ইউপি সদস্যের লাথির অপমানে যুবকের আত্মহত্যা,মেম্বার বাঁচাতে বিধবা আটক

আমি একটা থাপ্পড় মারছি সত্য লাথি মারিনি-অভিযুক্ত মামুন

 

সৈয়দ আককাস উদদীন

সাতকানিয়ায় বিচার চলাকালে উপস্থিত লোকজনের সামনে ইউপি সদস্যের লাথি ও থাপ্পড়ের অপমান সহ্য করতে না পেরে এক কাঁচাবাজারের আড়তদার আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তার নাম কামাল উদ্দিন (৪০)।

 

শনিবার রাতে উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মামুনুর রশীদ জানান, আমি তাকে লাথি-থাপ্পড় কোনটাই মারিনি। আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব কথা বলছে। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিনের স্ত্রী সেলিনা আকতারকে আটক করেছে পুলিশ।

এলাকাবাসী জানান, পুরানগড় ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ওমর আলীর পুত্র কৃষক কামাল উদ্দিনের সংসারে স্ত্রী, ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে।

কামাল উদ্দিন সম্প্রতি একটি মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ওই মেয়েকে বিয়ে না করেও ফকিরখীল কুমার পাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় রাখে। ব্যবসায়ী কামাল ওই বাসায় নিয়মিত যাওয়া আসা করে। বিষয়টি জানার পর কামালের প্রথম স্ত্রী সেলিনা আকতার স্বামীর বিরুদ্ধে স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুনুর রশীদকে বিচার দেয়। ঘটনার দিন রাতে ইউপি সদস্য মামুনুর রশীদ কামালের বাড়িতে বিচার কার্যক্রম শুরু করে। বিচারের এক পর্যায়ে ইউপি সদস্য মামুনুর রশীদ উত্তেজিত হয়ে উপস্থিত লোকজনের সামনে কামালকে লাথি ও থাপ্পড় মারে।

ফলে অপমান সহ্য করতে না পেরে কামাল দৌঁড়ে একটু দুরে গিয়ে বিষপান করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ইউপি সদস্য মামুনসহ স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কেরানীহাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়।

পরে চমকে হাসপাতালে নেয়ার পথে কামাল মারা যায়। এরপর তার লাশ ঘরে নিয়ে আসে। খবর পেয়ে সাতকানিয়া থানা পুলিশ গতকাল কামালের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশের হাতে আটক হওয়ার আগে কামালের স্ত্রী সেলিনা আকতার জানান, আমাদেরকে ঠিক ভাবে ভরণপোষণ না দিয়ে অপর একটি মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করায় আমি স্বামীর বিরুদ্ধে ইউপি সদস্য মামুনুর রশীদকে বিচার দিই।

কিন্তু ইউপি সদস্য মামুনুর রশীদ বিচার চলাকালে সবার সামনে আমার স্বামীকে লাথি ও থাপ্পড় দেয়। ফলে অপমান সহ্য করতে না পেরে আমার স্বামী বিষপানে আত্মাহত্যা করেছে। মেম্বারের এমন আচরণের কারণে আমি স্বামী হারা হয়েছি। আমার সন্তানরা হারিয়েছে বাবাকে।

আড়তদার কামাল উদ্দিনের ছোট ভাই মহিউদ্দিন জানান, আমার ভাবিকে খুশি করার জন্য মেম্বার মামুন সবার সামনে বড় ভাই কামালকে লাথি ও থাপ্পড় মেরেছে। সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে আমার ভাই বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে। আমার ভাই দোষ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতো। কিন্তু লাথি ও থাপ্পড় মারলো কেন?

পুরানগড় ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মামুনুর রশীদ জানান, কামাল প্রথম স্ত্রী ও ৩ সন্তানকে রেখে অপর একটি মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিয়ে না করে ওই মেয়ের ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করে। এ বিষয়ে কামালের স্ত্রী আমাকে বিচার দেয়। বিষয়টি মীমাংসার জন্য কামাল ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসেছিলাম। বৈঠকে কামাল বিয়ে না করে অপর একটি মেয়ে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকার বিষয়টি স্বীকারও করেছে। বৈঠক চলাকালে বা পরে আমি কামালকে লাথি বা থাপ্পড় মারিনি। তবে একটা চড় মেরেছি এবং চকিদারকে দিয়ে ধমক দেওয়ায়ছি তাই সে আমার সামনে থেকে দূরে গিয়ে বিষ খেয়েছে সেটা সত্য।তবে কিল লাথি কসম মারিনি,মারছি থাপ্পর।

কিছু লোক আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব মিথ্যা কথা বলছে।
এদিকে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, গত ইউপি নির্বাচনে মামুনকে জিতাতে মরিয়া ছিল কামালের বউ,আর কামাল ছিল মামুনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাথে,মূলত সেই থেকে মামুন কামালকে দেখতে পারেনা।

মামুনের বউয়ের সাথে পরকীয়া ছিল মেম্বার মামুনের তাই রাত ১টায় বিচার বসাতে আসে কামালের ঘরে এমন অভিযোগও করেছে এলাকাবাসী।

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন ইউপি সদস্য মামুন তার একটি ভিডিও বার্তায়।

তবে চড় মারার কথা আর চকিদার খালেক দিয়ে কামালকে ধমকও হুমকির দেয়ার কথা সে অকপটে স্বীকার করেন।

সাতকানিয়া থানার এসআই বেলাল হোসেন জানান, বিষপান করে কামাল উদ্দিন আত্মহত্যা করার খবর পেয়ে আমরা গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছি। তবে কি কারনে আত্মহত্যা করেছে তা এ মূহুর্তে বলা মুশকিল।

সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শিবলী নোমান জানান, বিষপানে কামাল উদ্দিন আত্মহত্যা করার ঘটনায় তার স্ত্রী সেলিনা আকতারকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় কামালের স্বজনরা মামলা দায়ের করলে তার স্ত্রীকে সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। তবে তদন্তের আগে কেন বিষপান করেছে তা বলা যাচ্ছে না।

এদিকে স্থানীয়মহল জানিয়েছেন গভীর রাতে একজন ইউপি সদস্য গ্রাম আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত ভাবে গভীর রাতে একজনের বাড়িতে এসে শালিস ডাকতে পারেনা,পারলেও সবার সামনে তাকে আত্মহত্যা করার মত অপমান করে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতে পারেনা।

 

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.