নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি বিট কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন তালুকদারকে গাছের সঙ্গে বেঁধে হাতুড়ি দিয়ে পেঠানোর অভিযোগ উঠেছে চুনতি বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুর আলমের বিরুদ্ধে। শনিবার (৮ মে) দুপুর দেড়টার দিকে রেঞ্জার অফিসের একটি গাছের সাথে বেঁধে জনসম্মুখে তাকে হাতুড়ি পেটা ও অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয় বলে জানান চুনতি বিট কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দীন। তিনি দাবি করেন, রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুর আলম কর্তৃক বাগান সৃজনের টাকা আত্মসাৎ, অবৈধভাবে গাছ বিক্রি করে কমিশন আদায়সহ বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তাকে মারধর করা হয়েছে। ফরিদ উদ্দিন চট্টগ্রাম সংবাদকে বলেন, রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুর আলম সবসময় উৎকোচ দেওয়ার জন্য আমাকে চাপ প্রয়োগ করেন। অন্যান্য বিট কর্মকর্তারা নাকি তাকে নিয়মিত উৎকোচ দেন। আমি কেন দেই না, এ নিয়ে বিভিন্নসময় আমাকে গালমন্দ করেছেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি রেঞ্জার অফিসের পাশ্ববর্তী এলাকায় বেশকিছু সেগুন গাছ কে বা কারা কেটে ফেলে। গাছগুলো পরবর্তীতে আমি জব্দ করি। কিন্তু রেঞ্জ কর্মকর্তা গাছ কাটার জন্য আমাকে দোষারোপ করে বলছেন, আমি কোথায় ছিলাম। অথচ ওই এলাকাটি রেঞ্জ অফিস থেকে মাত্র ৩শ ফুট দূরত্বে। আর আমার অফিস থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার। সেখানে আমার যেতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। ফরিদ উদ্দিনের অভিযোগ, পর্যাপ্ত জনবল থাকার পরও রেঞ্জ কর্মকর্তা কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তার ওপরে দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন। পরে কারণ খুঁজতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন রেঞ্জারের সঙ্গে আঁতাত করে একটি চক্র ওই গাছগুলো কেটেছে। এ ঘটনা ভিন্নখাতে নিয়ে যেতে তার ওপরে চওড়া হয়েছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুর আলম। যা তার স্বভাবে পরিণত হয়েছে বলে দাবি ফরিদ উদ্দীনের। চুনতি বিট কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিনের দেওয়া তথ্যমতে, শনিবার (৮ মে) সকালে প্রতিদিনের মত উন্নয়ন কাজের লেবার নিয়ে মুরম ঘাটা এলাকায় সুফল প্রকল্পের বাগানের জঙ্গল কাটা এবং নার্সারির কাজ তদারকি করছিলেন তিনি। গভীর জঙ্গলে নেটওয়ার্ক না থাকায় মোবাইলের সংযোগ না পেয়ে প্রহরী হাবিবুর রহমান মোল্লাকে দিয়ে তাকে ফোন করার জন্য খবর পাঠান রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুর আলম। তাৎক্ষণিক নেটওয়ার্কে গিয়ে ফরিদ উদ্দিন রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুর আলমকে ফোন করে নার্সারির কাজ তদারকির বিষয়টি অবগত করেন। কিন্তু রেঞ্জ কর্মকর্তা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলেন ‘তুই ৩০ মিনিটের ভিতর অফিসে আসবি’ বলে ফোনের লাইন কেটে দেন। ফরিদ উদ্দীন বলেন, আমি কোন বিপদ হয়েছে মনে করে দ্রুত রেঞ্জ অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা দেই। পথে আবার রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুর আলম ফোন দেন। ফোন রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে ‘কুত্তার বাচ্চা আসতে এতো দেরি কেন’ বলে গালিগালাজ করতে থাকেন। আমি অফিসে পৌঁছালে তিনি কোন কথাবার্তা ছাড়াই সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘চল কোথায় গাছ কাটা হয়েছে দেখি’, তখন আমি বললাম, কোথায় গাছকাটা হচ্ছে আপনি সংবাদ দিয়েছেন, আপনি ভালো জানবেন, আমি তো কোথাও দেখি নাই। এসব বলাতে তিনি ‘কুত্তার বাচ্চা তুই যাইবি তুর বাপও যাবে’ বলে গালিগালাজ করতে থাকেন। গালিগালাজ সহ্য করতে না পেরে আমি অফিস থেকে বের হয়ে গেলে রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুর আলম দৌঁড়ে এসে আমার হাত ধরে টেনে এনে বিট কর্মকর্তা আজহারুল ও স্টাফ জালালের সহযোগিতায় আমাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে কিল, ঘুষি ও হাতুড়ি পেটা করেন। এতে আমার একটা দাঁত ভেঙে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মকভাবে জখম হয়।’ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘এক পর্যায়ে আমার চিৎকারে রেঞ্জার অফিসের সামনের একটি দোকানে বসে থাকা কয়েকজন লোক আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমি এখনো চিকিৎসাধীন আছি। এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পাশাপাশি মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানান চুনতির বিট কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন তালুকদার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান চুনতি অভয়ারণ্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা মনজুর আলম একটি বন সার্কেলে ১৪ বছরের অধিক সময় ধরে কর্মরত আছেন। তিনি ঢাকা ও সিলেট বণ্যপ্রাণী বিভাগে চাকুরীকালীন সময়ে বিভিন্ন বন অপরাধের সাথে জড়িত থাকার দায়ে সেই সকল বিভাগীয় বন কর্মকর্তাগণ তার বিরুদ্ধে কৈফিয়তসহ বিভাগীয় মামলা করেছিলেন। এসব অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার পরও তদবিরের মাধ্যমে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান তিনি। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামে এসেও তিনি বিট কর্মকর্তা ও স্থানীয় গাছ চোরদের সাথে সিন্ডিকেট তৈরি করে নানান অনিয়ম করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুর আলমের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে ঘর নির্মাণ করে সংরক্ষিত এলাকাকে গ্রাম বানানোর অভিযোগ আছে। এদিকে গত বছর চলমান দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণের কারণে কর্তন করা প্রায় দেড় কোটি টাকার গাছ অবৈধভাবে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠে রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুর আলমের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও সম্প্রতি মঞ্জুর আলমের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন লোহাগাড়ার স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ও সাধারণ মানুষ। মানববন্ধনে মঞ্জুর আলমের বিরুদ্ধে উঠা সব অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। চুনতি বিট কর্মকর্তাকে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুর আলম চট্টগ্রাম সংবাদকে বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। যিনি অভিযোগ করেছেন তিনি জানেন। রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে দেড় কোটি টাকার গাছ বিক্রির অভিযোগ ও তাকে প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধনের বিষয়ে মনজুর আলম বলেন, এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। তারাই ভালো বলতে পারবেন আমি কী করেছি। জানতে চাইলে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাছের মােহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ চট্টগ্রাম সংবাদকে বলেন, চুনতি বিট কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দীনকে মারধরের বিষয়টা আমি জানি না। তবে অফিসে একটা গন্ডগোল হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। অভিযোগ সত্যি হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রেঞ্জার মনজুর আলমের বিরুদ্ধে উঠা দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, রেলওয়ের কোটি টাকার গাছ বিক্রির বিষয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্তে মঞ্জুর আলমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