সিএমপিতে যে সন্ত্রাসীগনের দাপট

নিজস্ব প্রতিবেদক
সিএমপিতে ৩২৩ সন্ত্রাসী অবশেষে ১৪ বছর পর ১৬ থানা এলাকার সন্ত্রাসীদের তালিকা হালনাগাদ করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)। ২০১৮ সালে থেকে এ তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে সিএমপি। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে তালিকা তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে নতুন তালিকায় নেই আওয়ামী ঘরানার একসময়ের আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম। এর আগে ২০০৬ সালে সন্ত্রসীদের তালিকা করেছিল সিএমপি। পুলিশ সূত্র জানায়, সদরঘাট থানা ছাড়া চট্টগ্রামের বাকি থানাগুলোতে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী আছেন ৩২৩ জন। সন্ত্রাসীদের মধ্যে আছেন সর্বোচ্চ ৩০ মামলার আসামি। তালিকায় ৯৭ জন সন্ত্রাসীকে পলাতক, ১১৪ জনকে জামিনে আছে এবং ৪৩ জনকে কারাবন্দী বলে দেখানো হয়েছে। বাকি ৬৯ জন কোথায় আছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই পুলিশের কাছে। মূলত ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িতদের সন্ত্রাসী তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, তালিকাভুক্ত ৩২৩ সন্ত্রাসীর মধ্যে মোট ৯৪ জনের রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে। এরমধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের ৪৩ জন, বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের ৩৮ জন এবং জামায়াত ও শিবিরের ১৩ জন রয়েছেন। ৩২৩ সন্ত্রাসীর মধ্যে কোতোয়ালী থানায় ৪৪ জন, বাকলিয়া থানায় ২৪ জন, চকবাজার থানায় ১৪ জন, পাঁচলাইশ থানা এলাকায় ২১ জন, চান্দগাঁও থানা এলাকায় দুইজন, খুলশী থানায় ১২ জন, বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় ৮৫ জন, ডবলমুরিং থানা এলাকায় ১৮ জন, হালিশহর থানা এলাকায় ৩৪ জন, পাহাড়তলী থানা এলাকায় ১২ জন, আকবর শাহ থানা এলাকায় ৭ জন, ইপিজেড থানা এলাকায় ২৫ জন, বন্দর থানা এলাকায় ৩ জন, পতেঙ্গা থানা এলাকায় ১১ জন ও কর্ণফুলী থানা এলাকায় ১১ জন আছেন। জানা গেছে, ২০০৬ সালে ৩৯৬ জন সন্ত্রাসীকে তালিকাভুক্ত করেছিল সিএমপি। এরমধ্যে ৬৮ জন ছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী। এর আগে সন্ত্রাসীদের তালিকা হালনাগাদ হয়েছিল ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে এবং ২০০১ সালে বিএনপির আমলে। ২০০৮ সালে সিএমপির সর্বশেষ তালিকায় সন্ত্রাসী ছিলেন ৪০৬ জন। এরমধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন ৭৫ জন। ২০১৪ সালে সন্ত্রাসীদের তালিকা করার জন্য চিঠিও দেওয়া হয় নগরের প্রতিটি থানায়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তালিকা তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসীদের নতুন তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় সিএমপি। তখন ১৬ থানার ওসিকে এ নিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। অবশেষে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে থানাভিত্তিক সন্ত্রাসী তালিকা তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু ১৪ বছর পর করা তালিকায় উঠে আসেনি নগরের এক সময়ের আলোচিত অন্তত ৭৫ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএমপির একজন কর্মকর্তা চট্টগ্রাম সংবাদকে জানান, সন্ত্রাসীদের নতুন তালিকা তৈরি করার সময় ক্ষমতাসীন দলের অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সদিচ্ছা থাকায় শেষ পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের তালিকা হালনাগাদ করা সম্ভব হয়েছে। এদিকে ২০২১ সালে করা