আশার আলো দেখছে না চাঁদপুরের ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র

বহুল কাঙ্ক্ষিত চাঁদপুরের ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গেলো ১ বছরেও কোনোভাবেই আশার আলো দেখছে না। কর্তৃপক্ষের কতিপয়ের গাফিলতির ফলে অকেজো হয়ে পড়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশও। যদিও জানুয়ারিতে এটি পুনরায় চালু হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানালেন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (তত্ত্বা: প্রকৌশলী) মোহাম্মদ নুরুল আবছার।

বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে সরজমিনে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গিয়ে এটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এক তথ্য মতে, চাঁদপুর জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৮৫ মেগাওয়াট হলেও সরবরাহ হচ্ছে শুধু মাত্র ১৪৫ মেগাওয়াট। এরমধ্যে চাঁদপুর শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ এবং শহরের বাহিরে অর্থাৎ গ্রাম ও উপজেলাগুলোর দিকে বিদ্যুৎ সরবার করে চাঁদপুর পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি ১ ও ২।

এসবের মধ্যে চাঁদপুর গ্রিডে চাহিদা ৮০ মেগাওয়াট এবং পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-১ এ নব্বই মেগাওয়াট এবং পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-২ এ চুয়ান্ন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। তবে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সংকট থাকায় চাঁদপুরে চাহিদার তুলনায় মাত্র ৫০% বিদ্যুৎ পাচ্ছে গ্রাহকরা। যার কারণে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং হচ্ছে।

জানা যায়, ১ হাজার ২শ’ কোটি টাকা ব্যয় ধরে ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। যা নির্মাণ করে চায়না চেংদা ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর পর ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমদিকে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা থাকলেও গ্যাসনির্ভর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নিয়মিতভাবে ১৬০ থেকে ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাচ্ছিলো। কিন্তু দিন দিন গ্যাসসহ বড় বড় যন্ত্রপাতি ও মেশিন অকেজো হয়ে যাওয়ার কারণে ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর হতে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যদিও ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালুর কথা ছিল তবে এলসি সংক্রান্ত জটিলতায় তা একবছরেও চালু করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (তত্ত্বা: প্রকৌশলী) মোহাম্মদ নূরুল আবছার বলেন, মূলত ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য বন্ধ হয় এখানের দুটি ইউনিট। একটি ৫০ এবং আরেকটি ১০০ মেগাওয়াট। ১০০ মেগাওয়াটের ইউনিটটি সংস্কার ও রক্ষাণাবেক্ষনের পরে ৭ ফেব্রুয়ারি চালু করার জন্য উদ্যোগ নেই। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে এটির গ্যাস বুস্টারটি চালু না হওয়ায় আমরা আর চালু করতে পারিনি। সে গ্যাস বুষ্টারটি আমরা দেশীয় লোকবল এবং দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষা করে চালু করার চেষ্টা করি। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা যায় এটি ভিতরগত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মোহাম্মদ নূরুল আবছার আরও বলেন, আমরা সমস্যা সমাধান করার জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া গ্রহণ সম্পন্ন করি। আমাদের প্ল্যান ছিল গ্যাস বুষ্টারটি সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করে নভেম্বরের ১৫ তারিখ এটি চালু করবো। কিন্তু এলসি সংক্রান্ত জটিলতায় আমরা পিছিয়ে যাই। ব্যাংকের আর্থিক যে কার্যক্রম সেগুলো একটু বেশি সময় লাগায় আমাদের প্ল্যানমতো এগোতে পারিনি। তবে বর্তমানে আমাদের এলসি সংক্রান্ত কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে। আমরা আশাকরি ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল স্টোরে এসে পৌঁছাবে। এরপর ৩ সপ্তাহ অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে ২য় সপ্তাহের মধ্যেই গ্যাস বুষ্টারের কাজ শেষ করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করতে পারবো।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.