চট্টগ্রামে চামড়া ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

চট্টগ্রামে চামড়ার ঠাঁই হচ্ছে ময়লার ভাগাড়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে পড়ে আছে শত শত চামড়া। এসব চামড়া থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে আশপাশের এলাকায়। সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের লোকজন চামড়াগুলো গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে ময়লার ভাগাড়ে। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দর না পাওয়ায় অনেকে সড়কে চামড়া ফেলে চলে গেছেন।  এ বছর সরকার চামড়ার দাম বাড়ালেও বিগত বছরগুলোর মতোই অনেক কম দামেই চামড়া কিনেছেন আড়তদাররা। ন্যায্য দাম না পেয়ে লোকসানের মুখে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমি বিক্রেতা কেনা দামেও চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। কেউ চামড়া পুতে ফেলেছেন। কেউ রাস্তায় ফেলে চলে গেছেন। অবশ্য কেউ কেউ লোকসানে বিক্রি করেছেন। ঈদের দিন চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় মৌসুমি বিক্রেতারা চামড়া নিয়ে বসেন। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় চৌমুহনী এলাকায়। অলিগলি থেকে চামড়া কিনে এখানেই এনে জড়ো করেন মৌসুমি বিক্রেতারা। পরে আড়তদার কিংবা তাদের প্রতিনিধিরা এসে এ চামড়া নিয়ে যান। চামড়া মূলত নিয়ে যাওয়া হয় নগরের আতুরার ডিপো এলাকায়। সেখানে রয়েছে বড় আড়ত। উপজেলা থেকেও চামড়া আসে এসব আড়তে।

নগরীর আতুরার ডিপো, আগ্রাবাদ, চৌমুহনী এলাকার বিভিন্ন সড়কে শত শত চামড়া পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এসব জায়গায় সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের লোকজন চামড়াগুলো ট্রাকে করে নির্ধারিত ময়লার ভাগাড়ে নিয়ে যাচ্ছে।

নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় চামড়া বিক্রি করতে যাওয়া মৌসুমি ব্যবসায়ী সোলাইমান আলম বলেন, প্রতি পিস চামড়া ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় কিনেছি। আমি প্রায় ১৭০টি চামড়া কিনেছি। এখন আড়তদারেরা চাচ্ছেন ২০০ টাকা। তারা সিন্ডিকেট করে চামড়া কিনছে না।

এবার ঈদুল আজহার আগে পশুর চামড়ার দর বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা গত বছর ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। ঢাকার বাইরের গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।

পাশাপাশি ঢাকায় সর্বনিম্ন কাঁচা চামড়ার দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর ঢাকার বাইরে কাঁচা চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা।

এছাড়া সারাদেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা দরে বিক্রি হবে ট্যানারিতে, যা গত বছর ছিল ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা। আর বকরির চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম ২০ থেকে ২২ টাকা, যা গতবার ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানান, আড়তদাররা নিজেদের ইচ্ছে মাফিক দামে চামড়া সংগ্রহ করেছেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও অনেকে চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। আবার ছাগলের চামড়া ক্রয় করেনি কোনো আড়তদার। ফলে সংরক্ষণ উপযোগী ছাগলের চামড়ারও জায়গা হয়েছে ডাস্টবিনে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামে প্রতি পিস চামড়া ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করেছেন কোরবানিদাতারা। তবে আড়তদাররা বিকেলে প্রতি পিস গরুর চামড়া ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত কিনেছে। তবে রাত ৯টার পর নগরীর পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও ট্রাকে ট্রাকে চামড়া নগরীর আতুরার ডিপো এলাকায় অবস্থিত আড়তগুলোতে আসতে থাকে। তখন চামড়া প্রতি ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। পরে অনেক বিক্রেতা চামড়া বিক্রি না করে চলে যায়।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.