সিএমপির নতুন সন্ত্রাসী তালিকায় উঠে এসেছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের নাম। তালিকায় আছে ভারতে পলাতক মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন, বায়েজিদের সরওয়ার ও ম্যাক্সন, বাকলিয়ার মোরশেদ খান, নন্দনকাননের রাজিব দত্ত রিংকু, ছাত্রদলের ছুট্টুসহ হাতেগোনা কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শুরুর দিকে থাকলেও অদৃশ্য ইশারায় তালিকা থেকে শেষ মুহূর্তে এসে বাদ পড়েছে যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, পাঠানটুলি ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবদুল কাদের, বহদ্দারহাটের যুবলীগ নেতা ও কাউন্সিলর এসরারুল হক এসরাল, লালখানবাজারের আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুম, লালখানবাজারের বর্তমান কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলাল, যুবলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমন, চকবাজারের নুরুল মোস্তফা টিনুসহ বেশ কয়েজনের নাম। কোতোয়ালী : চট্টগ্রাম নগরের সবচেয়ে ব্যস্ততম এ থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীর সংখ্যা ৪৪ জন। মাত্র দুজন ‘সন্ত্রাসী’র রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে নতুন তালিকায়। তালিকার ৩২ নম্বরে আছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। ৪৪ জন সন্ত্রাসীর মধ্যে ২১ জন পলাতক। ১১ জন জামিনে। কারাবন্দি ৭ জন। জামিন নিয়ে বিদেশে পালিয়েছেন ২ জন। আবুল হাশেম বক্করের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী, বাকলিয়া ও চান্দগাঁও থানায় আছে মোট ৯টি মামলা। সিআরবির জোড়া খুনে পিস্তল থেকে গুলি ছোড়া নন্দনকানন গোপাল সিংহ লেইনের ধীরেন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে যুবলীগ কর্মী অজিত বিশ্বাস (৪৮) আছেন সন্ত্রাসী তালিকায়। কোতোয়ালী থানার সন্ত্রাসী তালিকায় থাকা উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন- নন্দন কাননের মৃত অজিত দত্তের ছেলে রাজিব দত্ত রিংকু (৩৮) , কাজির দেউরি এলাকার মুছা মিয়া প্রকাশ বাবুর্চি মুসা আলী ছেলে শফি মোস্তফা (৪৫), ১৭ মামলার আসামি হাত কাটা ইদু (৪০), এনায়েত বাজার ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার আবদুল মালেকের ছেলে আব্দুল আল ফরহাদ ওরফে জেকি (২৩) ও বদরপাতি এলাকার দুর্ধর্ষ অপরাধী ২০ মামলার আসামি জালাল আহাম্মদ প্রকাশ জইল্যা (৩৫)। বাকলিয়া : বাকলিয়া থানার তালিকাভুক্ত মোট সন্ত্রাসী আছেন ২৪ জন। এরমধ্যে পেশাদার ছিনতাইকারী ১৮ জন। বিএনপির নেতাকর্মী ৬ জন। তালিকায় নেই আওয়ামী লীগ বা তার অঙ্গসংগঠনের কোনো নেতাকর্মীর নাম। তালিকার ১ নম্বরে আছে শীর্ষ সন্ত্রাসী মিয়াখান নগরের মহসিন খানের ছেলে মোরশেদ খানের (৪০) নাম। তিনি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত বলে তালিকায় উল্লেখ আছে। মোরশেদের বিরুদ্ধে মামলা আছে ১০টি। সন্ত্রাসী তালিকায় বাকলিয়ার মাস্টারপুলের বাসিন্দা ও ২৫টি মামলার আসামি দিদারুল হক কাজেমী ওরফে কিরিচ বাবুলকে (৫২) রাখা হয়েছে। তালিকায় আছেন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যাসহ ১১টি মামলার আসামি এহতেশামুল হক ভোলাও (৪৮)।
