মোঃ তারেকুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধি
সংবাদকর্মী কিংবা সাধারণ মানুষ, কারো সাথে বাজে আচরন করতে দ্বিধাবোধ করেননা লোহাগাড়া উপজেলা ট্রাফিকের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্নেহাংশু বিকাশ সরকার। সিএনজি চালিত অটো রিক্সা ধাওয়া করে আটকের মাধ্যমে টাকা আদায় করে। তেমন কিছু অভিযোগ এসেছে উপজেলা পর্যায়ে উচ্চ পদে কর্মরত থাকা পুলিশের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
জানা যায়, গত ৬ই মে (বৃৃহস্পতিবার) চ্যানেল এস বান্দরবান প্রতিনিধি রানা মারমা তার বোনের সন্তানকে লোহাগাড়া উপজেলায় অবস্থিত আধ্যাত্বিক শিক্ষা প্রতিষ্টান কোয়ান্টাম থেকে আনতে গেলে ফেরার পথে আমিরাবাদ ষ্টেশনে তার মোটর বাইক দাড় করিয়ে চাবি নিয়ে নেয় টিআই স্নেহাংশু বিকাশ সরকার। এসময় চাবি নেওয়ার কারন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এক পর্যায়ে ঐ ব্যক্তির গাড়িতে লাথি মারে টিআই স্নেহাংশু। তারপর থেকে সাংবাদিক এবং টিআইয়ের মধ্যে যেসব কথা হয় তা মোবাইলের মাধ্যমে ভিড়িও ধারন করেন সাংবাদিক রানা মারমা। ভিড়িওতে দেখা যায়, টি আই স্নেহাংশু বিকাশ সরকার তার সাথে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে তাকে লাঠি দিয়ে পেঠাতে তেড়ে আসছেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিক রানা মারমা বলেন, টিআই স্নেহাংশু অহেতুক আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন। আমার গাড়ির কেবল ডিএল এর একটি কাগজ অসম্পূর্ণ ছিল। তবে তিনি আইন অনুসারে আমাকে মামলা দিলে অসুবিধা নেই। কিন্তু তিনি আমার গাড়িতে লাথি মেরেছেন এবং তিনি আমার সাথে অত্যান্ত বাজে ব্যবহার করেছেন। জানিনা স্থানীয়দের সাথে তিনি কি ধরনের আচরন করেন।
এছাড়াও টিআই স্নেহাংশুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সিএনজি চালিত অটো রিক্সা আটক করে টাকা নেওয়া সহ বিভিন্ন পরিবহন সেক্টর থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন সিএনজি চালক বলেন, আমাদেরকে বিভিন্ন সময় রাস্তা থেকে আটক করে ট্রাফিক বক্সে নিয়ে যায়। তারপরে টাকা দিলে ছেড়ে দেয় তা নাহলে মামলা দিয়ে দেয়। তবে আমরা টাকা দিয়েই চলে আসি। কি পরিমান টাকা দিতে হয় জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রতিটি আটককৃত সিএনজি থেকে কমপক্ষে ৫হাজার টাকা করে নেই ছেড়ে দিতে। কি পরিমান সিএনজি আটক করে জানতে চাইলে চালকরা বলেন, সপ্তাহে অন্তত ১০টি সিএনজি আটক করে টিআই। বেশীরভাগ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। আর মাঝে মাঝে কিছু মামলা দিয়ে দেয়। চালকরাও টাকা দিয়ে চলে আসে। কারন মামলা খেলে চালকরার্ ঝামেলায় পড়ে যায়।
গত কিছুদিন আগে আটক হওয়া এক সিএনজি চালক বলেন, আমার সিএনজি সহ আরো একটি সিএনজিকে পদুয়া ষ্টেশন থেকে গাড়ি নিয়ে এসে ধরে নিয়ে যায় টি আই স্যার। পরে আমি আমার এক বড় ভাইকে বললে তিনি সহ গিয়ে সমজোতার মাধ্যমে আমার গাড়ি ৪হাজার টাকার বিনিময়ে ছাড়িয়ে নিয়ে আসি। সমজোতাকারী ব্যক্তির কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনিও বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন। তবে তিনি সংবাদ মাধ্যমে তার নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।
রবিউল (ছদ্মনাম) নামে একজন সিএনজি চালক বলেন, গত ১০-১৫ দিন আগে আমি পদুয়া থেকে যাত্রী নিয়ে আমিরাবাদ গিয়েছিলাম। যাত্রী নামিয়ে দিয়ে আমিরাবাদ ষ্টেশনে দাড়িয়েছিলাম। হঠাৎ পুলিশ বক্সের জাকির স্যার এসে আমার গাড়িতে উঠে আমাকে বলেন স্যার ডাকছে, বক্সে আয়। আমি ভয় পেয়ে গাড়ি চালানো শুরু করে দিয়েছিলাম। তখন আমার গাড়িটা উল্টে গিয়েছিল। পরক্ষণে মানুষ এসে গাড়ি তুলে দিয়েছিল। সেদিন গাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল আর আমিও ব্যাথা পেয়েছিলাম। তবে এর চেয়ে বড় দূর্ঘটনাও হতে পারত সেই দিন।
এসব বিষয়ে দায়িত্বরত টিআই স্নেহাংশু বিকাশ সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঐ সাংবাদিক আমার সাথে খারাপ আচরন করেছে। আমি তার সাথে খারাপ আচরন করিনি। লাঠি নিয়ে তেড়ে আসার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের হাতে লাঠি সর্বদা থাকে। ঐসময় ডিউটিতে ছিলাম আর সেটাকে তিনি ইস্যু বানিয়ে নিয়েছে। সিএনজি ধাওয়া করে আটক পরবর্তী টাকা আদায়ের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোন সিএনজি আটক করিনা। আমাদের কোন গাড়ি নেই। কোন সিএনজি চালক যদি এসব কথা বলে থাকে তাহলে সে মিথ্যা বলছে।
একজন টিআই এর এসব কর্মকান্ডে চট্টগ্রাম জেলা টিআই এডমিন(প্রশাসন) এর করনীয় প্রসঙ্গে টিআই এডমিন আরিফুর রহমান বলেন, কোন টিআই এর বিরুদ্ধে এধরনের অভিযোগ পেলে আমরা সাথে সাথে এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মহোদয়কে জানিয়ে থাকি। এ বিষয়টিও অবশ্যই আমি জেলা পুলিশ সুপার মহোদয়কে জানাবো। অভিযোগ যদি প্রমানিত হয় বা অভিযোগের যদি সত্যতা থাকে তাহলে নিশ্চয় যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
একজন টিআই এর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক বলেন, এসব বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে। তদন্তে সে দোষী হলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য, টিআই স্নেহাংশুর বিরুদ্ধে লোহাগাড়ার বিভিন্ন ষ্টেশন থেকে পরিবহন এবং হকারদের কাছ থেকে প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা আদায় এবং সরকার কর্তৃক দেওয়া মোটর সাইকেলে চড়ে ধাওয়া করে সিএনজি আটক পরবর্তী টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, বর্তমানে টিআই স্নেহাংশুর কর্মকান্ডে অতিষ্ট পরিবহন শ্রমিকরা।