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করেছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। একই সঙ্গে তিনি পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীনের বদলি চেয়েছিলেন।
গত ৭ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে জমা দেওয়া এক লিখিত অভিযোগে এমন দাবি জানিয়েছেন নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী।
এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রশাসন যেন পক্ষপাতমূলক আচরণ করতে না পারে সেই লক্ষ্যে আরও চার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বদলির নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে পাঠিয়েছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানা, গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা, চট্টগ্রাম জেলার খুলশি থানা ও পটিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীনকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী। আমি অনুভব, পর্যালোচনা, পর্যেবক্ষণ করে দেখেছি, আমার আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী মহান জাতীয় সংসদের হুইপ এবং বর্তমানে স্বতন্ত্র প্রার্থী। তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য হুইপের ক্ষমতায় গত ১২ নভেম্বর নিজের পছন্দের ওসি বদলি করে আনেন পটিয়া থানায়। মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নামে এই ওসির নানা-শ্বশুর বাড়ি পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নে এবং হুইপের দূর সম্পর্কের আত্মীয়।
মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী তার অভিযোগ পত্রে আরো বলেন, আমি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে ওসি নেজাম উদ্দীন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিলেন। এ সত্ত্বেও আমি তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করিনি। ইতোমধ্যে গত ৫ ডিসেম্বর হুইপ নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন সংক্রান্ত বিষয়ে পটিয়া আদালতে স্বশরীরে হাজিরা দিতে আসার পথে পটিয়ার প্রায় প্রতিটি এলাকায় পুলিশ প্রটেকশনের ব্যবস্থা করেন। এমনকি আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আশপাশেও লোকজন চলাচল করতে দেয়নি। হুইপ আদালতে হাজিরা শেষে নিজের গ্রামের বাড়ি শোভনদণ্ডীর রশিদাবাদে গেলে ওসি নেজাম উদ্দিনও সেখানে ছুটে যান। সেখানে হুইপের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। গত ১ ডিসেম্বর শোভনদণ্ডী এলাকায় হুইপের ভাইদের প্ররোচনায় আমার দলীয় কর্মী আশরাফুল আলম সাজ্জাদের উপর হামলা চালিয়ে তাকে আহত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় সে পটিয়া হাসপাতালে ভর্তি হয়। সে বিষয়ে থানায় আনুষঙ্গিক কাগজপত্রসহ অভিযোগ জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি এ ওসি।
আমি ওসি নেজাম উদ্দীনের গতিবিধি পর্যেবক্ষণ করে বুঝতে পারলাম, এ ওসি স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর নির্বাচনী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবেন। আপনি যেভাবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং পক্ষপাতহীন নির্বাচন পরিচালনা করতে চাচ্ছেন তা ব্যাহত হবে। আমি মনে করি, বর্তমান ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীনকে দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু এবং পক্ষপাতহীন নির্বাচন সম্ভব নয়। আমি অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচনের স্বার্থে ওসি নেজাম উদ্দিনকে অন্যত্র বদলির আবেদন করছি।
মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমার প্রতিনিধি নির্বাচন কমিশনের প্রাপ্তি ও জারি শাখায় এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ জমা দেয়ার ৫ দিনের মাথায় ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীনকে প্রত্যাহারের আদেশ জারি করেন ইসি। তবে হুইপ তার প্রভাব এখনো খাটাচ্ছেন পটিয়ায়।
এদিকে, পুলিশের ডিআইজি ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে পটিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন পটিয়া উপজেলা শোভনদন্ডী ইউনিয়নের রশিদাবাদ এলাকার মো. আশিক। তিনি স্হানীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর চাচাত ভাই।

রশিদাবাদ এলাকার ভুক্তভোগী মো.আশিক বলেন, আমি গত ১০ ডিসেম্বর পুলিশের ডিআইজি ও প্রধান নির্বাচন কমিশন বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছি পটিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীনের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাতে জানতে পারলাম নির্বাচন কমিশন ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীনকে পটিয়া থানা থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার আদেশ জারি করা হয়েছে। এতে আমি খুবই সন্তুষ্ট । হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীনকে পটিয়া থানায় বদলি করে এনে পটিয়ায় ত্রাস সৃষ্টি করার অপচেষ্টা করেছিলেন। আমি মনে করি আমার মতো আরো হাজারো ভুক্তভোগী অন্তত এবার হলেও ন্যায় বিচার পাবে।