চকবাজার : চকবাজার থানায় তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীর সংখ্যা ১৪ জন। তবে তালিকায় উঠে আসেনি চকবাজারের কিশোর গ্যাং লিডার হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রউফের নাম। নতুন তালিকায় প্রথম স্থানে আছে ৬ মামলার আসামি এনায়েত উল্লাহর নাম। তিনি চন্দনপুরা মনু মিয়াজী লেইনের নজীবুল্লা সওদাগরের বাড়ীর মৃত ফতেহ ইউনুছের ছেলে। তালিকার দুই নম্বরে আছে ৫ মামলার আসামি নাছিরউদ্দিন প্রকাশ বাবুল প্রকাশ ক্রেকার বাবুলের (২৯) নাম। সন্ত্রাসী তালিকায় থাকা অন্যরা হলেন- দেলোয়ার হোসেন বাবলু (২৪), ইকবাল মুন্না (৩০), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ওরফে জনি (৩২), সালাউদ্দিন লাভু (৪০), নবীর হোসেন ওরফে নবী ওরফে বাধন ওরফে সুপার মামা, বাদশা ওরফে গুটি ব্যাপারী (২৮), রনি (৩৭), মো. জনি (২৭) ও মো. আয়মন (৩৫) প্রমুখ। পাঁচলাইশ : পাঁচলাইশ থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ২১ জন। এরমধ্যে পাঁচজন কথিত যুবলীগ নেতা, দুইজন যুবলীগের, তিনজন হকার লীগের, দুইজন প্রজন্ম লীগের, দুইজন বিএনপির। তালিকায় থাকা বাকি ৬ জনের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তালিকায় আছেন প্রজন্ম লীগের ওয়াহিদুল ইসলাম প্রকাশ অনিক (২৩), হামজারবাগ এলাকার প্রজন্ম লীগের মো. রাহাত হোসেন (২৫), মোহাম্মদপুরের হকার লীগের আবদুল মান্নান ওরফে মামুন, মুরাদপুর এন মোহাম্মদ কলোনির হকার লীগের মিজান হোসেন ওরফে মিজান (৩০), নাজির পাড়া যুবলীগের সাব্বির হোসেন সাকিব (২৫), মোহাম্মদপুর মাজার গলির যুবলীগের মো. হায়দার আলী (২৫) ও পূর্ব নাসিরাবাদ কসমোপলিটন আবাসিক এলাকার কথিত যুবলীগের মোহসেন চৌধুরী ওরফে সাদ্দাম প্রমুখ।
চান্দগাঁও : চান্দগাঁও থানার সন্ত্রাসী তালিকায় আছেন শুধুমাত্র দুইজন। এ দু’জনের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। এরমধ্যে একজন হলেন ২৩ মামলার আসামি ইসমাঈল হোসেন ওরফে টেম্পু। তার বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, গুলিবর্ষণসহ নানা গুরুতর অপরাধে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানা এবং নগরের চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ বোস্তামী থানায় দায়ের হয়েছে ২৩টি মামলা। তালিকায় থাকা দ্বিতীয় ব্যক্তিটি হলেন, শমশের পাড়ার মো. তৌহিদ প্রকাশ বডি তৌহিদ (২৫)। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে ১২টি মামলা আছে। খুলশী : এ থানার সন্ত্রাসীর তালিকায় উঠে এসেছে ১২ জনের নাম। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের তিন নেতার চারজন অনুসারী আছেন। বিএনপির আছেন চারজন। বাকিদের
দলীয় পরিচয় উল্লেখ নেই। তালিকায় ১৩ থেকে ২০ মামলার আসামি আছেন চারজন। তালিকায় থাকা কুসুমবাগ আবাসিক এলাকার মাসুদ কামাল প্রকাশ কামালের (৩৫) বিরুদ্ধে আছে ১৫টি মামলা। তালিকায় আছেন ওয়ালের্স কলোনির বিএনপি কর্মী ওয়াকিল হোসেন ওরফে বগা (২৯)। তার বিরুদ্ধে আছে বিভিন্ন অভিযোগে ১৭টি মামলা। তালিকার চার নম্বরে আছেন লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকার আনোয়ার হোসেন ওরফে মনা (২৭)। তার বিরুদ্ধে আছে ২০টি মামলা। তালিকার ৫ নম্বরে আছেন পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হোসেন হীরনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ওয়ালের্স কলোনির সুমন ওরফে কসাই সুমন (২৬)। তার বিরুদ্ধে আছে ১১টি মামলা। তালিকার ৯ নম্বরে আছেন ১৪ নং লালখানবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলালের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ৮ মামলার আসামি মো. সোহাগ।
