যে অভিযোগে বরখাস্ত হলেন গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর

ভুয়া টেন্ডার, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, জমি দখল, হাট-বাজার ইজারা ও বিভিন্ন প্রকল্পের নামে সরকারের অর্থ আত্মসাৎসহ জনগণের স্বার্থ পরিপন্থি কাজ করার অভিযোগে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম কে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর আগে, বিকেলেই সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছিলেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ করার পাশাপাশি বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে এবং একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

হাট-বাজার ইজারার অর্থ নির্ধারিত খাতে জমা না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ভূমি দখল ও ক্ষতিপূরণ ছাড়াই রাস্তা প্রশস্ত করার অভিযোগের বিষয়ে সিটি করপোরেশনের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি জবাব দেননি।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো ক্ষমতার অপব্যবহার, বিধিনিষেধ পরিপন্থি কার্যক্রম, দুর্নীতি ও ইচ্ছাকৃত অপশাসনের সামিল। এসব অভিযোগ সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯ এর ধারা ১(১) ঘ অনুযায়ী অপসারণযোগ্য অপরাধ।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বলছে, এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ফলে তার অপসারণের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। তাই সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯ এর- ১২(১) ধারা অনুযায়ী সুষ্ঠু তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত ক

এর ফলে, আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীরকে মেয়রের প্যানেলের জ্যেষ্ঠ সদস্যের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে— বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।

এদিকে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠনের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও মেয়রের কোনো প্যানেল গঠন করা হয়নি। এবারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সেই মেয়রের প্যানেলও গঠন করে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

যে তিন জন কাউন্সিলর মেয়র প্যানেলে মনোনয়ন পেয়েছেন তারা হলেন— ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরন, ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আব্দুল আলীম মোল্লা এবং ১০ নম্বর সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোসা. আয়েশা আক্তার।

এর আগে, বিকেলে সচিবালয়ে নিজ দফতরে ব্রিফিংয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম মেয়র জাহাঙ্গীরকে সাময়িক বরখাস্তের তথ্য জানান। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার সঙ্গে মেয়রের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তের কোনো সম্পর্ক নেই।

মন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ দিন ধরেই তার (জাহাঙ্গীর) বিরুদ্ধে জনস্বার্থবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল। ক্ষমতার অপব্যবহার করে মানুষের জমি দখল, সরকারের অর্থ আত্মসাতের মতো বিষয়গুলো সামনে আসায় স্থানীয় সরকার বিভাগ আইন অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকারের আওতায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে সরকার ও জনগণবিরোধী অভিযোগ তার সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

এর আগে অবশ্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য রাখার অভিযোগ ওঠে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে তুমুল সমালোচনা হলে দল থেকে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সেই নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় গত ১৯ নভেম্বর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক থেকে জাহাঙ্গীরকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দলের সদস্যপদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.