এস.এম.পিন্টু
১২ মাসে ৫০ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে প্রয়োজনীয় লোকবল ও সরঞ্জাম সংকটে খুড়িয়ে চলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর (ডিএনসি) চট্টগ্রাম মেট্রো,জেলা ও গোয়েন্দা শাখা। নিজেদের পর্যাপ্ত গাড়ি ও লোকবল, অস্ত্র ছাড়াই খালি হাতে যুদ্ধ করে অর্জন করা এই সাফল্য নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ যেন ঘুমিয়ে পরা দপ্তরে প্রাণ সঞ্চারের সামিল। নানা সমস্যায় জর্জড়িত থাকার পরেও গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে ৪৯৭৭ টি অভিযান চালিয়েছে এই তিনটি শাখা। দৈনিক গড়ে প্রায় ১৪ টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানে প্রায় ৫০ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য আটক করতে সক্ষম হয়েছে তারা। একই সাথে মাদকদ্রব্য পরিবহন ও ক্রয় বিক্রয়ের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে ১২০১ টি মামলায় ১২৫৯ জনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাদক উদ্ধার ও আসামী আটক করেছে মেট্রো উপ-অঞ্চল। তবে আটককৃত বেশিরভাগই কেরিংম্যান হিসেবে কাজ করে বলে সুত্রে জানা গেছে। প্রয়োজনীয় আধুনিক সরঞ্জামের অভাবে মুল মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছেনা বলে দাবী করছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অফিস সুত্রে জানা যায় গত ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা ৫০ কোটি টাকার মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ৪৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা মুল্যের ৯ লাখ ৭২ হাজার ৪ শ পিস ইয়াবা, ৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা মুল্যের ৯৯৬ বোতল চোলাই মদ, ৪০ লাখ ৪ হাজার টাকা মুল্যের ৮০.০৯৫ কেজি গাঁজা, ৮১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা মুল্যের ৪০৭২ বোতল ফেন্সিডিল। এছাড়াও মাদক পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ২ লাখ টাকা মুল্যের একটি এফজেড মোটর সাইকেল ও ১০ লাখ টাকা মুল্যের একটি প্রাইভেট কার আটক করা হয়েছে।
এর মধ্যে মাদকদ্রব্য মেট্রো উপ-অঞ্চলই ৩৫৩৮ টি অভিযান পরিচালনা করেছে যা গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ২৯৫ টি। ৮৭২ টি মামলায় আটক করেছে ৯০৩ জন আসামীকে। উদ্ধার করেছে ৬ লাখ ১৭ হাজার ৫৪৩ পিস ইয়াবা, ৮৮ লিটার চোলাই মদ, ৭১ কেজি গাঁজা, ৩৭৭ বোতল ফেন্সিডিল, ১টি মোটর সাইকেল ও ১ টি প্রাইভেট কার। টাকার অংকে যার পরিমান দাঁড়ায় ৩১ কোটি ৪২ লাখ ৯১ হাজার টাকা।
২য় অবস্থানে আছে জেলা শাখা, তারা ১২ মাসে অভিযান চালিয়েছে ১০৮১ টি এসময় ২২৯ টি মামলায় ২৪৯ জন আসামী আটক করেছে । উদ্ধার করেছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৮৭ পিস ইয়াবা, ৯০৮ লিটার চোলাই মদ, ৮ কেজি গাঁজা, ৩০ বোতল ফেন্সিডিল ও নগদ ৫৪ হাজার টাকা মোট টাকার পরিমান ৯ কোটি ৬৮ লাখ ৪৩ হাজার ৫ শ টাকা।
গোয়েন্দা শাখা একই সময়ে ৩৫৮ অভিযান চালিয়ে ১০০ টি মামলার মাধ্যমে ১০৭ জন আসামী আটক করতে সক্ষম হয়েছে। একই সাথে তারা ১ লাখ ৬১ হাজার ১৭০ পিস ইয়াবা, ৮২০ গ্রাম গাঁজা, ১ টি মোবাইল ফোন ও নগদ ১৮ হাজার ৪০ টাকা উদ্ধার করেছে।
তবে ২০১৯ এর তুলনায় ইয়াবা প্রায় ৩ গুন বেশি আটক করা হলেও অন্যান্য মাদক উদ্ধার কম হয়েছে এবং বৈশ্বিক মহামারি করোনার ফলে অভিযান ও আসামী আটকের পরিমানও কম।
এব্যপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো উপ-অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন মাদকের ব্যপারে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতিতে আমরা আন্তরিকতার সহিত কাজ করছি। করোনাকালীন সময়েও আমাদের টিম অত্যন্ত সাহসিকতার সহিত দায়িত্ব পালন করেছে। আমাদের দেশে মাদকের উৎপাদন নেই বেশিরভাগ মাদকই দেশের বাইরে থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তাই মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে প্রয়োজনীয় আধুনিক সরঞ্জামসহ লোকবল নিয়োগ করা এবং বর্ডারের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় লোকবল ও আধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে ঢেলে সাজানো হলে আমরাই বর্ডারসহ সারাদেশ মাদকমুক্ত করতে সক্ষম হবো বলে আশা করছি। মাদক নির্মুলে প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে তিনি বলেন আধুনিক সরঞ্জাম ,অস্ত্র ও গাড়ি অতি জরুরি। আমাদের জনবল সংকটতো রয়েছেই কোন অস্ত্রও নেই খালি হাতেই মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের সাথে নিয়মিত যুদ্ধ করতে হয়। তবে খুশির খবর হচ্ছে মোবাইল ট্র্যাকিং এর ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধিন আছে খুব শিঘ্রই আমরা কিছু সরঞ্জাম ও লোকবল পাব বলে আশা করছি তখন ক্যারিংম্যান এর সাথে সাথে মুল ব্যবসায়ীদেরও আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।