বায়েজিদ : বায়েজিদ বোস্তামী থানায় মোট সন্ত্রাসী ৮৫ জন। এরমধ্যে ১৮ জন আওয়ামী লীগের, ১২ জন শিবির ক্যাডার, তিনজন বিএনপির। বাকি ৫২ জন ‘সন্ত্রাসীর’ রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। তালিকার এক নম্বরে আছেন ভারতে পালিয়ে থাকা বহদ্দারহাটের এইট মার্ডারসহ ৯ মামলার আসামি শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ আলী সাজ্জাদ (৩৮)। আরেক আলোচিত শিবির ক্যাডার ও সাত মামলার আসামি মো. নুরুন্নবী ওরফে ম্যাক্সন (৩০) এবং বিএনপির ক্যাডার সরোয়ার ওরফে বাবলা (৩১) তালিকায় আছেন। সরোয়ারের বিরুদ্ধে আছে ১৫ মামলা এবং তিনটি সাধারণ ডায়েরি। তালিকার ৯ নম্বরে আছেন শেরশাহ কলোনির যুবলীগ নেতা মেহেদী হত্যাসহ ১০ মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কুদ্দুস ওরফে কানা কুদ্দুস (৪৪)। আরেক আওয়ামী লীগ নেতা ও ১১ মামলার আসামি শফিকুল ইসলাম ওরফে গ্যারেজ শফিও (৪৫) আছেন সন্ত্রাসী তালিকায়। তালিকার ১৮ নম্বরে আছেন পাঁচলাইশ বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদক লিয়াকত আলী ওরফে জসিম (৪২)।
ডবলমুরিং : এ থানায় তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী আছেন মোট ১৮ জন। এরমধ্যে ৫ জন আওয়ামী লীগের। একজন ছাত্রলীগের। অবশিষ্ট ১২ জনের দলীয় পরিচয় নেই। তালিকার ২ নম্বরে আছেন আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনির দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও ৯ মামলার আসামি সুমন ওরফে দাতলা সুমন (৩৫)। তালিকায় আরও আছেন- ১৭ মামলার আসামি বেপারিপাড়ার মো. ইমতিয়াজ খান প্রকাশ রনি ওরফে মাইকেল রনি (৩০), ৯ মামলার আসামি ছাত্রলীগকর্মী জালাল উদ্দিন রানা ওরফে ফক্স রানা (২৯), ১৭ মামলার আসামি মিস্ত্রিপাড়ার মো. জসিম, মগপুকুর পাড়ের আওয়ামী লীগ কর্মী মোস্তফা কামাল টিপু (৪০)। হালিশহর : হালিশহর থানায় তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী আছেন মোট ৩৪ জন। তবে তাদের কারও দলীয় পরিচয় তালিকায় উল্লেখ নেই। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- পিচ্ছি মাসুদ। পুলিশের চোখে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের সীতাকু-, হালিশহর ও বন্দর থানায় অন্তত ১০টি মামলা আছে। পাহাড়তলী : এ থানায় মোট সন্ত্রাসীর সংখ্যা ১২ জন। এরমধ্যে বিএনপির ৬ জন, আওয়ামী লীগের তিনজন, যুবদলের একজন এবং আরেকজন জামায়াতের। তালিকার চার নম্বরে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সিডিএ মার্কেট নোয়াপাড়া এলাকার মৃত ক্যানেথ রিভারো’র ছেলে কুইন্টাল রিভারো (৩০)। তার বিরুদ্ধে পাহাড়তলী থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৬টি মামলা রয়েছে। তিনি এখন পলাতক বলে তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। আকবর শাহ : আকবরশাহ থানায় তালিকাভুক্ত মোট সন্ত্রাসী ৭ জন। এ সাতজনের সবাই বিএনপি এবং দলটির অঙ্গ সংগঠন যুবদলের কর্মী বলে তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকার প্রথম স্থানে আছেন ফিরোজশাহ কলোনির ধনু মিয়া ভা-ারির ছেলে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মো. নুরে আলম প্রকাশ নুরু (২৫)। তার বিরুদ্ধে খুলশী ও আকবর শাহ থানায় ৩০টি মামলা আছে। গত ৯ জানুয়ারি পুলিশের সাথে ব্যাপক গুলি বিনিময়ের পর তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ফিরোজ শাহ কলোনির পাহাড়ে ছিল নুরুর আস্তানা। সেখানে তার একটি নিজস্ব একটি বাহিনী আছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ইপিজেড : ইপিজেড থানার সন্ত্রাসী তালিকায় আছে ২৫ জনের নাম। এরমধ্যে ৫ জন বিএনপির। তবে তালিকায় আওয়ামী লীগের কেউ নেই। তালিকার ১০ নম্বরে আছেন ইপিজেড থানায় দায়ের হওয়া চারটি মামলার আসামি আলী শাহ মাজার নতুন বাড়ি এলাকার বিএনপি নেতা হাসান মুরাদ (৪০)। তিনি এখন পলাতক আছেন বলে তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। বন্দর : পুলিশের হিসেবে নগরের বন্দর থানা এলাকায় সন্ত্রাসী আছেন তিনজন। এরমধ্যে একজন আওয়ামী লীগের এবং দুজন বিএনপির। তালিকায় থাকা উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি হলেন- গোসাইলডাঙ্গা মৃত