মৃত্যুর চেয়ে সম্মান বড়: সংসদ সদস্য সাইমুন সরওয়ার কমল

 

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধী অবস্থায় আছেন।
সেখান থেকে লিখেছেন অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির কথা।

নীচে হুবহু তুলে ধরা হল

গত কয়েকদিন ধরে লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু লিখার মতো শারীরিক সামর্থ্য না থাকাতে পারিনি। আজ একটু ভালো লাগছে।
আলহামদুলিল্লাহ। ডাক্তার বলেছে আমার রিপোর্ট ভালো। কিন্তু আমিতো জানি আমার শরীরের অবস্থা!হাঁটার শক্তি নাই। কথা বলার শক্তি কমে গেছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আজ ১৩ দিন যাচ্ছে কষ্টের মধ্যে। প্রায় সময় মনে হতো দিন বোধ হয় আমার শেষ হতে চলেছে। প্রতিক্ষণ মৃত্যুর অপেক্ষায় ছিলাম।
কাছের জনদের বলেছিলাম – যদি আমার মৃত্যু হয় তবে লাশটি যাতে জোয়ারিয়ানালায় আমার কেনা জমিতে দাফন হয়। জমিটি ২০০৭ সালে কিনেছিলাম।
মানুষ মানুষকে ভুলে যায়। নিজ গ্রামের বাড়িতে দাফন হলে অন্য গ্রামের মানুষেরা সহজে ভুলে যেতে পারে। চলাচলের পথের ধারে দাফন হলে অন্তত কিছু মানুষের মনে থাকবে এবং দোয়া করার সুযোগ পাবে। জীবনে ইচ্ছাকৃত কারো কোন ক্ষতি করিনি ভেবে পরকালে শান্তি পাওয়ার স্বপ্ন দেখি।

জানিনা মহান আল্লাহতালা কত দিন আমাকে পৃথিবীতে রাখে। আমার তো অনেক কাজ এখন ও বাকি রয়ে গেছে।
ঈদগাহ উপজেলা করতে না পারলে আমার আত্মা শান্তি পাবে না।
কক্সবাজারে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর একটি মসজিদ তৈরি আমার স্বপ্ন । মহান আল্লাহ তায়ালা সে সুযোগ দিবে কি না জানিনা।
কক্সবাজার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা আমার দীর্ঘদিনের। আরো কত কি!

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ১৩দিন আমার বন্ধু মানিক, কাদের, খোকন,আলাউদ্দিন,আলতাফ,নাসিমা,
শাহ আলম আমাকে যে সেবা দিয়েছে তা ভুলার নয়। মাননীয় তথ্যমন্ত্রী ড: হাছান মাহমুদের নিয়মিত পরামর্শ,ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে সহযোগিতা দান
আমাকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছে। আমার স্ত্রী সেলিনা আক্তার প্রতিদিন মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে দেখতে এসেছে। হাসপাতালের ডাক্তার নার্স ক্লিনার ও গফুরের সহযোগিতার কথা জীবনে ভুলার নয়। হাসপাতালে ভর্তির সময় আবু বক্কর এর স্ত্রী মঞ্জুরার কান্না কোনদিন ভুলবো না। কক্সবাজার থেকে অনেক কষ্ট করে রুস্তম, ইউনুস ভৃট্টো, আমিন, সাকিব,সিরাজুল ইসলাম ভৃট্টো,নুরুল হক, আলী হোসেন চেয়ারম্যান ও হাকিম ভাই দেখতে এসেছে। অসুস্থতার কারণে অনেকের ফোন ধরতে পারিনি। আজিজ, আব্দুল্লাহ ও তার স্ত্রী তাজমীন,আমার ছোট বোন রুনার বান্ধবী ওমেরাখাইন প্রতিদিন রান্না করে খাওয়ার পাঠাতো।ইঞ্জিনিয়ার রুবেল, নয়ন ভাই, ইঞ্জিনিয়ার রানার কথা মনে থাকবে।ইমরান ও তার স্ত্রী রিনার ভালবাসা ভুলার নয়। তাসনিয়া দেখতে এসেছে। ইঞ্জিনিয়ার জসিম ও এসেছে। এসব কেমনে ভুলি!

