পাহাড়ের বাঁকে আম্প্রপালির ঘ্রাণ!

দীঘিনালা প্রতিনিধি

পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে আম্রপালির ঘ্রাণ। থোকা থোকো মকুল। শুধু কি আম্রপালি? না, পাহাড়ের বাগানে ঝুলে আছে নানান জাতের আম। আর ক’দিন পরই এসব আম ছড়িয়ে পড়বে বাজারে। সুস্বাদু-মিষ্টি আমে ভরপুর হয়ে খাবারের আয়োজন।

রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জকে আমের রাজধানী বলা হলেও আম্রপালি আমের রাজ্য হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা। খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলার সুমিষ্ট আম্রপালির পরিচিতি এখন দেশজুড়ে।
গত কয়েক বছরে এ জনপদে বাণিজ্যিকভাবে বেড়েছে সুমিষ্ট আম্রপালির চাষ। সমতলের জেলাগুলোতে আম্রপালির ব্যাপক চাহিদার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আম্রপালি খাগড়াছড়ি ছাড়িয়ে সমতলের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করা থাকে।

খাগড়াছড়ির আম ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে চলতি সপ্তাহে বাজারে আসছে সুমিষ্ট আম্রপালি আম। এমনটাই জানিয়েয়েছেন বাগানচাষিরা। তাদের মতে পরিপক্ক আম বাজারে আনার লক্ষ্যকে সামনে রেখেই কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে পাহাড়ের সুমিষ্ট আম্রপালি কিনতে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা পাইকাররা খাগড়াছড়িতে এসেছে বলেও জানান বাগান মালিকরা।

স্থানীয় বাজারে ভালো মানের আম কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকায়, দ্বিতীয় ক্যাটাগরির আম ৭০ থেকে ৮০ টাকায় এবং শেষ দিকে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করা হয় বলে জানিয়েছেন আম চাষিরা।

গত কয়েক বছরে ফল বিপর্যয়ের মুখে পড়া আম্রপালির এ বছর বাম্পার ফলনের কথা জানিয়েছেন আম চাষিরা। তাদের মতে বিগত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় দুই গুণ বেশি আম উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন। আবহাওয়া অনকূলে থাকায় আম্রপালির হাসিতে হাসবেন খাগড়াছড়ির আম চাষিরা।

বাণিজ্যিকভাবে আম চাষে সাফল্য পাওয়া খাগড়াছড়ির চাষি তন্ময় চাকমা জানান, তিনি জেলা সদরের তেতুলতলা এলাকায় প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে আম্রপালির চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি বছর তার বাগানে ৭০ থেকে ৮০ মেট্রিক টন আম পাওয়া যাবে বলেও মনে করছেন তিনি।

অন্যদিকে দীঘিনালায় ব্যাপক ফলনের আশায় আম্রপালির চাষ করেছেন চাঁন মিয়া। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর দিগুণ ফল হয়েছে। এ বছর কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে আম্রপালি । তার মতে আম্রপালি আম সুস্বাদু হওয়ায় ঢাকাসহ সারাদেশে এ আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওঙ্কার বিশ্বাস বলেন, ‘দীঘিনালায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে ফলের চাষ হয়৷ তারমধ্যে ১৫শত হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির আম চাষ হয়। আম্রপালির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির বার মাসি জাতের আম চাষে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করছি। তারমধ্যল কাটামিঠা, রাংগুই, বারি-৪, গৌরমতি, কাটি-১১, কাটিমন অন্যতম।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মত্তুর্জ আলী বলেন, আম্রপালি’ খেতে খুবই সুস্বাদু। এটা অন্যরকম মিষ্টিজাতের আম। এটি ইন্ডিয়ান একটি জাত। আমাদের দেশে এই আমটিকে আমরা মডিফাই (উন্নতকরণ) করে ‘আম্রপালি’ নাম দিয়েছি। এটি বারি আম-৩। এই আম সাইজে ছোট এবং আঁশবিহীন বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিচার্জ ইস্টটিটিউট কর্তৃক উদ্ভোবিত জনপ্রিয় জাতের ভ্যারাইটি। পাহাড়ে এ জাতের পাশাপাশি ১২ মাসি জাতের আম চাষ করতে আমরা চাষীদের নানা প্রশিক্ষণ সহ চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.