ইউনুছ মিয়ার ছেলে মো. ইদ্রিছ (৪০)। তার বিরুদ্ধে বন্দর ও ডবলমুরিং থানায় আছে ১০টি মামলা। তিনি এখন চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দী আছেন বলে তালিকায় লেখা হয়েছে। পতেঙ্গা : পতেঙ্গা থানায় মোট সন্ত্রাসী ১১জন। তাদের কারও দলীয় পরিচয় তালিকায় উল্লেখ নেই। এই ১১ জনের মধ্যে কারাবন্দী আছেন তিনজন। জামিনে বেরিয়ে ৮ জন সন্ত্রাসী নিস্ক্রিয় আছেন বলেও তালিকায় পুলিশ উল্লেখ করেছে। নতুন তালিকার প্রথমে থাকা আকাম উদ্দিন প্রকাশ হাকিম প্রকাশ আকাইম্যার (২৯) বিরুদ্ধে আটটি মামলা আছে। তালিকায় আরও আছেন, চার মামলার আসামি আরব আলী (২৮), চার মামলার আসামি জাহিদ প্রকাশ শহীদ (২৭), ৭ মামলার আসামি আলমগীর হোসেন প্রকাশ খোকন (৩০), চার মামলার আসামি আজম খান (৪১), দুই মামলার আসামি মো. নাসির (২৭) ও সাত মামলার আসামি জোবায়ের বশর (৩৪) প্রমুখ। কর্ণফুলী : কর্ণফুলী থানা এলাকায় তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী আছেন ১১জন। তবে তাদের কারও রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করেনি পুলিশ। তালিকার এক নম্বরে আছেন ১১ মামলার আসামি আক্তার হোসেন (২৮)। তিনি কর্ণফুলী থানাধীন উত্তর বন্দর কুট্টাপাড়ার সুবহান বক্সের ছেলে। শিকলবাহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে তালিকার দুই নম্বরে রাখা হয়েছে; তার বিরুদ্ধে কর্ণফুলী থানায় ১১টি ও পটিয়া থানায় দুটি মামলা রয়েছে। তালিকায় থাকা অন্যারা হলেন- বদলপুরার মো. নাছির (৩৫), উত্তর চরলক্ষ্যার নাজির আহাম্মদ (৩৯), দক্ষিণ শাহমীরপুর লিচুতলার রওশন আলী প্রকাশ নুর হোসেন (৪২), দক্ষিণ বন্দরের সামছুল আলম প্রকাশ সামছু (৩০), বদলপুরার আলী আকবর (৩৭) ও এয়ার মোহাম্মদ (২৬) প্রমুখ। এদিকে দীর্ঘ ১৪ বছর পর সন্ত্রাসীদের নতুন তালিকা তৈরির বিষয়ে সিএমপির দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা চট্টগ্রাম সংবাদকে নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে আওয়ামী ঘরানার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম নতুন তালিকায় না আসা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মো. তানভীর চট্টগ্রাম সংবাদকে বলেন, ‘নতুন সন্ত্রাসী তালিকার বিষয়ে কিছু জানি না।’ এর আগে সন্ত্রাসীদের নতুন তালিকার বিষয়ে বক্তব্য নিতে গত বৃহস্পতিবার (৬ মে) সকাল ১১টার দিকে সিএমপি কমিশনারের দপ্তর দামপাড়ায় যান এ প্রতিবেদক। সাক্ষাত করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানার পর ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাত করে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন স্টাফ অফিসার মো. মুজাহিদুল ইসলাম। তিনি এ ব্যাপারে সিএমপির জনসংযোগ কর্মকর্তা এডিসি আবদুর রউফের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। আগের সন্ত্রাসী তালিকায় থাকা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের নাম নতুন তালিকায় নেই কেন জানতে চাইলে সিএমপি’র অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) শাহ মোহাম্মদ আবদুর রউফ চট্টগ্রাম সংবাদকে বলেন, ‘২০১৪ সালে অপরাধীদের একটি তালিকা করা হয়েছিল। তবে সে সময় সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল কিনা আমার জানা নেই। শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকার বিষয়ে সিটি এসবির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।’ তবে সিটি এসবির দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা চট্টগ্রাম সাংবাদ এর কাছে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি
মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.