হাফেজ মাওলানা আব্দুল হক, মাওলানা আব্দুল্লাহ সহ সকল উলামায়ে কেরাম, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি,

আত্মীয়-স্বজন দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণ – যারা আমার জন্য পবিত্র কোরআন খতম ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছেন তাদের সকলের প্রতি আমার সম্মান রইল।
এমপি জাফর আলম, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জননেতা এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী,ইউ এন ও, ওসি, পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম, অ্যাডভোকেট একরামুল হুদা, এডভোকেট মইনুদ্দিন, এডভোকেট জিয়াসহ যারা ফোনে খোঁজখবর নিয়েছেন তাদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। ইশতিয়াক আহমদ জয়, আব্দুর রহমান, ওসমান সরওয়ার, মুন্না, ছোটন,রনি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। জেলা প্রশাসক মহোদয় প্রতিদিন খবর নিয়েছেন যা খুবই প্রশংসনীয়। বড় ভাই আব্দুল মোমেন চৌধুরী, হারুন চৌধুরী, ফরিদ চৌধুরী, বাদল চৌধুরী, নিয়মিত খবরা খবর নিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা প্রতিদিন আমার জন্য দোয়া চেয়েছেন তাদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।

কাছের জনদের বলেছিলাম আমার দাফন হবে জোয়ারিয়ানালায়। জানাজা পড়াবে হাফেজ মাওলানা আব্দুল হক অথবা মাওলানা আব্দুল্লাহ সাহেব। হিন্দু-বৌদ্ধ রা আমাকে দেখার যেন সময় পায়। জানাযার মাঠে শুধু যারা আমার দুঃসময়ে পাশে ছিল তারা কিছু বলবে। যারা আমাকে অপমান করেছে, জীবনে দীর্ঘদিন কষ্ট দিয়েছে, এমনকি আমার ভালো কাজের সমালোচনা করে আমাকে যন্ত্রনা দিয়েছে তারা যাতে জানাজার মাঠে কিছু না বলে। অথবা বিরত থাকে -এই আমার কামনা।

জীবনে আমি শুধু কষ্ট পেয়েছি। আমার কষ্টের কাছে সুখের মাএা ধূলিকণার মত। পরিবারের কষ্ট, বড় মানুষের কষ্ট, বড় নেতাদের কষ্ট সইতে সইতে আমি অঙ্গার হয়ে গেছি। গরিব মানুষেরা বার বার আমাকে সংসদ সদস্য বানিয়েছে। তারাই আমার মনোবল। তারাই আমার সুখ। পরিবার ছেলেমেয়েদের জন্য কোন ব্যাংক ব্যালেন্স রাখিনি। সবকিছু গরিব মানুষকে দিয়েছি।

আমি মানুষকে খাওয়াতে পছন্দ করি। সব সময় মানুষের সাথে খাই। একা কখনও খেতে পারিনা। বছরে অনেকগুলো বড় বড় মেজবানের আয়োজন করি। তবে আমার মৃত্যুর পর যাতে কোনো ধরনের মেজবানের আয়োজন করা না হয়। কারন আমার যা আয় তা ব্যয়।

তবে আমি গরিব নই।জননেত্রী শেখ হাসিনার সম্মান বাঁচাতে, আমাদের সম্মান রক্ষার্থে, ও গরিব মানুষের বিপদে সহযোগিতা দিতে, এবং দান করতে, আল্লাহ আমাকে যে শক্তি দেয়, সে শক্তি আল্লাহ কাউকে দেয়না।আমার দানের অন্তর মহান আল্লাহ মহাসাগরের মত বিশাল করেছে।

আমি ইচ্ছেকৃত কাউকে কষ্ট দিই নাই। অন্যের সম্পদ ধরি নাই। হারাম থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেছি। অনিচ্ছাকৃত ভুল বা অপরাধ দয়াবান আল্লাহ অবশ্যই মাফ করবেন। যদি ইচ্ছেকৃত অপরাধ করে থাকি তবে আল্লাহর কাছে আমার শাস্তি পাওয়া উচিত।

আজকাল জানাযার মাঠে মাফ চাওয়ার রেওয়াজ হয়ে গেছে। খারাপ মানুষ, ভূমিদস্যু, বেইমান, নাফরমান, মুনাফেক, মিথ্যাবাদীরা বিশ্বাস করে জানাযার মাঠে মুসল্লীরা মাফ করলে আল্লাহ তা’আলাও মাফ করে দেন।এ সুযোগে পাপ ও পাপীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে।কি অদ্ভুত বিধান! মাফ চাওয়ার বিধান পৃথিবীর কোথাও নাই। এমনকি পবিত্র কাবা শরীফেও নাই। তাই পাপ ও পাপীর সংখ্যা কমাতে এসব বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।

আমি কর্মফলে বিশ্বাসী।ভালো কাজ করলে আল্লাহ পুরস্কার দিবেন,খারাপ কাজ করলে শাস্তি দিবেন।আজীবন মানুষকে সেবা ও সম্মান দেওয়ার পিছনে ছুটেছি।মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না।কারণ আমার কাছে মৃত্যুর চেয়ে সম্মান বড়।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.